মনহারা সকাল by স্বপ্না রেজা

কলেজের চিকন করিডোরেই প্রথম দেখা। পরিচয় নেই, অথচ খুব পরিচিতের মতো তাকিয়ে থাকা। ভালো লাগার মতো এক অনুভূতি বয়ে গেল সব শরীরজুড়ে। কিছু লজ্জা মেখে গেল তাতেই বিনির। শান বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। যেন সে বহুদিন ধরেই অভ্যস্ত এভাবে দাঁড়াতে। কথা নেই, কয়েক মিনিট ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা। ওদের এমন তন্ময় ভাব আশপাশে বেশ কৌতূহল তৈরি করলেও তোয়াক্কা ছিল না কারোর। মুহূর্তটা চোখের পাতা থেকে সরছে না বিনির। বরং আরও নিবিড় হয়। ঘরে ফিরে খুব জোরে সাউন্ড দিয়ে গানশোনা বিনির প্রতিদিনকার অভ্যাস হলেও আজ সে তা করল না। বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকল। এরকম শুয়ে থাকা বিনির সঙ্গে যায় না। উদাসীনতা তো নয়ই। উৎফুল্ল আর উচ্ছ্বাসে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত বিনি নিজেকে কোনো নিশ্চয়তা, স্থবিরতায় বেঁধে রাখে না, রাখতে পারে না। ওর স্বভাবে নেই বলেই। সহপাঠীরা জানে, বিশ্বাসও করে. বিনি মানেই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস। বিনিকে ঘিরেই তাই তাদের ব্যস্ততা দিনভর। এর জন্য বিনি দায়ী। শত কষ্টেও বিনি মন খারাপ করে না, ওসব ওর সময়সূচিত ও কর্মসূচি কোনোটাতেই নেই। আবার চুপ করে থাকাও নয়। অনবরতর কথা আর তার সঙ্গে হাসি মিশিয়ে চলে বিনি। অন্যকেও চালায়। ফলে বিনির সান্নিধ্যলাভে মরিয়া থাকে কমবেশি সবাই। ছোট-বড় ভেদাভেদ নেই।
কে মানুষটা? এভাবে তাকিয়ে থাকার মানেইবা কী? শুধু কি সেই তাকিয়ে ছিল? বিনিও তো। মনে হল শতজনমের দেখা কেউ। কলেজে আগে কখনও দেখেছে বলে মনে পড়ে না। সহপাঠীও নয়। তাহলে? তবুও খুব চেষ্টা করে বিনি এ যাবত দেখার প্রতি স্তরগুলো আবারও দেখে খুঁজে বের করতে, আগে কখনও দেখেছে কি না কোথাও এ মানুষটিকে। না নেই কোথাও স্মৃতির।
হস্তদন্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করে টিংকু। শৈশবের সম্পর্কের কারণে বিনির ঘরে অবাধ প্রবেশ টিংকুর। আলাদা হয়ে থাকবার কোনো ব্যাকরণ নেই ওদের। নেই প্রয়োজনও। প্রয়োজন এক হয়ে থাকা। সোজাসাপ্টা মেলামেশা। পরিবারের মুরব্বিদের কিঞ্চিত দ্বিধা থাকলেও বিনির কারণে তা শাসনে পৌঁছায়নি। বিনির মা বিষয়টি ভালো চোখে কখনোই দেখেন না। বাবার রয়েছে আকাশ সমান উদারতা। বাবা বিশ্বাস করেন, মেয়েকে বড় করতে হলে বড় জায়গা দিতে হবে। মাকে বলেন, তার মেয়ে স্বচ্ছ। ঝাপসা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওকে বেড়ে উঠতে দাও। আজ বিনির অপ্রস্তুত ছিল। একটু যেন অস্বস্তিবোধ হয় প্রথমবারের মতো। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বিছানা ছাড়ে বিনি।
একটু নক করে ঢুকবি না!
নক করে ঢুকবার মতো তো ছিলি না। থাকিসও না। তোর কি আবার নতুন করে প্রাইভেসি-ট্রাইভেসি হল নাকি রে?
ছিল তো। খেয়াল করবার মতো শুধু তুই ছিলি না। বাদ দে। বল, এভাবে ছুটে আসলি যে?
দাঁড়া দাঁড়া। এই কি হয়েছো তোর বল তো? কখনও তো এত গম্ভীর হয়ে কথা বলিস না! শরীর খারাপ? কথা শেষ না হতেই টিংকু বিনির কপালে হাত দেয়।
শরীরটা কি শুধু কপাল!
না, অন্য কোথাও তো হাত দেয়া যাবে না!
কি বললি? রেগে ওঠে বিনি।
নিজেকে গুটিয়ে নেয় টিংকু। বিব্রত না হয়ে উপায় নেই। ক্ষীণ স্বরে বলে, সরি। দুষ্টুমি করলাম।
ভাগ্যিস বৃটিশদের সৌজন্যবোধটুকু কুড়িয়ে রেখেছিলি। নইলে তোর যে কি হতো, বস। আমি আসছি। বিনি পাশের ঘরে চলে যায়। টিংকুর কাছে বিনির হাঁটাও অন্য রকম লাগে। খানিক পর হাতে চা নিয়ে ফিরে। কলেজ ড্রেস নেই, এখন বিনির পরনে লাল টকটকে ফতুয়া আর জিন্স প্যান্ট। খুব সুন্দর লাগছে বিনিকে। অন্য সময় হলে খুব কাব্যিক আর ঢং করে টিংকু প্রকাশ করত সুন্দর লাগার বিষয়টি। হয়তো বলত, এত্ত এত্ত সুন্দর কেন, বলত তুই? আমার লাগি? আমারে বাসিতে ভালো? আপাতত সেই সাহস এখন আর নেই। টিংকুর দিকে চা বাড়িয়ে দেয় বিনি। অভিমানে মুখ ফসকে বের হয় টিংকুর, আমার যে ইচ্ছে করছে না! অবাক হয় বিনি। দু’চোখ তড়াক করে কপালে ওঠে!
তুই চা খাবি না ! বিশ্বাস করব? সূর্য কোনদিকে উঠেছে! মাঝে মাঝে তোর ঢং যা না!
শরীরের সব শক্তি দিয়ে মাথা ঝাঁকায় টিংকু। বিনি অপলকে বুঝবার চেষ্টা করে টিংকুকে।
কি হয়েছে রে তোর?
প্রশ্ন তো আমারও তোর কাছে! কি হয়েছে তোর? টিংকু গম্ভীর হতে চেষ্টা করে।
কই আমার আবার কি হবে! আমাকে বেশি দেখিস, তাই ভাবিসও বেশি।
তোর কিছু একটা হয়েছে। সাবলীল উত্তর টিংকুর। বিনির চেহারা বদলে যায়। অন্যরকম। টিংকুর অপরিচিত বিনি। খানিক ভেবে হয়তো বুঝার চেষ্টা করে টিংকুর কি হয়েছে। অতঃপর বিনি খোলা জানালা দিয়ে চা ফেলে দেয়। মুখোমুখি দাঁড়ায় টিংকুর।
বল তোর কি কথা। এভাবে ছুটে আসার গল্পটা শুনি।
ভালো ও আনন্দময় পরিবেশে এক কাপ চায়ের দাম তিরিশ টাকার কম নয়। বিনির হাতের চা সেই দামকে ছাড়িয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। এভাবে চা ফেলতে দেয়া ঠিক হল না। এ রকম চা পানের প্রতীক্ষায় কত তরুণ যে মরিয়া হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। যদি বিনি চা পানের আমন্ত্রণ জানায় একবার। তার ওপর অর্থাভাবে এ ধরনের ঘটনা বেমানান। সুবোধ বালকের মতো টিংকু কথা বলার চেষ্টা করে। গলায় আটকে পড়ে কথা। না বের হয়, না ভেতরে উল্টে পড়ে। গলার মাঝামাঝিতে দলা পাকায়। বিদঘুটে অভিজ্ঞতা। কলেজপড়ুয়া ছাত্রের স্মার্টনেস ফ্যাঁকাসে হয়ে যায়।
এভাবে জানতে চাইছিস যে গল্পটা আর মনে করতে পারছি না। টিংকুর আমতা বোল।
কিভাবে জানতে চাইলে মনে পড়বে?
ধ্যাত! ভালো লাগছে না। যাই।
যা। আবার ফিরে আসিস না। বিনির কথায় আহত হয়। অভিমানের ঘোড়ায় চড়ে এক নিঃশ্বাসে বেরিয়ে যায় টিংকু। টিংকুর যাওয়াটা যেন কেমন ছিল। মুহূর্তের মধ্যে থমকে যায় বিনি। নিজের এমন আকস্মিক কঠোর আচরণে নিজেই বিস্মিত হয় বিনি, টিংকু বের হয়ে যাওয়ার পরই এমন অনুভূতির খোঁচা বুকের ভেতর। অনুশোচনা যতটা, তারও অধিক বিস্ময়। বুকটা ভার হয়ে আসে। টিংকু নামের যে পাখটিা বুকের ভেতর বেড়ে উঠেছে, তা যে খাঁচার কানায় কানায় দখলে অবস্থান করেছে তা আগে টের পায়নি বিনি। খাঁচার জালিতে টান পড়ে। বোধ হয়, আরও জায়গার প্রয়োজন পাখির। ঘরের দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়ায় বিনি। নিজেকে অন্যরকম লাগছে। প্রতিদিনকার উচ্ছলতা নেই চোখ, নাক, ঠোঁট কোথাও। সময়ের মাপজমিনে মিনিটের পনের দাগ পরতেই দরজায় টোকা।
হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে টিংকু। বত্রিশ দাঁত বের করা মৃদু হাসি। কণ্ঠ উপচে বের হয় কথা-
তোর কাছে ছুটে আসার গল্পটা বলতে এসেছি।
বল।
তোর সঙ্গে আমার আজ দেখা হয়নি কলেজে বিনি! বুকটা হালকা হয়ে যায় বিনির। ভেতরের টানটার এক স্বতঃস্ফূর্ত আভাস পায়।
কলেজ গেটের সামনে একটা লাল করোলা টয়োটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শান। রিকশা থেকে নামতেই চোখে পড়ে বিনির। সিগারেট ফুঁকছে শান। ঝকঝকে আর পরিপাটি বেশবাস। বিনি আর শানের চোখাচোখি হয়। সিগারেট ছুড়ে ফেলে দ্রুত বিনির সামনে এসে দাঁড়ায় শান। আজ আর নীরবে তাকিয়ে থাকা নয়। চাপা হাসিতে কুশল বিনিময়ের চেষ্টা শানের।
কেমন আছো?
‘তুমি’ সম্বোধন কানে ধরে বিনির। কোনোভাবেই পরিচিত নয়, মনে করতে পারছে না এমন কেউ আচমকা ‘তুমি’র ঘরে দৌড়ঝাঁপ করবে, পছন্দ নয় বিনির। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, আজ বিনি খারাপ লাগাটা প্রকাশ করতে পারল না। হয়তো করল না। করতে পারেনি তার ভেতর বসবাসরত অন্য এক বিনির কারণে। কখনও সখনও জীবনাচরণকে রহস্য নামক এক আগন্তুক অজান্তে কব্জা করে বসে। মানুষ নিরূপায় হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অবচেতনে রয়ে যাওয়া চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্বের যে খেলা চলে মানুষের ভেতর, তা অনেক নিরূপায়ের কারণ।
আমি কি আপনার পূর্ব পরিচিত? আপনার প্রশ্নে তেমন একটা দাবি আছে বোধহয়! বিনির জানতে চাওয়া বা অবাক হওয়ায় মোটেও বিব্রত নয় শান। বরং আরও বেশি প্রাণ জাগায়।
পরিচয় কিভাবে হয় মানুষের, নামধাম জেনে আর আয়োজন, আনুষ্ঠানিকতায়? এসব তো গতানুগতিক। অন্য কায়দার ইঙ্গিত শানের কথায়।
যেমন? বিনির কৌতূহল।
তোমাকে আমি হঠাৎ দেখায় চিনেছি। মানে পরিচিত হয়েছি। হঠাৎ করে ভালো লাগা। তারপর ভালোবাসা বলতে পার। হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপারে বছর বছর সময় লাগে না। কয়েক সেকেন্ডই হয়ে যেত পারে অনন্তপ্রেম। ভাঙতেও কয়েক সেকেন্ড। বিশ্বাস করো তো?
আপনি কি করে ভেবে নিলেন যে, আপনার এমন কথায় আমি আমার ভালোবাসার কথা বলব!
সে কথা কি বলেছি একবারও? তবে তুমি বলনি, তোমার চোখ বলেছে।
খুব বেশি দাবি হয়ে যাচ্ছে না? আমাকে বুঝবার দাবির সুযোগ কিন্তু আমি আাপনাকে দেইনি।
আমি যেমন নিজ থেকেই বুঝেছি, তেমনি নিজ থেকেই দাবি করছি। কেউ তো আমাকে বুঝায়নি, শেখায়ওনি! তোমাকেও কেউ বুঝাতে পারে না, সেও আমার বিশ্বাস। তুমি ক্লাসে যাও। আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্য।
অপেক্ষার বাণী নিয়ে ক্লাস করা কঠিন।
করোলা ছুটছে। টায়ারের চার চাকায় ভর করে ছুটে যাওয়া। ছুটতে ছুটতে নিকটবর্তী হওয়া। বিনি আর শান কাছাকাছি। তারপর এক সময় অদূরবর্তী। কখনও মেঘ, কখনও রোদ, কখনওবা বৃষ্টির মতো রয়ে যাওয়া। বহুমাত্রিক ছন্দময় জীবন মানুষের। জীবন বাহকদের পূর্বধারণার সুযোগ থাকে না কোনো কোনো ক্ষেত্রে। প্রকৃতির গ্রাসের উল্লাস সেখানেই। বিনি আর শান ফিরল। ততক্ষণে সূর্য ডুবে গেছে স্বচ্ছভাবে দেখবার সুযোগটুকু সঙ্গে করে।
বাসায় প্রবেশ নিঃশব্দে এই প্রথম। মায়ের প্রশ্নমিশ্র গভীর দৃষ্টি। বাবার উদ্বিগ্ন চাহনি। ওসবে নিজের ছায়া পড়তে না দিয়ে নিজের জায়গায় পৌঁছাতে চায় বিনি। পারে না। পা চলছে না। শেকল দিয়ে কে যেন বেঁধে রেখেছে দুটি পা। এত অনিয়ন্ত্রিত দুরাবস্থা নিজের ভেতর আর কখনওই অনুভব করেনি বিনি। জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে সম্ভবত। যে বৈশিষ্ট্য জীবনকে পরিচালিত করে তার মতো করে। ঘটনা না ঘটার আগ পর্যন্ত তা অনুভব করা যায় না। খেয়াল করে বিনি টিংকু ড্রইংরুমে বসে। বসার কায়দায় বেশ ভীত হওয়ার আভাস। দৃষ্টিতে জল টসটস। সংশয়ের ডিঙ্গি নৌকা সেখানে পাল তুলে ভাসছে। বিনি ছোঁ মেরে টিংকুকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। বিনি খেয়াল করে নিজের শ্বাস খুব দ্রুত ওঠানামা করছে।
কি সমস্যা তোর! আমিতো যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক, না? আমার ভালোমন্দ তো আমি বুঝি, না? আমি তো নিজেকে তোর চেয়েও বেশি ভালোবাসি, না? প্রমাণ করতে চাস, তুই আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসিস? কথার উত্তর দে!
কোনো মানুষই নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি ভালোবাসে না। বেশি ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসতে পারাটাই স্বার্থপরতা। নিজেকে ভালোবাসে বলেই অন্যকে ভালোবেসে নিজের প্রতি অন্যের ভালোবাসা বাড়াতে বা পেতে মরিয়া হয়। মানুষ ভালোবাসে ভালোবাসা পাওয়ার আশায়। তুই তোকে বেশি ভালোবাসিস এখানে কোনো আপস থাকে না। ছাড় থাকে না। তোর কি হয়েছে বিনি? এমন করছিস কেন! আর আমি তো তোর কাছে কোনো প্রশ্ন রাখিনি বিনি! প্রশ্ন করবার মতো কোনো প্রশ্ন যে নেই আমার কাছে! টিংকুর গলা হাঁটুজলে ডোবা। কথাগুলো ভেজা কাকের মতো সম্পর্কের তারে গিয়ে বসে। শুকাবার সুযোগ নেই।
ওহ্! আমি ভেবেছিলাম তোর মনে হাজারও প্রশ্ন! এ অসময়ে তুই কেন এসেছিস, এই একটা উত্তর নিশ্চয়ই তোর কাছে আছে?
অনেক প্রশ্নের উত্তর হয় না। আবার একটি উত্তর, অনেক প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। ভেবে নে তোকে দেখতে ছুটে এসেছি।
সকাল হতে দেরি হয় বিনির। বাবার ডাকে ঘুম ভাঙে। ঘুম নয়, অবসাদে ঝিম থেকেছে পুরোটা রাত। সব এলোমেলো। মেলাতে পারে না নিজেকে নিজের সঙ্গে।
কি হয়েছে বিনি! প্রশ্ন নয়, অবাক হয়েছে বাবা। বাবা আর টিংকুর মাঝে অমিল নেই। এতটা ভালোবাসা কেন বুকে বেঁধে রাখে তারা, যে কষ্টে বেঁধে রাখা ভালোবাসার বাঁধন আলগা হয় না। কষ্ট গভীর হয়, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসা।
আমার কিছুই হয়নি বাবা এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তোমাকে আশ্বস্ত করব না। জানি না আমাকে তুমি আর স্বচ্ছভাবে দেখতে পাবে কিনা। চাইবে কিনা দেখতে। বাবা! আমি তোমার সেই বিনি আর নেই! কেন যে এমন হল বাবা! ওর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমার মনে হল, ওকে আমি চেয়েছি। ওকে দেখার আগ পর্যন্ত যা আমি জানতাম না! মানুষের ভেতর যে আরেক মানুষ বসবাস করে বাবা! আমার ভেতর আরেক আমিকে দেখলাম বাবা!
কে সে? শান্ত গলায় জানতে চায় বাবা। বাবার বুকে মাথা রাখে বিনি। বাবার বুকের ধুক ধুক শব্দটুকু শোনা যায়।
একদিনের পরিচয়। এর বেশি কিছু জানতে পারিনি। তুমি কি আর আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারবে, বাবা?
জানালাটা খুলে দাও। ঘরে রোদ ঢুকুক। বাবার নীরব প্রস্থান।
শানকে বেশ ক’বার ফোন দেয় বিনি। এক সপ্তাহ ধরে নো এনসার। অস্থিরতার দুয়ার খুলে দেখে, শানের দেয়া ঠিকানায় মরচে ধরা তালা ঝোলা। শান নামক অনুভূতিটা ভেতরে রয়ে গেলেও বিনি ভোলার চেষ্টা করে ব্যস্ততম শহরে একাকী ঘুরে। মলিনতাকে সঙ্গী করে বিনি খুঁজে ফেরে নিজেকে। টিংকুকে দেখতে পাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছাও সেইসঙ্গে। টিংকু ইচ্ছা পূরণে সাড়া দেয়। টিংকু আসে। বসে বিনির পাশে। ক্ষীণস্বর টিংকুর..
তোর কপালে লেপ্টে থাকা টিপটা আমায় একটু ছুঁতে দিবি?
এত দেরি করলি যে টিংকু!

No comments

Powered by Blogger.