আত্মবিশ্বাস থাকলে তিনি পালিয়ে বেড়াতেন না: শেখ হাসিনা

আত্মবিশ্বাস থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াতেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অরফানেজের (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) টাকা যিনি মেরে খান, তিনি কোর্টে হাজিরা না দিয়ে পালিয়ে বেড়ান। আর উনি অন্যকে দুর্নীতিবাজ বলেন। যদি সত্যিকার আত্মবিশ্বাস থাকত, তাহলে মামলা থেকে বাঁচতে পালাত না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যখন মামলা হলো, আমি বিদেশ থেকে ফিরে আসলাম। আমাকে আসতে দেওয়া হবে না বলা হয়েছিল। আমি জোর করে দেশে এসেছি। কারণ, আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আমি অন্যায় করিনি।’ তিনি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি এতিমদের টাকা মেরে খাননি, সেটা কোর্টে প্রমাণ করুন। তাহলে তো একে দোষ ওকে দোষ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। অবশ্যই কথায় বলে চোরের মায়ের বড় গলা। যা হোক আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
সম্প্রতি নেপাল সফরের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত সফল একটি সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে। খুব সুন্দর একটা পরিবেশ ছিল। সেখানে আমরা মতামত দিয়েছি। কারণ, সার্কের সব রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত। নির্বাচিত সরকার, গণতন্ত্রিকরা ক্ষমতায় থাকলে সেখানে কিন্তু পরিবেশটা অত্যন্ত সুন্দর থাকে। আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি। সেখানে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা যেন স্বাবলম্বী হয় সেটা রয়েছে।’ তিনি তাঁর বক্তব্যে নেপালের আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন কি না জানি না। বর্তমানে নেপালের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অন্য অনেক মন্ত্রী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে সহায়তা করেছে। একটা সুন্দর পরিবেশের মাধ্যমে আমরা বিষয়গুলো জানতে পেরেছি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ করেছেন প্রতিটি দেশ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। এ ধারা আমাদের রক্ষা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে সারা বাংলাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়ে গেছে। একটি জিনিস লক্ষ করা যাচ্ছে, ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল শুরু হয়ে গেছে। মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিটি সংগঠনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু করেছে। এসব কাউন্সিলে মানুষ তাদের আশা ও ভরসার স্থল আওয়ামী লীগে আসছে। মানুষ আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। কারণ, আমরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় যা করতে পেরেছি সাউথ এশিয়ার অন্য দেশগুলো তা পারেনি। অনেক উন্নত দেশ তা করতে পারেনি। আমরা তার চেয়ে বেশি করতে পেরেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় এখন ১১৯০ ডলার, প্রায় ১২০০ ডলারে উন্নীত করেছি। দারিদ্র্যের হার কমে গেছে। এবারের পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার ইনশাআল্লাহ ১০ ভাগ কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। কারণ, যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। এককথায় গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এত কার্যক্রম অতীতের কোনো সরকার গ্রহণ করেনি। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ করেছে। গত পাঁচ বছরে আমরা এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমরা মানুষকে ট্রেনিং দিয়ে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে যত বেশি দুর্নীতি করেছে, এমন কী যিনি এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন, চুরি করে খেয়েছেন তাঁদেরই গলার জোর বেশি। মানুষ এতিমের টাকা চুরি করে খাবে কেন? এতিমের টাকা মেরে খেয়ে মামলা খেয়েছে, সে দোষ নাকি আমাদের। আমাদের ওপর সেই ২০০১ সালে ক্ষমতার আসার পর সেই স্পেশাল এজেন্ট দিয়ে তদন্ত করেছে। বিএনপির কথা বাদই দিলাম। এই যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তারা পদ্মা সেতু বন্ধ করে দিল। তারা দুর্নীতি খুঁজতে খুঁজতে হন্যে গেল। কিন্তু পায়নি। আমার ওপর সবচেয়ে বেশি মামলা দিয়ে দিয়েছে বিএনপি গভর্নমেন্ট। তারা প্রায় আট-নয়টা মামলা দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫-১৬টা মিথ্যা মামলা দিয়েছে। প্রত্যেকটা মামলা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারও করেছে। কিন্তু কিছু পায়নি। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া গেল, তিনি আবার দুর্নীতির অভিযোগ করেন।’
পরে আগামী ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আলোচনা সভা, শ্রদ্ধা নিবেদন করার কর্মসূচি গ্রহণ করে।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফর উল্যাহ, সাহারা খাতুন, সতীশ চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ নাসিম, নূহ-উল আলম লেনিনসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.