আরো বেগবান হয়ে রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে থাইল্যান্ডের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ
থাইল্যান্ডে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে চাপের মুখে থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা গতকাল বৃহস্পতিবার থাই পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে জয়লাভ করেছেন।
বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আনলেও ইংলাকের দল ফিউ থাই পার্টি সহজে ভোটে জয়লাভ করে। ইংলাক সরকার ২০১০ সালের সহিংসতার পর থাইল্যান্ডের বৃহত্তম সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছে। জাতিসংঘের প্রধান বান কি মুন দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। বান কি মুন দেশটির সব দলকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার এবং আইন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর অনুরোধ জানান। রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি অনলাইন।
গত রোববার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কার্যালয় দখল করে প্রতিবাদ করে। তাদের দাবি, ইংলাক তার ভাই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার নির্দেশমতো দেশ পরিচালনা করছেন। ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলা আন্দোলন আরো বেগবান হয়েছে। গত বুধবার রাজধানী ব্যাংককের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। হাজার হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী ইতোমধ্যে ব্যাংককে মোট ১৪টি মন্ত্রণালয় এবং বেশ কয়েকটি সরকারি দফতর অবরোধ করেছে। গত বুধবার অন্তত ১৯টি প্রাদেশিক সরকারের কার্যালয়ের বাইরেও জড়ো হয় হাজারো বিক্ষোভকারী। তবে এখনো পর্যন্ত এই আন্দোলন অহিংস রয়েছে।
বতর্মান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাসিত ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ২০০৮ সালে দুর্নীতির দায়ে কারাদ- দেন আদালত। তাকে দায়মুক্ত করতে পার্লামেন্টে একটি বিল পাসের চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। এর প্রতিবাদে গত রোববার শুরু হয় বিক্ষোভ। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি কার্যালয় অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। পার্লামেন্ট ভবন অবরোধেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সরকার হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, আন্দোলনকারীদের পার্লামেন্ট ভবন অবরোধের সুযোগ দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর মহাসচিব সুরানন্দ ভেজ্জাজিভা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনা নামানোর পরিকল্পনা সরকারের নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ চলছে। পুলিশই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করার অভিযোগে বিরোধী নেতা সুথেপ থাংসুবানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা সুথেপ ইংলাকের সরকারকে উৎখাত করতে ও সরকারি সব মন্ত্রণালয় দখল করে নেয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সরকারি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে কারফিউ জারি করার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন। তবে তিনি তাদের সতর্ক করে এও বলেন, সবার উচিত আইন মেনে চলা ও জনতার আইন ব্যবহার না করা। ২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাকসিন ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন থেকে থাইল্যান্ডে বেশ কয়েকবার রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। প্রথমে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে তা সহিংস রূপ ধারণ করে। ২০১০ সালের রক্তাক্ত বিক্ষোভের পর থেকে সবচেয়ে বড় ধরনের সংকট চলছে দেশটিতে।
No comments