ফার্গুসনে কৃষ্ণাঙ্গদের ইয়েস স্যার-নো স্যার জীবন

কৃষ্ণাঙ্গ সিয়েন জ্যাকসন যখন সন্তানের বাবা হলেন, প্রথমেই তার মাথায় এল ছেলেকে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাত থেকে বাঁচার উপায় শিখিয়ে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার এএফপির এক প্রতিবেদককে জ্যাকসন বলেন, জীবনে বহুবার তিনি শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন। গ্রেফতার বা গুলি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাত দুটো ওপরে তুলে ?অবস্থা বুঝে ‘ইয়েস স্যার’ ‘নো স্যার’ করতে হবে। অন্যায় হচ্ছে বুঝলেও বাৎচিত করা যাবে না। জ্যাকসনের মতোই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিদিন ঘর থেকে বের হতে হয় ফার্গুসনের কৃষ্ণাঙ্গদের। শুধু ফার্গুসন নয়, গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই কৃষ্ণাঙ্গ জীবনের এই একই প্রতিচ্ছবি। আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময় যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমরাই পারি’, তা এখনও যেন পৌরাণিক গল্প। ৯ আগস্ট নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। কিন্তু পুলিশের বর্বরতা গুলি খাওয়াই যেন ফার্গুসনের কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়তি।
?জ্যাকসনের ভাষায়, ‘এখানে এমন এক পরিস্থিতি, যা কোনো শ্বেতাঙ্গর পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় না। ফার্গুসনের প্রতিটি কৃষ্ণাঙ্গ ড্রাইভারকে আতংকে থাকতে হয়। যে কোনো সময় পুলিশ তাকে থামিয়ে তুলে নিয়ে যেতে পারে।’ সেন্ট লুইস নামের আরেকজন জানালেন, সারাক্ষণই হয়রানি আর গুলির আশংকায় থাকতে হয়। আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিতে হয়, যাতে তাদের অকালে মরতে না হয়। ব্রাউন নিহত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় ব্যাপক প্রতিবাদ করে আসছে এই ঘটনার। মঙ্গলবার গ্রান্ড জুরি অভিযুক্ত শ্বেতাঙ্গ পুলিশ দারেন উইলসনকে দায়মুক্তি দিলে শহরজুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়। মার্কিন বিচার বিভাগের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৯১টি গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে, যাদের প্রায় সবাই পুরুষ এবং তাদের বয়স ২৫-৪৪। ৩২ শতাংশ ঘটনার জন্য কৃষ্ণাঙ্গদের আটক করা হয়েছে। যারা মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৩ শতাংশ। লিবারেল সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের তথ্য মতে, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অন্তত তিন গুণ কৃষ্ণাঙ্গদের ট্রাফিক চেকআপে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত প্রতি তিনজন মার্কিনির একজন কারাগারে দিন কাটিয়েছে। হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের কৃষ্ণাঙ্গদের আটক হওয়ার ঘটনা বেশি। অথচ শ্বেতাঙ্গদের এ অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।

No comments

Powered by Blogger.