কে খাওয়ায়, কেন খাওয়ায়?-নির্বাচনী বিরিয়ানি!

কোনো সন্দেহ নেই যে নির্বাচনই গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব। উৎসবের সঙ্গে আনন্দ ও ভোগের একটা সম্পর্ক আছে, সম্পর্ক আছে অর্থ খরচের। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে উৎসবের সেই আমেজ ইতিমধ্যে ফুটে উঠেছে। অর্থ খরচ হচ্ছে, প্রার্থীর সমর্থকদের খুশি রাখতে তাঁদের আনন্দ ও উপভোগের ব্যবস্থাও হচ্ছে।

কেউ টাকা পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন মোটরসাইকেল আর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় চায়ের দোকানে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বিরিয়ানি। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে সাধ্যমতো বড় মিছিল নিয়ে আসেন। মিছিলকারীরা আর কী পান, তা জানা না গেলেও তাঁদের বিরিয়ানি ভোজনের ব্যাপারটা নিশ্চিত। সমর্থকদের আপাতত বিরিয়ানি খাওয়ানো চলছে, তলায় আরও খরচের ব্যাপার আছে। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের বা সমর্থকদের মতামত প্রভাবিত করায় অর্থ খরচের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে। প্রশ্ন, এত বিরিয়ানির খরচটা আসছে কোথা থেকে? নির্বাচনী ব্যয়ের বিধিবদ্ধ সীমা মানা হচ্ছে তো?
নির্বাচন উৎসবই বটে, যেখানে নাগরিকেরা তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচনের আনন্দ উপভোগ করেন। এখানে উৎসবটা অন্য রকম। প্রার্থীরা উৎকোচ ও বকশিশ দিয়ে সমর্থকদের মাঠে নামান তাঁদের পক্ষে কাজ করানোর জন্য। এর পরের ধাপে দেখা যায়, ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্যও রংবেরঙের আয়োজন করা হয়, ঢালা হয় অর্থের নহর। এসবই অর্থের জোরে জনমত প্রভাবিত করার শামিল। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বিরিয়ানি সেবন উৎকোচ ছাড়া কিছু নয়।
বাংলাদেশে নির্বাচনী অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অর্থবল ও ক্ষমতাবলই তাঁদের জনপ্রিয়তা আকর্ষণের মূল চালিকাশক্তি। প্রার্থীরা নিজের পকেট থেকে অর্থ খরচকে রাজনৈতিক বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন বলেই তাঁরা নির্বাচিত হয়ে সেই বিনিয়োগের বহুগুণ উশুল করতে পিছপা হন না। বরং হওয়ার কথা ছিল এই: জনগণের সমর্থনে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতায় বসে জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করবেন এবং তাঁদের সেবা দেবেন। জনপ্রতিনিধিদের পকেটের টাকা বা বিরিয়ানি কারোর প্রয়োজন নেই, সরকারি অর্থের সদ্ব্যবহার এবং সরকারি সেবাই তাঁদের কাছে প্রত্যাশিত। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী থেকে শুরু করে কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের সবারই এই আচরণবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। আর নির্বাচন কমিশনসহ মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের উচিত কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.