নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলেও সেনা মোতায়েন হচ্ছে না by ফারুক হোসাইন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলেও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে না। সেনাবাহিনী নামিয়ে আন্দোলন ঠেকিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টায় সিইসি সেনা মোতায়েন করতে চাচ্ছেন।
এনিয়ে ইসিতে দফায় দফায় মিটিং করা হয়। সরকারের ইংগিতে কমিশন এ ব্যাপারে একমত হয়। কিন্তু গতকাল স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং অন্য বাহিনী ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসি জানান, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে না। আপাতত নির্বাচনের মাঠে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্টগার্ড থাকবে। চলমান আন্দোলন ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর ইসির আগ্রহের কঠোর সমালোচনা করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নামে ইসি দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি নামাতে চায়। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে নির্বাচনের অনেক আগেই সেনা মোতায়েনে ইসির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এতো আগে সেনাবাহিনী নামানো হলে তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর সিইসির অতি আগ্রহে বিস্ময় প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনী জড়ালে জনগণ মনে করবে, তারা একটি পক্ষ নিয়েছে। আমরা আমাদের এই বাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। একতরফা নির্বাচনে দীর্ঘমেয়াদে সেনা মোতায়েন হলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন উঠবে। একতরফা একটি নির্বাচনে দীর্ঘমেয়াদে সেনা মোতায়েন করা হলে এটা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে কাক্সিক্ষত না-ও হতে পারে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন একদলীয় নির্বাচনের ফলে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করে তাদের বিতর্কিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচিতে সারাদেশ অচল ও স্থবির হয়ে পড়ায় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কমিশন সদস্যরা। বিরোধী দলের আন্দোলন রোধে তাই আগেভাগেই সেনা মোতায়েনের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন তারা। তবে কমিশন সদস্যরা সেনা মোতায়েনে আগ্রহ প্রকাশ করলেও মোতায়েন করা হচ্ছে না সেনাবাহিনী। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইসির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে নামানোর চেষ্টা সফল হয়নি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ কলকাতার ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এখন নেই। এই মুহূর্তে এমন কোনো জেনারেল বা সেনা কর্মকর্তা নেই যার অভ্যুত্থানের খায়েশ রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা বাংলার জনগণ মেনেও নেবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ ক্ষমতায় যেতে চায়, কেননা সেনা সমর্থনেই তাদের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হওয়া সম্ভব। আর এরাই সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বলছে। কিন্তু একটি অভ্যুত্থান সফল করতে হলে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার জন্য আগে শেখ হাসিনার নাগাল পেতে হবে। তিনি বলেন, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন- গণভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন তারা সবাই শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তারা কাউকে সুযোগ দেবে না। প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের মুখে হঠাৎ এধরনের বক্তব্য শুনে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।
হঠাৎ করে সকলকে অবাক করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশ জুড়ে চলছে আন্দোলন। বিরোধীদলের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। পাতানো নির্বাচন ঠেকাতে পথে নেমে এসেছে সারাদেশের মানুষ। তিন দিনের অবরোধে সারাদেশ থেকে ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি ও সহিংসতায় নিহত হয়েছে বিজিবি সদস্যসহ ১৮জন। সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জার্মানীসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। আর তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এই সহিংসতা ও অচলাবস্থায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে ইসি। সহিংসতা ঠেকাতে ও জনগণের আন্দোলন প্রতিহত করতেই আগেভাগে সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করেন কমিশন সদস্যরা। দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী প্রথম বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। তার এই ঘোষণার পর থেকেই সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ঘুরপাক খেতে থাকে। এ নিয়ে ইসির কয়েকটি সভায় আলোচনাও হয়। সাংবাদিকরাও বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের কাছে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চান।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই গত সোমবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি রোববার ভোট নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে টানা ৭১ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। রাজধানীসহ সারাদেশেই রাজপথে নেমে আসে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও প্রতিরোধ। অবরোধে সহিংসতায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন বিজিবি সদস্যসহ ১৮জন। বিরোধীদলের অবরোধ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ও জান-মালের ব্যপক ক্ষতির কারণে বিপাকে পড়ে যায় ইসি। সহিংসতা এড়ানোর পন্থা খুঁজতে গত বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিন তিন দফা বৈঠকে বসেন তারা। ইসি সূত্রে জানা যায়, ইসির এই বৈঠকগুলোয় প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিলো আন্দোলন ঠেকাতে সেনা মোতায়েন করা। বুধবার বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের সবাই সেনাবাহিনী নামানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। আর তাই ওই দিনই কমিশন সদস্যরা ঘোষণা করেন প্রয়োজনে আগেই সেনাবাহিনীকে নামানো হবে। কমিশনের এই ঘোষণার পর থেকেই তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ এবং অন্যান্য কমিশনাররা ছাড়াও উপস্থিত আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার সহ সংশ্লিষ্টরা।
ইসির বৈঠক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে এক্ষুণি সিদ্ধান্ত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইসির এক বৈঠকে গতকাল এই সিদ্ধান্ত হয়। কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মোশতাক, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিকুল হক এবং অন্য বাহিনী ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কবে থেকে সেনা মোতায়েন করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে। সাধারণত মনোনয়ন প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। সে হিসেবে ১৩ ডিসেম্বরের আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না। কাজী রকিব বলেন, আপাতত নির্বাচনের মাঠে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্টগার্ড থাকবে। তবে নির্বাচন যেহেতু এক দিনে হবে তাই নিয়মিত বাহিনীর পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই আগে যেমন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নামানো হলে বাহিনীটি বিতর্কিত হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, বিতর্কের কিছু নেই। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন যেমন চাইবে তারা সব সময় তেমন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার আশা এখনো ছাড়িনি। সমঝোতা হলে সব দলের অংশ গ্রহণের মধ্য নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে নির্বাচনের অনেক আগেই সেনা মোতায়েনে ইসির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এতো আগে সেনাবাহিনী নামানো হলে তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর সিইসির অতি আগ্রহে বিস্ময় প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনী জড়ালে জনগণ মনে করবে, তারা একটি পক্ষ নিয়েছে। আমরা আমাদের এই বাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। একতরফা নির্বাচনে দীর্ঘমেয়াদে সেনা মোতায়েন হলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন উঠবে। একতরফা একটি নির্বাচনে দীর্ঘমেয়াদে সেনা মোতায়েন করা হলে এটা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে কাক্সিক্ষত না-ও হতে পারে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন একদলীয় নির্বাচনের ফলে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করে তাদের বিতর্কিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচিতে সারাদেশ অচল ও স্থবির হয়ে পড়ায় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কমিশন সদস্যরা। বিরোধী দলের আন্দোলন রোধে তাই আগেভাগেই সেনা মোতায়েনের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন তারা। তবে কমিশন সদস্যরা সেনা মোতায়েনে আগ্রহ প্রকাশ করলেও মোতায়েন করা হচ্ছে না সেনাবাহিনী। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইসির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে নামানোর চেষ্টা সফল হয়নি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ কলকাতার ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এখন নেই। এই মুহূর্তে এমন কোনো জেনারেল বা সেনা কর্মকর্তা নেই যার অভ্যুত্থানের খায়েশ রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা বাংলার জনগণ মেনেও নেবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ ক্ষমতায় যেতে চায়, কেননা সেনা সমর্থনেই তাদের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হওয়া সম্ভব। আর এরাই সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বলছে। কিন্তু একটি অভ্যুত্থান সফল করতে হলে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার জন্য আগে শেখ হাসিনার নাগাল পেতে হবে। তিনি বলেন, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন- গণভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন তারা সবাই শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তারা কাউকে সুযোগ দেবে না। প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের মুখে হঠাৎ এধরনের বক্তব্য শুনে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।
হঠাৎ করে সকলকে অবাক করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশ জুড়ে চলছে আন্দোলন। বিরোধীদলের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। পাতানো নির্বাচন ঠেকাতে পথে নেমে এসেছে সারাদেশের মানুষ। তিন দিনের অবরোধে সারাদেশ থেকে ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি ও সহিংসতায় নিহত হয়েছে বিজিবি সদস্যসহ ১৮জন। সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জার্মানীসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। আর তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এই সহিংসতা ও অচলাবস্থায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে ইসি। সহিংসতা ঠেকাতে ও জনগণের আন্দোলন প্রতিহত করতেই আগেভাগে সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করেন কমিশন সদস্যরা। দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী প্রথম বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। তার এই ঘোষণার পর থেকেই সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ঘুরপাক খেতে থাকে। এ নিয়ে ইসির কয়েকটি সভায় আলোচনাও হয়। সাংবাদিকরাও বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের কাছে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চান।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই গত সোমবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি রোববার ভোট নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে টানা ৭১ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। রাজধানীসহ সারাদেশেই রাজপথে নেমে আসে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও প্রতিরোধ। অবরোধে সহিংসতায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন বিজিবি সদস্যসহ ১৮জন। বিরোধীদলের অবরোধ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ও জান-মালের ব্যপক ক্ষতির কারণে বিপাকে পড়ে যায় ইসি। সহিংসতা এড়ানোর পন্থা খুঁজতে গত বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিন তিন দফা বৈঠকে বসেন তারা। ইসি সূত্রে জানা যায়, ইসির এই বৈঠকগুলোয় প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিলো আন্দোলন ঠেকাতে সেনা মোতায়েন করা। বুধবার বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের সবাই সেনাবাহিনী নামানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। আর তাই ওই দিনই কমিশন সদস্যরা ঘোষণা করেন প্রয়োজনে আগেই সেনাবাহিনীকে নামানো হবে। কমিশনের এই ঘোষণার পর থেকেই তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ এবং অন্যান্য কমিশনাররা ছাড়াও উপস্থিত আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার সহ সংশ্লিষ্টরা।
ইসির বৈঠক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে এক্ষুণি সিদ্ধান্ত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইসির এক বৈঠকে গতকাল এই সিদ্ধান্ত হয়। কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মোশতাক, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিকুল হক এবং অন্য বাহিনী ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কবে থেকে সেনা মোতায়েন করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে। সাধারণত মনোনয়ন প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। সে হিসেবে ১৩ ডিসেম্বরের আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না। কাজী রকিব বলেন, আপাতত নির্বাচনের মাঠে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্টগার্ড থাকবে। তবে নির্বাচন যেহেতু এক দিনে হবে তাই নিয়মিত বাহিনীর পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই আগে যেমন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নামানো হলে বাহিনীটি বিতর্কিত হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, বিতর্কের কিছু নেই। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন যেমন চাইবে তারা সব সময় তেমন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার আশা এখনো ছাড়িনি। সমঝোতা হলে সব দলের অংশ গ্রহণের মধ্য নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
No comments