মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানলেন ফিলিপ হিউজ

দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজ। বৃহস্পতিবার সিডনির একটি হাসপাতালে চিকিৎ?সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৬ টেস্ট ও ২৫ ওয়ানডে খেলা এই ক্রিকেটারের বয়স হয়েছিল মাত্র ২৫ বছর ৩৬২ দিন। আগামী ৩০শে নভেম্বর ছিল তার জন্মদিন। ১৯৮৮ সালের ওই দিনে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাকসভিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ২৫শে নভেম্বর মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া লীগ শেফিল্ড শিল্ডে নিউ সাউথ ওয়েলসের বোলার শন অ্যাবটের বাউন্সে মারাত্মক আঘাত পান ফিল হিউজ। মাথায় হেলমেট পরা থাকলেও বলটি হেলমেটের নিচে তার ঘাড়ের ওপরের দিকে আঘাত হানে। মাথার খুলি ফেটে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। সাউথ অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান সঙ্গে সঙ্গে মাঠে সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে যান। তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকাল ২টা ২৩ মিনিট। এরপর তাকে হাসপাতালে নিতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। দ্রুত হেলিকপ্টারযোগে তাকে সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’দিন অচেতন থেকে মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করেন তিনি। মাঠে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকলেও মৃত্যুর কাছে পরাস্ত হলেন তিনি। হাসপাতালে নিবিড়-পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও ফিরতে পারলেন না তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজিক ঘটনার নায়ক হয়ে মৃত্যুর কাছে হেরে যান তিনি। সিডনির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল তার মস্তিষ্কে। আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে অস্ত্রোপচারটা কোন কাজেই আসেনি তার। মৃত্যুর সময় হিউজের সঙ্গে ছিলেন তার বাবা-মা গ্রেগ ও ভার্জিনিয়া, বোন মিগান ও ভাই জেসন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। এছাড়া, তার সতীর্থ ও অসংখ্য ক্রিকেটানুরাগী হাসপাতালের বাইরে সর্বশেষ খবর জানার জন্য অধীর আগ্রহে অবস্থান করছিলেন। সাবেকদের মধ্যে রিকি পন্টিংও ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। তার মৃত্যুতে নিউ সাউথ ওয়েলসে শেফিল্ড শিল্ডের পরের রাউন্ডের খেলাগুলোও বাতিল করা হয়েছে। ২০০৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে তার টেস্ট অভিষেক হয়। ২৬ টেস্টে ৩২.৬৫ গড়ে ১৫৩৫ রান করা এই ক্রিকেটারের আছে তিনটি সেঞ্চুরি আর সাতটি ফিফটি। অভিষেক সিরিজেই ডারবানে পরপর কনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি সেঞ্চুরি করে দারুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন হিউজ। ওয়ানডেতেও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তবে ফর্মের ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে অস্ট্রেলীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১১৪ খেলায় ২৬টি সেঞ্চুরিসহ ৯ হাজারের ওপর রান ছিল তার। গড় ছিল ৪৬.৫১। আর ঘরোয়া সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও তার গড় ছিল ৪৭.২৫। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টেস্ট সিরিজেও দারুণ খেলেন তিনি। কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার, মিডলসেক্স ও ওরস্টারশায়ারে খেলা হিউজ নটিংহ্যাম টেস্টে ১০ম উইকেটে অ্যাস্টন অ্যাগারের সঙ্গে রেকর্ড ১৬৩ রানের ইনিংসও খেলেন। সে ইনিংসে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে। হিউজ ভারতের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজে নির্বাচকদের বিবেচনায় ছিলেন। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের চোট তার দলে ফেরা মোটামুটি নিশ্চিতই করে দিয়েছিল। সামপ্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মেই ছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনা  শেষ অবধি তাকে নিয়ে গেল সব জাগতিক আশা-আকাঙক্ষা আর প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ঊর্ধ্বেই। এর আগে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনীর খেলার সময়  ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার রমন লাম্বা ফিল্ডিং করার সময় মেহরাব হোসেন অপির খেলা বলে আঘাত পেয়ে মারা যান। তবে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সময়ও একজন প্রাণ হারান বলের আঘাতে।
শোকের ছায়া বিশ্বজুড়ে
মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সারা ক্রিকেটবিশ্বে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলে চিকিৎসক পিটার ব্রুকনার যখন তার মৃত্যুর ঘোষণা দেন তখন তা সিএনএন ও বিবিসি’র মতো টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও সরাসরি সমপ্রচার করে। হিউজের মৃত্যুর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠানরত পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা বাতিল করে দেয়া হয়। খেলা শুরুর ঘণ্টা দেড়েক হিউজের খবর পৌঁছার পর প্রথমে এক ঘণ্টা বিলম্বে খেলা শুরুর চিন্তা করা হলেও পরে পুরো দিনের খেলাই পিছিয়ে দেয়া হয়। খেলার সময় একদিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়া সফররত ভারত ও অস্ট্রেলিয়া বোর্ড একাদশের মধ্যে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠেয় দু’দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটিও বাতিল করে দেয়া হয়। আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া-ভারত প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার কথা। আইসিসি সভাপতি শ্রিনিবাসন, বাংলাদেশ বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমসহ সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের প্রধানেরা শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়া দলে অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক হিউজের মৃত্যুর খবর যখন ঘোষণা করেন তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

No comments

Powered by Blogger.