সাংসদ আমানুরকে পুলিশ খুঁজছে- পৌর মেয়রসহ সাংসদের ভাইয়েরা পলাতক by কামনাশীষ শেখর

সাংসদ আমানুর রহমান খান,মেয়র সহিদুর রহমান খান
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহমেদ হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা) ও তাঁর ভাই মেয়র সহিদুর রহমান খানকে (মুক্তি) গ্রেপ্তার করা হতে পারে।  একই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহভাজন তাঁদের অপর দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান (কাঁকন) ও সানিয়াত খান (বাপ্পা) দেশ ছেড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। হত্যাকাণ্ডে চার ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রায় তিন মাস আগেই তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। আমানুর টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাংসদ, সহিদুর টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র, জাহিদুর টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সানিয়াত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।
সাংসদ ও মেয়রকে এখন এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের ধারণা, তাঁরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অর্ধশত মামলা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কাউকেই বিচারের সম্মুখীন করা যায়নি। এদিকে পৌরসভার প্যানেল মেয়র মানবেন্দ্র পাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মেয়র সহিদুর তিন মাসের জন্য অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়েছেন।
ফারুক হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ গত বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় উচ্চপর্যায়ের কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে আমরা টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছি। তাঁদের বাসস্থান ও সম্ভাব্য যেসব জায়গায় তাঁরা থাকতে পারেন, সেখানে নজরদারি চলছে।’
গত বছরের ২১ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাসার কাছ থেকে ফারুকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত আগস্টে আনিসুল ইসলাম (রাজা) ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা সাংসদ আমানুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
গত ২৭ আগস্ট আনিসুল ইসলাম ও ৫ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এই জবানবন্দিতে সাংসদসহ চার ভাইয়ের জড়িত থাকার বিষটি উঠে আসে। জবানবন্দির পরপরই আত্মগোপনে চলে যান জাহিদুর ও সানিয়াত।
১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আমানুর, জাহিদুর ও বাপ্পা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছানোয়ার হোসেনের পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়। আদালত রিটের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এই চারজনকে গ্রেপ্তারে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। তবে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করলে হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করা হয়।
দুই দিন ধরে চেষ্টা করেও সাংসদ আমানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে সোমবার তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বলে হাজিরা খাতা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গতকাল অধিবেশন ছিল না, সংসদেও যাননি। কাল দুপুরের দিকে ৫ নম্বর ন্যাম ভবনের ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটেও তিনি ছিলেন না বলে জানিয়েছেন সেখানকার তত্ত্বাবধায়কেরা। ঢাকায় সাধারণত তিনি এখানেই থাকেন।
সাংসদের এক ঘনিষ্ঠজন জানিয়েছেন, ফারুক হত্যা মামলার গ্রেপ্তারের বিধিনিষেধ-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে সাংসদ আর টাঙ্গাইলে যাননি। এ সময়টা তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করছেন।
গতকাল টাঙ্গাইল পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ফারুক হত্যা মামলার দুই আসামির জবানবন্দিতে সাংসদসহ চার ভাইয়ের নাম এসেছে। এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি চলছে। যেহেতু এখনো অভিযোগপত্র চূড়ান্ত হয়নি, তাই সাংসদকে আটক করে পরে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। সাংসদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
স্পিকারের দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ বিষয়টি সংসদ কার্যালয়কে জানিয়েছে। স্পিকারের দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, ন্যাম ফ্ল্যাটগুলো সংসদ ভবন চত্বরে পড়ে না। তাই স্পিকারের অনুমতিরও প্রয়োজন হয় না।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তিনি কয়েক দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

No comments

Powered by Blogger.