মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গঠনে চীনা ‘রোডম্যাপ’ অনুমোদিত

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি বৃহৎ মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলার ব্যাপারে চীনের ‘রোডম্যাপ’ অনুমোদিত হয়েছে। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (অ্যাপেক) সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার এ ঘোষণা এল। এ ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। খবর এএফপির। সম্মেলন শেষে গৃহীত ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএএইপি) নিয়ে দুই বছরব্যাপী একটি সমীক্ষা চালানো হবে। এফটিএএইপি-ই হচ্ছে চীনের প্রস্তাবিত রোডম্যাপের বিষয়বস্তু। এবারের সম্মেলনে আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারত্বমূলক (টিপিপি) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকে বেশি মনোযোগ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। টিপিপি হচ্ছে ওয়াশিংটন-সমর্থিত মুক্ত বাণিজ্যবিষয়ক একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, যার লক্ষ্য এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কড়াকড়ি শিথিল করা। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১১টি দেশ টিপিপির সদস্য হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনকে এই পরিকল্পনার বাইরে রাখা হয়েছিল। পক্ষান্তরে চীন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএএইপি) গড়ে তোলার পক্ষে। দেশটি ২১ সদস্যের অ্যাপেক সম্মেলন থেকে এফটিএএপির ব্যাপারে একটি প্রতিশ্রুতি আদায়ে জোরালোভাবে কাজ করে। শেষ পর্যন্ত চীনের ওই পরিকল্পনাতেই সায় দিল অ্যাপেক। সম্মেলন শেষে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, অ্যাপেক সদস্যরা একটি রোডম্যাপ অনুমোদন করেছে। এর মাধ্যমে এ জোট এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তুলতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারবে।
এ ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, এই অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ‘আঞ্চলিক অর্থনীতির সনন্বিতকরণ’ ও এফটিএএপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর বিষয়ে অ্যাপেক সদস্যদের আত্মবিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির বিষয়টি সামনে এল। টিপিপি ও মুক্তবাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট অন্য পদক্ষেপগুলোর ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে এফটিএএপি। তবে টিপিপি বাদ দিয়ে এফটিএএপি বাস্তবায়নে চীনের দৃঢ় অবস্থান বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীন-মার্কিন শত্রুতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনের গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, টিপিপি বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাবের লাগাম টেনে ধরার একটা প্রচেষ্টা। আর অ্যাপেক সম্মেলনে অংশ নেওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যাতে লাভবান হয়, সেভাবেই সাজানো হয়েছে টিপিপি। তবে ওয়াশিংটন এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে আসছে। কূটনৈতিক তোড়জোড়: অ্যাপেক অর্থনৈতিক জোট হলেও এবারের দুই দিনের সম্মেলকে ঘিরে কূটনৈতিক ব্যতিব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম দিন এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী চীন ও জাপানের নেতাদের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের পর গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পৃথকভাবে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সঙ্গে। ওবামা ও পুতিনের বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ইরান, সিরিয়া ও ইউক্রেন ইস্যু। পাশাপাশি পুতিন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যাবটের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এ দুজনের বৈঠক উত্তপ্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সে রকম কিছু হয়নি। ইউক্রেনের আকাশসীমায় মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অ্যাবট খোলামেলাভাবেই রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.