যে পরাজয়জয়ের অধিক, তাকে অভিবাদন-নাটকীয় এশিয়া কাপ ফাইনাল

কোনো কোনো পরাজয় জয়েরও অধিক। এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরাজয় তেমনই মহৎ অর্জন। তবু সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে নেমে আসার দুর্বলতাও উপেক্ষণীয়নয়। আজ হাহাকার যতটা ন্যায্য, ততটাই ন্যায্য ছিল বাংলাদেশের তরুণ শার্দূলদের জয়।

কিন্তু অঘটনঘটনপটিয়সী ক্রিকেট যে অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে; তাকে আর ফেরানো যাবে না। আবার মানতে হবে যে, মাত্র ২ রানের জন্য শার্দূল বাহিনী চ্যাম্পিয়ন না হলেও সপ্তাহজুড়ে তারাই ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নায়ক। কোটি কোটি দর্শকের সমীহমেশানো ভালোবাসার বরমাল্য পরাজয়ের বিষণ্নতাকে তাই বেদনামধুর করেছে। খেলা শেষে সাকিব-তামিম-মুশফিক বাহিনী ট্র্যাজেডির বীরের মতোই উচ্চতায়আসীন। এশিয়া কাপের রানার্সআপ হওয়ার জন্যই নয় শুধু, এই অনন্য মহাকাব্য উপহার দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটাবেগী মানুষ দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দনই জানাবে এবং জানাচ্ছে। অভিনন্দন বিজয়ী পাকিস্তান দলকেও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনের মধ্যমণি এখন এশিয়া। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বজয়ী ক্রিকেট দলের উৎসভূমি এই এশিয়া। ওই তিন পরাশক্তির দুটি, ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই এবার ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। বলা বাহুল্যনয়, পরপর চারটি ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য ও শক্তি-সামর্থ্য দেখিয়ে বাংলাদেশের ছেলেরা নতুন ক্রিকেটীয় পরাশক্তি হিসেবে হাজির।
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশকে পাওয়া যাবে, ফাইনালের দিন পর্যন্ত নিজেদের মাঠে নিজেদের ছেলেদের দাপুটে খেলা উপভোগ করা যাবে; গোড়ায় এই প্রত্যাশা অনেকের ছিল না। নিজেদের উজাড় করে খেলে যারা দলগতভাবে সাধ্যের সীমাকে অনেক ওপরে নিতে পেরেছে, তাদের পক্ষে ভবিষ্যতে অনেক কিছুই করা সম্ভব। দেশ যেন প্রস্তুত হয়েছিল এক অসাধারণ আনন্দের জোয়ারে ভাসতে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও গোড়াতে যে অটুট প্রতিরোধ গড়ে তোলা গিয়েছিল, সেটাও তাদের আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ। বিরাট প্রত্যাশা জাগানোর মতো, বিরাট জয়ের সোপান হিসেবেই এই ঘটনাকে দেখতে হবে। পাশাপাশি লক্ষণীয়, বাংলাদেশের দর্শকেরা যেমন উচ্ছ্বসিত হতে পারে, তেমনি খেলাকে খেলার মধ্যে রাখার পরিপক্বতাও তারা অর্জন করেছে। এ রকম স্বাস্থ্যকর আবহাওয়াই ক্রিকেটের বিকাশে সহায়ক। আরও জরুরি, ক্রিকেট পরিচালনা বোর্ডের তরফে আরও বিচক্ষণতা দেখানো এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া। সে ক্ষেত্রে আমাদের ছেলেদের পক্ষে বিশ্বসেরা হওয়া অসম্ভব হবে না।
পাকিস্তানকে ২৩৬ রানে আটকে ফেলা, তারকা খেলোয়াড়দের একে একে পরাস্ত করে অটুট ফিল্ডিং ও বোলিং মিলিয়ে গল্পটা যেন এক সুবর্ণ সমাপ্তির দিকেই যাচ্ছিল। ব্যাটিংয়ে এক রত্তি দুর্বলতার খাদ সেই সুবর্ণ কাহিনিকে তামাটে করে দিতে পারে না। এ ঘটনার শিক্ষা একটাই, উৎকর্ষে কোনো ফাঁক রাখা চলবে না, প্রচণ্ড চাপের মুখেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাওয়ার তাকদ অর্জনে আরও সাধনার প্রয়োজন বাংলাদেশের।

No comments

Powered by Blogger.