আমাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে-পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে, তা বোঝা গিয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন এবং গত বছর পৌর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস বামফ্রন্টকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছিল। এবারে ২৯৪ আসনের বিধানসভায় বামফ্রন্টের ঝুলিতে পড়েছে মাত্র ৬১টি।

অন্যদিকে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২২৮টি আসন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে ঠিক এর বিপরীত ফলই হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের বিজয়ের পেছনে যেমন মমতার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি কাজ করেছে, তেমনি ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টের ব্যর্থতাও। আমরা বিজয়ী জোটকে অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে বামফ্রন্টকেও ধন্যবাদ জানাই, তারা জনগণের রায় মেনে নিয়েছে। দলটির যত ব্যর্থতাই থাকুক, পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতি অর্জনে তাদের ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যাকে নির্বাচন করবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে। তাই ভোটের ফলকে কোনো ‘দুর্গের পতন’ বা ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে দেখা সমীচীন নয়।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন থেকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। সেখানে নির্বাচন কমিশন যেভাবে পুরো নির্বাচন পরিচালনা করেছে, তাতে তাদের দক্ষতা, সততা ও নিরপেক্ষতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কমিশনের বিরুদ্ধে কেউ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেনি। পরাজিত পক্ষও নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানায়নি। গণমাধ্যমগুলো যথার্থভাবেই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের প্রধান নায়ক বলে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশেও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে ত্রুটিমুক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত সেই উদ্যোগকে সর্বাত্মক সহায়তা করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে পরিচালনার বিকল্প নেই।
যৌক্তিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার পালাবদলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ। এ রাজ্যের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, স্থল ও রেলপথে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। রাজনৈতিকভাবে দুই দেশের বাসিন্দা হলে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ভাষা-সংস্কৃতির দিক থেকে আমরা অভিন্ন উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি। চলতি বছর যৌথভাবে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন সেই বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে কিংবা বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রসঙ্গে আমরা গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা জ্যোতি বসুর ভূমিকা স্মরণ করতে পারি। ২০১০ সালে নয়াদিল্লিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্তবিরোধ নিষ্পত্তি ও ছিটমহল বিনিময়ের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছালেও তা যৌক্তিক পরিণতি পেয়েছে বলা যাবে না; বিশেষ করে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি আটকে ছিল পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের জন্য। এখন নির্বাচন হয়ে গেছে এবং কয়েক দিনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিতে যাচ্ছেন। স্বভাবতই বাংলাদেশ অবিলম্বে তিস্তার পানিবণ্টন ও সীমান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধান আশা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকারের কাছে ইতিবাচক ভূমিকাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.