আসামির সঙ্গে ফোনালাপ ফেঁসে গেল দুই পুলিশ by মহিউদ্দীন জুয়েল

কথিত বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল ৩ আসামিকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হোটেলের কক্ষ থেকে সেই বড় ভাইদের ফোন করে পার পায়নি তারা। ফাঁস হয়ে যায় ঘটনাটি। আর সেই ফোনালাপ কেলেঙ্কারির অভিযোগে চট্টগ্রাম পুলিশের দুই সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত দু’দিন এই বিষয়ে তদন্ত শেষে পুলিশ কমিশনার তাদেরকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। এরা হলো  খোরশেদ আলম ও মো. আইয়ুব। দু’জনই পুলিশের কনস্টেবল হয়ে কাজ করছে। অভিযোগ ওঠার পর বুধবার খোরশেদকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গতকাল বরখাস্ত করা হয় আইয়ুবকে। নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) মাসুদ-উল-হাসান মানবজমিনকে বলেন, ঘটনা সত্যি। বিষয়টি পুলিশ কমিশনার জানার পর বেশ ক্ষুব্ধ হন। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসতে শুরু করায় স্যার তদন্ত করার নির্দেশ দেন। শেষমেশ অভিযোগ খতিয়ে দেখে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৩শে  নগরীর জিইসি মোড়ের হোটেল লর্ডস ইন থেকে জঙ্গি সন্দেহে পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের মধ্যে একজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির আওয়ামী লীগ নেতা। গ্রেপ্তারের পরপরই নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান তাদেরকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে জানান।
গ্রেপ্তার হওয়া শফিউল্লাহ (৪০) দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বান্দারবান উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক। এর আগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ শোনা যায়। তার পিতা ছালেহ আহমদ এক সময় মিয়ানমারের বিছিন্নতাবাদী সংগঠন আরএসও’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নাইক্ষ্যংছড়ির প্রভাবশালী এই পরিবারের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও শোনা যায়। এর আগে গত ২১শে নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন পাকিস্তানি নাগরিক আলম। তিনি ব্যবসায়ী পরিচয়ে হোটেল লর্ডস ইনে ওঠেন। হোটেলের কক্ষ বরাদ্দের বই ঘেঁটে দেখা যায়, আলম বিদেশী ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্রথমে ৭০১ নং রুম ভাড়া নেন। পরে রুম পরিবর্তন করে নেন পাশের ৭০২ নং কক্ষটি। শফিউল্লাহ আসেন পরদিন রোববার সকালে। এরপর সবাই চলে যান ৬০২ নং কক্ষে। দুপুরের দিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ টিম ওই হোটেলে হানা দেয়। এই সময় তারা গোপন মিটিং করছিল বলে জানান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাকিস্তানি নাগরিক আলম জানান, তিনি হল্যান্ড ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার (জিআরসি)-এর পরিচালক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কমিশনার যৌথ সেল গঠন করেন। তারা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারেন এই ঘটনায় আরও দুই পুলিশ সদস্য জড়িত। তারা আওয়ামী লীগ নেতাসহ আরও দু’জনকে কয়েকজন রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আবাসিক হোটেলের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশকে। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআরসি)-এ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে জঙ্গি সন্দেহে পাকিস্তানি নাগরিকসহ গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনকে। এর আগে তাদেরকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।
এদের মধ্যে গ্রেপ্তার বান্দারবান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ আলম, আবদুল মজিদ, মো. আমিন, মো. শফিউল্লাহ ও  মো. ছালামত উল্লাহ। মোহাম্মদ আলম পাকিস্তানি নাগরিক বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে শফিউল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার প্রসিকিউশন কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, আদালতে ১৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিচারক সব কিছু শুনে প্রাথমিকভাবে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.