‘ঘেন্না করি এই রাজনীতি রে’
‘দেশে এটা কী হচ্ছে? রাজনীতির নামে মানুষরে পোড়াইয়া মারছে! ক্ষমতার কাড়াকাড়িতে জান যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। তাঁদের তো কিছু হচ্ছে না।
তাঁরা সাধারণ মানুষের কথা কী ভাবছেন? এর নাম কী রাজনীতি? এইডা যদি রাজনীতি হয়, তাইলে ঘেন্না করি এই রাজনীতি রে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চতুর্থ তলায় ব্লু জোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুলতানা।
সুলতানার ভাই আবু তালহা গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় শিশুপার্কের সামনে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিত্সা নিচ্ছেন। সিদ্দিকবাজারের বাসিন্দা তালহা ওই দিন সন্ধ্যায় মিরপুরে বোনের বাসায় যাচ্ছিলেন। তাঁর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
তালহার বড় ভাই মোহাম্মদ আবুল হাসান প্রথম আলো ডটকমকে জানান, সাত বোন ছয় ভাইয়ের মধ্যে তাঁর অবস্থান দশম। স্ত্রী আর দুই কন্যা নিয়ে সিদ্দিকবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। বড় মেয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আবুল হাসান জানান, স্যানিটারি পণ্যের ব্যবসা করে সংসার চালান তালহা। ভাইয়ের পরিবারের ভবিষ্যত্ নিয়ে আশঙ্কা তাঁর চোখেমুখে। তিনি বলেন, ‘তার যদি কিছু অইয়া যায়, তাইলে পরিবারের যে কী হবে! আমরা সবাই কাজকর্ম করে জীবন সংগ্রামে আছি। এমন কোনো সম্পদ নাই যে সেটা দিয়ে চলব।’ দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই তাঁরও।
কে আমাগোরে খাওয়াইবো
একমাত্র ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে শাহনাজ পারভীনের সংসার। ছেলের বয়স আট বছর। থাকেন ঢাকার মিরপুরের দোয়ারীপাড়ায়। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়। বাসচালক স্বামীর রোজগারে কোনো রকম কেটে যায় দিন। তবু তাঁরা সুখী। সেই সুখের সংসারে হানা দিয়েছে পেট্রলবোমার আগুন।
শাহবাগে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় মারাত্মকভাবে আহত মাহবুব হাল না ছেড়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখার শেষ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। মত্স্যভবন থেকে শাহবাগের কাছে শিশুপার্কের বিপরীত দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মাহবুব। তাঁর শরীরের ৩০ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায়। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্বামীর পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শাহনাজ। অজানা আশঙ্কা তাঁকে বারবার আতঙ্কিত করে তুলছিল। শাহবাগের ঘটনায় নাহিদ নামের একজনের মৃত্যু শাহনাজের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বারবারই বলছেন, কী হবে তাঁর স্বামীর জীবনে। তাঁকে কি শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যাবে?
সবার কাছেই তাঁর একই কথা, ‘আমার পোলাডারে লইয়া কেমনে বাঁচুম? কার কাছে যামু। কে আমাগোরে খাওয়াবে? আমাগো তো আর উপায় নাই। আমার স্বামীডারে কেন আগুন দিল? কী অপরাধ করছিল সে।’
শাহনাজ-মাহবুবের একমাত্র ছেলে আট বছরের সাহিলও অপেক্ষায় ছিল বার্ন ইউনিটের সামনে। বৃহস্পতিবার সকালে বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। তারপর বেরিয়ে যান বাবা। সাহিলের কথা, ‘মা শুধুই কাঁদে। বাবা কখন ভালো হয়ে বাসায় যাবে জানি না।’
অপরাজনীতির হাত থেকে মুক্তি দিন
‘কী ছিল এই বাসযাত্রীদের অপরাধ? তাঁদের ওপর কেন এই হিংসার আগুন? তাঁরা তো রাজনীতিও করেন না। তাহলে কেন তাঁদের ওপর হামলা?’
ষাটোর্ধ্ব আবদুল কুদ্দুস শরীফ চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন সংবাদকর্মীদের কাছে। তাঁর ছেলে শফিকুল ইসলাম বংশাল শাখা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শাহবাগে নাশকতার শিকার হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর শরীরের ২৩ শতাংশ পুড়ে গেছে।
আবদুল কুদ্দুস শরীফ জানান, শরীয়তপুরের বাসিন্দা হলেও রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে স্থায়ী বসত গড়েছেন। তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শফিকুল দ্বিতীয়। একান্নবতী পরিবার হিসেবে সবাই এক সঙ্গেই থাকেন। শফিকুল ইসলামের দেড় বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত আবদুল কুদ্দুস শরীফ। আধো আধো বোলে ‘বাবা বাবা’ করে শফিকুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছে শিশুটি। প্রতিদিনের মতো আজও অপেক্ষায় রয়েছে কখন বাবা বাড়ি ফিরবেন।
ছেলের এরকম দুর্ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ শরীফ। তাঁর মতে, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। বিদেশি শক্তিগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে চক্রান্ত করছে। রাজনীতিবিদেরা যদি দেশের মানুষের কথা না ভাবেন তাহলে দেশের ভবিষ্যত্ অন্ধকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। নিজের সন্তানের এই দুর্দশা দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এ রকম ঘটনা যেন আর কারও সন্তানের ক্ষেত্রে না ঘটে।
শুধুই কান্না আর হাহাকার
শাহবাগের নাশকতার ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন অগ্নিদগ্ধ অন্য সবাই। তাঁদের একেকজনের কমপক্ষে ১০ থেকে ৫৯ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পরিচালক সামন্তলাল সেন। সেখানকার অবস্থা পুরোপুরিই বিষণ্ন। কান্না আর আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে।
চিকিত্সক-নার্সসহ সবাই ব্যস্ত রোগীদের সেবা দিতে। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও কষ্ট আর হতাশা। কারণ আগুনে পোড়া রোগীদের জীবন অনিশ্চিত। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এসব রোগী। তার পরও অগ্নিদগ্ধ রোগীদের স্বজনদের তাঁরা আশ্বাস দেন।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আগুনে পোড়া রোগীদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা কঠিন। কারণ কখন যে তাঁদের শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটে, তা বলা যায় না। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি তাঁদের সুস্থ করে তোলার। চিকিত্সার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।’
শাহবাগে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় মারাত্মকভাবে আহত মাহবুব হাল না ছেড়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখার শেষ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। মত্স্যভবন থেকে শাহবাগের কাছে শিশুপার্কের বিপরীত দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মাহবুব। তাঁর শরীরের ৩০ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায়। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্বামীর পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শাহনাজ। অজানা আশঙ্কা তাঁকে বারবার আতঙ্কিত করে তুলছিল। শাহবাগের ঘটনায় নাহিদ নামের একজনের মৃত্যু শাহনাজের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বারবারই বলছেন, কী হবে তাঁর স্বামীর জীবনে। তাঁকে কি শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যাবে?
সবার কাছেই তাঁর একই কথা, ‘আমার পোলাডারে লইয়া কেমনে বাঁচুম? কার কাছে যামু। কে আমাগোরে খাওয়াবে? আমাগো তো আর উপায় নাই। আমার স্বামীডারে কেন আগুন দিল? কী অপরাধ করছিল সে।’
শাহনাজ-মাহবুবের একমাত্র ছেলে আট বছরের সাহিলও অপেক্ষায় ছিল বার্ন ইউনিটের সামনে। বৃহস্পতিবার সকালে বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। তারপর বেরিয়ে যান বাবা। সাহিলের কথা, ‘মা শুধুই কাঁদে। বাবা কখন ভালো হয়ে বাসায় যাবে জানি না।’
অপরাজনীতির হাত থেকে মুক্তি দিন
‘কী ছিল এই বাসযাত্রীদের অপরাধ? তাঁদের ওপর কেন এই হিংসার আগুন? তাঁরা তো রাজনীতিও করেন না। তাহলে কেন তাঁদের ওপর হামলা?’
ষাটোর্ধ্ব আবদুল কুদ্দুস শরীফ চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন সংবাদকর্মীদের কাছে। তাঁর ছেলে শফিকুল ইসলাম বংশাল শাখা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শাহবাগে নাশকতার শিকার হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর শরীরের ২৩ শতাংশ পুড়ে গেছে।
আবদুল কুদ্দুস শরীফ জানান, শরীয়তপুরের বাসিন্দা হলেও রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে স্থায়ী বসত গড়েছেন। তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শফিকুল দ্বিতীয়। একান্নবতী পরিবার হিসেবে সবাই এক সঙ্গেই থাকেন। শফিকুল ইসলামের দেড় বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত আবদুল কুদ্দুস শরীফ। আধো আধো বোলে ‘বাবা বাবা’ করে শফিকুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছে শিশুটি। প্রতিদিনের মতো আজও অপেক্ষায় রয়েছে কখন বাবা বাড়ি ফিরবেন।
ছেলের এরকম দুর্ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ শরীফ। তাঁর মতে, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। বিদেশি শক্তিগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে চক্রান্ত করছে। রাজনীতিবিদেরা যদি দেশের মানুষের কথা না ভাবেন তাহলে দেশের ভবিষ্যত্ অন্ধকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। নিজের সন্তানের এই দুর্দশা দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এ রকম ঘটনা যেন আর কারও সন্তানের ক্ষেত্রে না ঘটে।
শুধুই কান্না আর হাহাকার
শাহবাগের নাশকতার ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন অগ্নিদগ্ধ অন্য সবাই। তাঁদের একেকজনের কমপক্ষে ১০ থেকে ৫৯ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পরিচালক সামন্তলাল সেন। সেখানকার অবস্থা পুরোপুরিই বিষণ্ন। কান্না আর আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে।
চিকিত্সক-নার্সসহ সবাই ব্যস্ত রোগীদের সেবা দিতে। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও কষ্ট আর হতাশা। কারণ আগুনে পোড়া রোগীদের জীবন অনিশ্চিত। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এসব রোগী। তার পরও অগ্নিদগ্ধ রোগীদের স্বজনদের তাঁরা আশ্বাস দেন।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আগুনে পোড়া রোগীদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা কঠিন। কারণ কখন যে তাঁদের শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটে, তা বলা যায় না। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি তাঁদের সুস্থ করে তোলার। চিকিত্সার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।’
No comments