সড়ক নিয়ে ‘ইজারা-বাণিজ্য’ যানজটে নাকাল শহরবাসী

রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। যানজট সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ বসানো হয়েছে। পথচারীদের অভিযোগ, রাস্তার দুই পাশের জায়গা ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় যানজট এত তীব্র হচ্ছে। অথচ সিটি করপোরেশন তাঁদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে রাস্তায় ব্যবসা করার বৈধতা দিচ্ছে।


গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে দর্জি, কাপড়, ফল ও ফুলের দোকান থেকে শুরু করে সবই রয়েছে। ফুটপাথ ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নগরের সাহেব বাজার এলাকায় রাস্তার ওপরে তাদের প্রায় ৩০০ দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের আদায়কারীরা রশিদ দিয়ে এসব দোকান থেকে খাজনা আদায় করেন। খাজনার রশিদে সিটি করপোরেশনের ইজারাদার মো. রবিনের নাম রয়েছে। রশিদ দিয়ে প্রতিদিন একটি দোকান থেকে তিন টাকা করে আদায় করা হয়। পথচারীরা জানান, রাস্তার দুই পাশের দোকানগুলো না থাকলে গাড়ি-ঘোড়া এভাবে আটকে থাকত না। ঈদ সামনে রেখে আরডিএর মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া আরডিএ মার্কেটে কোনো গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। মার্কেটের দর্শনার্থীরা রাস্তার ওপরেই তাদের মোটরসাইকেল রেখে ভেতরে যাচ্ছে। এর মধ্যে যাত্রীর আশায় রিকশাও দাঁড়িয়ে থাকছে। রিকশা, অটোরিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেলের জন্য দুই পাশের দোকানের সামনে পথচারীরা আটকে থাকছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য আরডিএ মার্কেটের পাশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকক্ষ বসানো হয়েছে। সেখানে দুই পালায় ১২ জন সার্জেন্ট, ৬৪ জন কনস্টেবল, ছয়জন পরিদর্শক ও দুজন সহকারী কমিশনার কাজ করছেন। তার পরও যানজট কমছে না।
আরডিএ মার্কেটে বাজার করতে আসা নগরের কালুমিস্ত্রির মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আরাফাত রুবেল বলেন, ‘আগে-পিছে অটোরিকশা। কোনো দিক দিয়ে বের হতে পারছি না। এমনিতেই রাস্তাটা তেমন চওড়া না, তার ওপর একেবারে রাস্তার জায়গা দখল করে দর্জি কাপড় সেলাই করছেন। এই ব্যস্ত রাস্তার ওপরে সিটি করপোরেশন কেন তাঁদের বসতে দিয়েছে, এটা কিছুতেই বোধগম্য নয়।’
এই রাস্তার উত্তর পাশে কাপড়ের দোকান মেলে বসেছেন ফুটপাথ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, পেটের জন্য রাস্তায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাপড় বিক্রি করছেন। রাস্তার দোকানের জন্য সিটি করপোরেশন ইজারাদার নিয়োগ করেছে। তাঁরা টিকিট দিয়ে প্রতিদিন তাঁদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করছেন। সেই হিসেবে তাঁরা রাস্তার বৈধ ব্যবসায়ী। ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্তব্যরত সহকারী কমিশনার তৌহিদ আরিফ জানান, এই রাস্তাটা তেমন চওড়া নয়। তার মধ্যে অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো আইনিব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। রাস্তার পাশের দোকানের ব্যাপারে তিনি জানান, এগুলো সিটি করপোরেশনের ব্যাপার। এগুলো না থাকলে আরও সুন্দরভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
সিটি করপোরেশনের সচিব আবদুস সালাম জানান, রবিন সিটি করপোরেশনের বাজার পরিদর্শক ও আদায়কারী। তিনি জানান, ওই সামান্য টাকা সিটি করপোরেশনের আদায় না করলেও চলে। রাস্তা ওইভাবে ইজারা দেওয়া নেই। এমনিতে তাঁরা অনেক দিন থেকে আছেন। তাঁদের আবার সমিতিও রয়েছে। ঈদের সময় তাঁদের তোলাও কঠিন। তবে জনগণের সুবিধার্থে পুলিশ চাইলে তাঁদের উঠিয়ে দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.