আবারও জঙ্গি হামলার শঙ্কা-এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, জঙ্গিরা আবার মাঠে নামার পাঁয়তারা করছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে- এমন ধারণা থেকেই সম্ভবত তারা নতুন করে সংগঠিত হতে চাইছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমন আভাসই স্পষ্ট হচ্ছে।


তবে এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র‌্যাবের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। গতকাল মঙ্গলবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ইফতার মাহফিলের নাম করে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করার সময় র‌্যাব নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্‌রীরের ৩৫ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাদের তথ্য অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ জেহাদি বই, সিডি, লিফলেট ও অন্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে হরকাতুল জিহাদ বা হুজিরও বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হিযবুত তাহ্‌রীর এ দেশের আইন, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা- কিছুই মানে না। তাদের মতে, গণতন্ত্র একটি কুফরি মতবাদ। এই কুফরি মতবাদের অবসান ঘটিয়ে তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা মনে করে, সে কারণে 'জেহাদ' করতে হবে এবং জেহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য করণীয় কাজ। হিযবুত তাহ্‌রীর একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। জঙ্গি তৎপরতার কারণে অন্তত ২০টি দেশে হিযবুত তাহ্‌রীর নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ২০০১ সালে বাংলাদেশে হিযবুত তাহ্‌রীর প্রকাশ্যে তাদের কাজকর্ম শুরু করে। সভা, সেমিনার, গোলটেবিল, মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম প্রকাশ্যেই চালাতে থাকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ করে। এর পর থেকে তারা গোপনে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকে। লিফলেট বিতরণ, সদস্য সংগ্রহ এবং জেহাদের প্রস্তুতি চলতে থাকে। কখনো কখনো ঝটিকা মিছিল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতেও দেখা গেছে।
বাংলাদেশে ইতিপূর্বে জঙ্গি রাজনীতির অনেক ভয়াবহ রূপ আমরা দেখতে পেয়েছি। দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলা, আদালত-বিচারালয়-আইনজীবীদের ওপর হামলা, মার্কেট, সিনেমা হল ও জনবহুল জায়গায় বোমা হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যার মতো বহু ঘটনাই ঘটেছে। আমরা চাই না, দেশে আবারও তেমনি নারকীয় পরিস্থিতি ফিরে আসুক। এ ব্যাপারে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা আরো কঠোর হতে হবে। কেবল কিছু কর্মীকে গ্রেপ্তার করেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এদের অর্থায়ন ও মদদের উৎসগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো নির্মূল করতে হবে। দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ীসহ সমাজের অগ্রসর নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে এ ক্ষেত্রে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যাতে দেশে আবার জঙ্গিবাদের উত্থান না ঘটতে পারে, সে জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.