একটা রঙিন ফ্রক by মনিরা রহমান

কোন জুতায় কতটা আরাম—এখন জুতা কিনতে গেলে এটিই বিবেচ্য বিষয়। ছেলেবেলায় ঈদের জুতা কিনতে গেলে মোটেই সেটি বিবেচ্য বিষয় ছিল না। যেটি বাহারি, সেটিই কেনা হতো, পায়ে আরাম লাগুক আর না লাগুক। জামা তো নিজের পছন্দে কেনার উপায় ছিল না। বাবা কাপড় কিনে আনতেন, মা সেলাই করতেন একটা রঙিন ফ্রক।


কিন্তু জুতা যেহেতু মাপ ছাড়া কেনার উপায় নেই, সেখানে একটু জেদ খাটানো হতো।
এখনকার শিশুদের ঈদের দিন পায়ে ফোসকা পড়ে কি না, জানি না। আমাদের পড়ত। সেটাও যেন ঈদের খুশির সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করত। ঈদের সকালে নতুন জামা-জুতা পরে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে যেতাম। উদ্দেশ্য, অন্য পাড়ার বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া। হাঁটাহাঁটি নেহাত মন্দ হতো না। ঈদের দিন রাস্তায় রিকশাও কম, আবার ভাড়াও তুলনামূলক বেশি। এ কারণে পথযাত্রা কখনো এমন হতো যে কয়েক মাইল হাঁটা হয়ে যেত। আর নতুন জুতা পরে বাড়িতে যতই মচমচ করে হাঁটা হোক না কেন, বাইরে বের হওয়ার খানিক পরই শুরু হতো জ্বালাপোড়া, তারপর পড়ত ফোসকা। ঈদে সালামি হিসেবে যে টাকা পাওয়া যেত, সেটা দিয়ে কেনা হতো বেলুন, বাঁশি কিংবা কাগজের চরকি। পথের শিশুদেরও সেখান থেকে ভাগ দেওয়া হতো। মোটেই সুকুমার রায়ের হিংসুটেদের গান-এর মতো নয়!
আজকাল আমরা ভয়েই শিশুদের সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও যেতে দিই না। আমাদের আয়ত্তে রাখি ওদের গণ্ডিবদ্ধ জীবন। কম্পিটার আর টেলিভিশনের মধ্যে ওদের গন্তব্য নির্দিষ্ট। তাদের কোথাও বেড়াতে যাওয়া মা-বাবার তত্ত্বাবধানে। ফলে বেড়ানোর যে বাঁধভাঙা আনন্দ, তা আর থাকে কোথায়?

No comments

Powered by Blogger.