পবিত্র কোরআনের আলো-ক্রুদ্ধ ফেরাউন মুসার অনুগত জাদুকরদের শাস্তি দেওয়ার প্রত্যয় নিল

১২০. ওয়া উলকি্বইয়াছ-ছাহারাতু ছা-জিদীন। ১২১. ক্বা-লূ আ-মান্না বিরাবি্বল আ'-লামীন। ১২২. রাবি্ব মূছা ওয়া হা-রূন। ১২৩. ক্বা-লা ফিরআ'ওনু আ-মানতুম বিহি ক্বাবলা আন আ-যানা লাকুম; ইন্না হা-যা লামাক্রুম্ মাকার্তুমূহু ফিল মাদিনাতি লিতুখরিজূ মিনহা আহ্লাহা; ফাছাওফা তা'লামূন।


১২৪. লাউক্বাত্তি্বআ'ন্না আইদিইয়াকুম ওয়া আরজুলাকুম্ মিন্ খিলা-ফিন ছুম্মা লাউসালি্লবান্নাকুম আজমাঈ'ন।
১২৫. ক্বালু ইন্না ইলা রাবি্বনা মুনকালিবুন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১২০-১২৫]

অনুবাদ : ১২০. আর এ ঘটনার ফলে জাদুকররা তাদের ভেলকিবাজির হাতিয়ার সমর্পণ করে সিজদায় অবনত হলো।
১২১. তারা বলল, আমরা সেই রাব্বুল আলামিনের প্রতি ইমান এনেছি। ১২২. যিনি নবী মুসা ও হারুনের নির্দেশিত প্রতিপালক। ১২৩. ফেরাউন বলল, আমি অনুমতি দেওয়ার আগেই তোমরা এই ব্যক্তির (নবুয়তে) ইমান আনলে? নিশ্চয়ই এটা একটা ষড়যন্ত্র। তোমরা এ শহরে বসেই পারস্পরিক যোগসাজশে এই ষড়যন্ত্র করেছ, যাতে তোমরা এখানকার বাসিন্দাদের এখান থেকে বিতাড়ন করতে পারো। ঠিক আছে, তোমরা শিগগিরই এর পরিণতি জানতে পারবে। ১২৪. আমি দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণ করেছি, আমি তোমাদের সবার এক হাত ও এক পা কেটে দেব; এরপর সবাইকে শূলে চড়াব।
১২৫. তারা বলল, নিশ্চিত জেনে রেখো (মৃত্যুর পর), আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাব।

ব্যাখ্যা : ১২০ নম্বর আয়াতে জাদুকরদের আত্মোপলব্ধি জাগ্রত হওয়ার প্রসঙ্গটি বিবৃত হয়েছে। 'উলক্কিয়া' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে 'ফেলে দেওয়া হলো' বা 'সমর্পণ করা হলো'। 'হাতিয়ার ফেলে দেওয়া' বা 'অস্ত্র সমর্পণ' অর্থেও এই শব্দ ব্যবহৃত হয়। জাদুর প্রতিযোগিতায় যখন তারা নবীর মুজিজার কাছে হেরে গেল, তখন তাদের মধ্যে সত্যোপলব্ধি জাগ্রত হলো। তাদের অন্তঃকরণ আল্লাহর আনুগত্যে সিজদায় পড়ে যেতে বাধ্য হলো। এ স্থলে তাদের ইমানের শক্তির বহিঃপ্রকাশ এবং এরই ভিত্তিতে জেগে ওঠা সৎসাহস লক্ষণীয়। জাদুকররা তাদের ভেলকিবাজিমূলক জাদুকরী পেশার মাধ্যমে কিছু আয়-রোজগার করে জীবন ধারণ করত। সম্রাটের নির্দেশে তারা নবী মুসার মুজিজাকে জাদু দিয়ে মোকাবেলা করতে চেয়েছিল। নিজেদের ভ্রান্ত ধর্ম রক্ষা এবং আল্লাহর নবীকে প্রতিহত করতে যারা কিছুক্ষণ আগেই অত্যাচারী ফেরাউনের কাছ থেকে পুরস্কার লাভের জন্য দরকষাকষি করেছিল, তারাই আল্লাহর ওপর ইমান আনা মাত্র প্রচণ্ড সৎসাহসী হয়ে উঠল। ফেরাউনের মতো দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও অত্যাচারী শাসকের হুমকিকে তারা একটুও পাত্তা দিল না।
১২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালাকে মুসা ও হারুনের প্রতিপালক বলে উল্লেখ করার তাৎপর্য এই হতে পারে যে ফেরাউন নিজেকে 'রব্বে আলা' বা শ্রেষ্ঠ প্রভু বলে দাবি করত। ফেরাউন নিজেকে বিশ্বের প্রভু বলেও দাবি করত। সুতরাং এ স্থলে জাদুকররা শুধু 'বিশ্বজগতের প্রভু' বললে হয়তো এর মর্মার্থ ফেরাউন বলেও শ্রোতাদের কেউ কেউ ভুল বুঝতে পারত বা ভুল বোঝার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারত। এ জন্যই জাদুকররা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিল যে মুসা ও হারুন (আ.) যাঁকে জগতের প্রভু এবং নিজেদের প্রভু বলে নিজেরা বিশ্বাস করেন এবং সবাইকে বিশ্বাস করতে বলেন, আমরা সেই আল্লাহর ওপর ইমান এনেছি।
১২৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে পরাজিত জাদুকররা মুসা (আ.)-এর আনুগত্যে চলে যাওয়ার পর ফেরাউনের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সে বিষয়গুলো। জাদুকরদের ইমান আনার পর ফেরাউন ভেতরে ভেতরে খুব শঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে বুঝতে পারল, ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত নবী মুসার উত্থানে, বিশেষ করে তাঁর নবুয়তপ্রাপ্তির ফলে তার নিজের ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। সে জাদুকরদের প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ হলো এবং মুসার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসাজশ আগে থেকেই ছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করল। ফেরাউন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি চেপে গেলেও অবিলম্বে যে তাদের ওপর নির্মম প্রতিশোধ নেবে সে সংকল্প জানিয়ে দিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.