আলাপে-সংলাপে হৃদকথন by রণজিৎ বিশ্বাস

 আপনি কেমন আছেন?
: আমি কেমন আছি বললে আপনি খুশি হবেন?
: এটি কি কোনো জবাব হল?
: কেন, জবাব হবে না কেন?
: জবাব হবে কীভাবে?! আপনি তো আপনার বিরক্তিকর বিটকেলে ধারায় ফিরে গেলেন!
: আমার বিরক্তিকর বিটকেলে ধারা কোনটি?
: জবাব না দিয়ে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করা।
: প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন আমি সবাইকে করি না। আপনাকে যে করলাম, তার কারণ আছে। দিলে যদি চোটও পান, কিছু মনে করবেন না। আপনারা, মুক্তিযুদ্ধের দুশমন ও লুকোনো দুশমন, যারা জগতসংসারে কোনো ধরনের নিরপেক্ষতাকে পছন্দ করেন না, যারা ধর্ম নিয়ে বাণিজ্য করেন, যারা খোদার ওপর খোদকারি করেন, ধর্মনিরপেক্ষতাকে যারা ধর্মহীনতা মনে করেন এবং সংক্ষেপে যদি বলি - ব্যবসায়িক কারণে যারা যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী ও মৌলবাদীদের ভয়াবহভাবে সাপোর্টসমর্থন করেন, দৃষ্টিকটূভাবে দু’বাহুর মাঝখানে টানেন, কোলে বসান, কাঁধে চড়ান ও মাথায় চাপান, তাদের একটা সমস্যা আছে। আচরণগত প্রবলেম।
: সেটি আবার কেমন? তার চেহারাছবি কী রকম?
: এই প্রবলেমটা খুব সাংঘাতিক। আপনারা মানুষের ভালো চান না। বিশেষত যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং মানুষ ও মানবতার কথা বলে, তাদের বিনাশ কামনা করেন, ধ্বংস কামনা করেন; তারা কোনোভাবে ভালো আছে জানলে আপনারা খারাপ থাকেন। তাই, আমার বা আমাদের ভালো থাকার সংবাদ আপনাদের দিতে চাই না। বুঝতে ভুল করবেন না। এটি আপনাদের জন্য আমার পর্যাপ্ত সহানুভূতি ও অমেয় কল্যাণকামনার জন্যও হয়ে থাকে। আমি আপনাদের মনে কখনো চোট পৌঁছাতে চাই না। সবদিক থেকে আপনাদের সুস্থ-সুন্দর-স্বাভাবিক-সুস্থির, সুবাসিত ও সুরভিত দেখতে চাই। আমরা ক্রমেক্রমান্বয়ে আবর্জনার ট্রান্সফরমেশান চাই। তাই জিজ্ঞেস করি, আমি কেমন আছি- আপনি শুনতে চান, আমি কেমন আছি শুনলে আপনার ভালো লাগে, আমার ও আমাদের কেমন থাকার খবরে আপনাদের মনে আনন্দ পয়দা হয়, আপনারা উল্লসিত হন। ঠিক কিনা বলুন। খুব তাড়াতাড়ি জবাব দিয়ে আমাকে তুষ্ট করার কিংবা কষ্ট দেয়ার দরকার নেই, আপনি আপনার সকল নিষ্ঠুরতা ও হীনতাদীনতার মাঝে বক্ষে আপনার হস্ত স্থাপন করুন, আত্মার অনুসন্ধান করুন- যার নাম সার্চিং দ্য সৌলস; তারপর ধীরে ধীরে জবাব দিন। একটাই শুধু অনুরোধ, বড় বিনম্র অনুরোধ- নীতি-নৈতিকতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে হলেও নিজেদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ অবস্থানে গিয়ে হলেও সত্য বলবেন, সত্যশ্রয়ী থাকবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, আমি কী বলতে চাইছি; আপনাকে সামনে পেয়ে ও আপনার প্রশ্ন শুনে আমার অন্তরের লিপিস্বরলিপি কোন সুরে কোন গান গাইতে চাইছে আশা করি অনুমান করতে পারছেন।
: বুঝতে পেরেছি। আরও একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি। আপনি আমাদের পছন্দই করেন না। আপনি মানুষই মনে করেন না আমাদের, সবসময় দুশমন দুশমন ভাবেন।
: যথার্থ বলেছেন ও ঠিক ধরেছেন। আমি আপনাদের পছন্দই করি না শুধু নয়, পছন্দ করার জন্য আমি নিজেকে কোনোভাবেই বা কোনো শর্তেই প্রস্তুত করতে পারি না। আপনার পর্যবেক্ষণে আরও একটু এক্সটেনশন থাকতে পারে। আমি, আপনাদের ঘৃণা করি, বড় তীব্রভাবে ঘৃণা করি, কারণ ঘৃণা না করে আমি পারি না। জিজ্ঞেস করবেন না এর কারণ কী।
: করলাম। বলুন, আমাদের জন্য, স্বাধীনতার দুশমন ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী এবং তাদের পালকপোষক-অভিভাবকদের জন্য এমন প্রবল অপছন্দ ও তীব্র ঘৃণার কারণ কী?
: আবার আমার ইচ্ছে করছে, পাল্টা প্রশ্ন করি। জিজ্ঞেস করি- পছন্দ করার মতো ও ঘৃণা না করার মতো আপনাদের চরিত্রে কী আছে?! কিন্তু, সে প্রশ্ন আমি করব না। সবসময় নিগেটিভ হতে ও থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমি যা বলব সরলসিধে ভাষায় পজিটিভলি বলব এবং সরাসরি উত্তর দিয়ে আপনাদের সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করব। আপনাদের প্রতি আমার প্রবল অনুভূতির অর্থাৎ আপনাদের অপছন্দ করার ও ঘৃণার মাঝে বাঁচিয়ে রাখার কারণ দুটো এবং দুটোই খুব সিম্পল কারণ। যেমন, একটি সঞ্চয় আপনাদের আছে, এবং একটি একেবারেই নেই। সহজতম শব্দবিন্যাসে যদি বলি- পছন্দ করার মতো কিছু আপনাদের নেই এবং ঘৃণা করার মতো অনেক বেশিকিছু আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছে, বড় আদরেসোহাগে জড়িয়েপ্যাঁচিয়ে আছে। বিধাতা আপনাদের একটি জিনিস বরাদ্দ দিয়েছেন, আরেকটি দেননি; একেবারেই দেননি। আমরাতো আপনাদের কিছু দিতেও পারি না, কিছু আপনাদের কাছ থেকে কেড়েও নিতে পারি না। শুধু কামনা করতে পারি- ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, মানুষের মতো থাকবেন। মানুষের ঘৃণা ও বমনের মাঝে চিরদিন থাকবেন না। মন ও শরীর দুটোই খারাপ করবে।
রণজিৎ বিশ্বাস : রম্যলেখক ও সংস্কৃতিকর্মী

No comments

Powered by Blogger.