নিজামী-কামারুজ্জামানের ফাঁসি স্থগিত করার আহ্বান

জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক বার হিউম্যান রাইটস কমিটি (বিএইচআরসি)। সম্প্রতি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের শাস্তি কার্যকর বিলম্বিত হতে পারে। তার এ বক্তব্যকে সতর্কতার সঙ্গে বিএইচআরসি স্বাগত জানালেও তারা বলেছে এটাই যথেষ্ট নয়। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বার হিউম্যান রাইটস কমিটি একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। এটি বার অব ইংল্যান্ড ও ওয়েলস-এর একটি শাখা। এটি একটি নিরপেক্ষ বার কাউন্সিল। এর চেয়ার এখন কিস্ট্রি ব্রামেলো কিউসি, ভাইস চেয়ার সুধাংশু স্বরূপ। তারা সারা বিশ্বের মানবাধিকার, বিচারক ও আইনজীবীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মতিউর রহমান নিজামী ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অন্য মামলাগুলো নিয়ে এর আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএইচআরসি। অন্য মামলাগুলোর মতো মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ বলে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে আসামি পক্ষের সাক্ষ্যপ্রমাণ দেয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষীদের সংখ্যা খেয়ালখুশি মতো সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের পর্যাপ্ত জেরা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে আসামি পক্ষ দু’জন বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করলেও কোন রকম সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এ বছরের ২৯শে অক্টোবর যথেষ্ট বিলম্ব শেষে মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালত মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। তার পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তিশালী সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন ও আপত্তি সত্ত্বেও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে গত দু’বছর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএইচআরসি। এ বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটির বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রেখে যে ত্রুটিপূর্ণ  প্রক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে তার পূর্ণাঙ্গ ও পক্ষপাতহীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, অভিযুক্তের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই বিদ্বেষী মনোভাব রাখা, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কোন সংজ্ঞা দিতে না পারা এবং চার্জগুলোকে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন না করা, আসামি পক্ষকে প্রস্তুতির জন্য সময় না দেয়া, বিচারকদের পক্ষপাতমূলক আচরণ, বিচারক ও প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে ইমেইল ও অডিও ডিভাইসের মাধ্যমে গোপন যোগাযোগ ইত্যাদি। এতসব ত্রুটি ও তার প্রকৃতির অর্থ হলো পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত করা উচিত। অভিযোগের বিষয়ে উচিত পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা। বিএইচআরসি যে কোন পরিস্থিতিতে সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। বাংলাদেশ যেহেতু আইসিসিপিআর এ স্বাক্ষরকারী দেশ, তাই আইসিসিপিআর এর ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিরপেক্ষ বিচারের সব শর্ত তার পূরণ করা উচিত। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল তার জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমন জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে শুধু সুষ্ঠু বিচারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে।

No comments

Powered by Blogger.