শিশুর ওপর এই নিষ্ঠুরতা কেন?- আটকে রেখে পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা

খুলনার খালিশপুরের চালকলের মালিক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে যে কাণ্ড করেছেন, তা কেবল অমানবিক নয়, আইনের চোখেও গর্হিত অপরাধ। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, তাঁরই চালকলের শ্রমিক বেল্লাল হোসেন দুই বছর আগে তাঁর কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা কর্জ নেন এবং অদ্যাবধি সেই টাকা পরিশোধ


করেননি। গত শনিবার বেল্লালের স্ত্রী আসমা বেগম যখন আট বছরের শিশুপুত্র দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র রুবেলকে নিয়ে শহরে যাচ্ছিলেন, তখন শহিদুল্লাহ তাঁর লোকজন দিয়ে রুবেলকে আটক করেন এবং পায়ে শিকল বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও কর্মকর্তা মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চালকলের মালিক শ্রমিকের কাছে টাকা পাবেন, সেই টাকা আদায়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতেন। কিন্তু সেসব না করে তাঁর শিশুপুত্রকে পায়ে শিকল দিয়ে যেভাবে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন, তা নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছু নয়। চালকলের মালিক হলে কিংবা কারও কাছে টাকা পাওনা থাকলেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। শ্রমিক বেল্লাল হোসেন পাওনা টাকা না দিয়ে অন্যায় করতে পারেন, কিন্তু তাঁর শিশুপুত্র তো কোনো অন্যায় করেনি। পৃথিবীর কোনো আইনে বাবার অপরাধের দায়ে ছেলেকে শাস্তি দেওয়া যায় না।
শ্রমিক বেল্লাল চালকলের মালিকের কাছ থেকে যে টাকা কর্জ নিয়েছেন, তাঁর উচিত অবিলম্বে তা পরিশোধ করা। কিন্তু পাওনা টাকা আদায়ের নামে একটি শিশুর ওপর চালকলের মালিক যে নির্যাতন চালিয়েছেন, তারও আইনি প্রতিকার প্রয়োজন। এ জন্য চালকলের মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা জরুরি। পুলিশ দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে পেশাগত দায়িত্বশীলতারই পরিচয় দিয়েছে। একজন দরিদ্র শ্রমিকের শিশুপুত্রকে উদ্ধার করে তারা আইনের শাসন কায়েমের পথ প্রশস্ত করেছে। সব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ রকম দায়িত্বশীল ভূমিকা নিলে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে সাহস পাবে না।

No comments

Powered by Blogger.