এইডস ও যুবসমাজের দায়িত্ব

যুবসমাজ এইডস প্রতিরোধে অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যদি অবাধ ও অনিরাপদ যৌনাচার থেকে বিরত থাকে, তাহলেই এইডস প্রতিরোধ সম্ভব। গণসচেতনতা সৃষ্টি, ধর্মীয় অনুশাসন ও ইসলামের বিধিবিধান মেনে চললে এইডস প্রতিরোধ সম্ভব। বর্তমান সমাজে তথা দেশ-বিদেশে যে পতিতাবৃত্তি চলছে, কোনো ধর্মই একে সমর্থন করে না; এ ব্যাপারে ইসলাম সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পতিতাবৃত্তির দরুন অবাধ যৌন মিলনের ফলে মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এইডস নামক মরণব্যাধিতে। বিভিন্ন জটিল রোগসহ উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য দায়ী ব্যভিচার নামক সামাজিক অনাচার। তাই ইসলাম অশ্লীলতা এবং ব্যভিচারের কদর্যতা ও নোংরামির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে; এটিকে হীন ও মন্দ কর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং মানবসভ্যতার জন্য বড় ধরনের হুমকি সাব্যস্ত করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা জোরালো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না, নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩২) ইসলাম ব্যভিচারের পথ চিরতরে বন্ধ করে পৃথিবীতে যুবক-যুবতীদের সুস্থ-সুন্দর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনযাপনে সমর্থ মানুষকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। যুবক-যুবতীর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বাইরে কোনো দৈহিক মিলন ইসলাম অনুমোদন করে না। বৈধ স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কারণেই এইডসের মতো প্রাণসংহারী ব্যাধির জন্ম হয়। কেননা এইডসের ভাইরাস বহনকারী আক্রান্ত পুরুষের মাধ্যমে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে নারীও এইচআইভি পজিটিভ হয়ে যায়। অথচ বিবাহিত নারী-পুরুষের মিলনে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই, যদি তাদের কেউ বিপথগামী না হয়। বৈবাহিক সম্পর্ক বহুগামিতার মূলে কুঠারাঘাত হেনেছে। ব্যভিচার প্রতিরোধ তথা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ইসলাম বিয়ের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যুবকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেন বিবাহ করে, কারণ বিবাহ পবিত্রতা রক্ষার এবং দৃষ্টিকে সংযত রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে যাদের সামর্থ্য নেই তারা যেন রোজা রাখে, কারণ রোজা যৌনক্ষুধা সংবরণে সহায়ক।’ (বুখারি ও মুসলিম) ইসলাম যুবসমাজ তথা নর-নারীকে লজ্জাহীনতা পরিহারের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যেন তারা নিজেদের ব্যভিচার ও যৌন অপরাধ থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়। কেননা একজন নির্লজ্জ বেহায়া মানুষ তার নৈতিক মূল্যবোধকে অবদমনপূর্বক খেয়ালখুশি অনুযায়ী যেকোনো কাজ করতে পারে। যুগে যুগে অতি উৎসাহী, বিকৃত চিন্তা-চেতনার অনুসারী কিছুসংখ্যক লোক শয়তানের প্ররোচনায় নানা রকম অসামাজিক, নির্লজ্জ বেহায়াপনা, অশ্লীল ও পাশবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অথচ ইসলামে নৈতিকতাবিবর্জিত মানুষকে পশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ ও পশুর মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে লজ্জা।’ পক্ষান্তরে নৈতিকতায় উৎকর্ষ অর্জনকারী মানুষ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মর্যাদাবান বলে বিবেচিত হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যৌন অঙ্গের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫) পৃথিবীতে সমাজ-সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অশ্লীলতা ও অশালীনতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছে। ঘৃণ্য অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অশালীন আচার-আচরণের মাধ্যমেই ভয়ংকর মহামারি রোগ সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যভাবে চলতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে প্লেগ এবং এমন অভিনব দুরারোগ্য ব্যাধি দেওয়া হয়, যা তাদের পূর্বপুরুষেরা কখনো শোনেনি।’ (দায়লামি) নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘যখনই কোনো জাতি বা সম্প্রদায় অশ্লীল ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন এক ভয়ংকর মহামারি দেখা দেয়, যা তারা অতীতে কখনো দেখেনি।’ (ইবনে মাজা) যুবসমাজ পড়ালেখা বা কাজের ফাঁকে এইডস প্রতিরোধে করণীয় দিক নিয়ে শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। পল্লি এলাকার অশিক্ষিত জনগণের কাছে এ কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। এ ছাড়া শহর অঞ্চলেও এইডসে আক্রান্ত এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা যায়। যুবসমাজ এইডসে আক্রান্ত জনগণ ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে এইডস প্রতিরোধসংক্রান্ত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। ‘মানুষের জীবন একটাই, একে বাঁচাও’ মূলমন্ত্র সামনে নিয়ে এ কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। যুবসমাজকে এইডস প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেসব ছাত্র এইডসে আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে দেশব্যাপী ছাত্রকল্যাণ তহবিল গঠন করা যেতে পারে। এইডস প্রতিরোধ করতে দেশব্যাপী যুবসমাজ প্রতিটি জেলায় ‘এইডস প্রতিরোধে যুবসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ সংগঠনে সমাজের সব যুবক ভাই ও বোনেরা সদস্য হয়ে এইডস প্রতিরোধে কাজ করবে। এইডস প্রতিরোধে যুবসমাজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারে। এইডস প্রতিরোধ করতে হলে এইডসবিরোধী বই প্রকাশ করাও অত্যাবশ্যক। এইডস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সচেতন জনগোষ্ঠী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন এমনকি দলমত-নির্বিশেষে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। এইডস প্রতিরোধে নৈতিকতার অনুশীলন ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রচারণায় গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এইডস থেকে বেঁচে থাকার জন্য যুবসমাজসহ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সব পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, গবেষক ও কলাম লেখক ।
dr.munimkhan@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.