এশিয়া কাপ-টাইগারদের অভিনন্দন

ক্রিকেটে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জনের জন্য নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় দল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দুই চ্যাম্পিয়ন ভারত ও শ্রীলংকাকে প্রথম পর্যায়ের খেলায় পর্যুদস্ত করে মুশফিক-সাকিব-তামিম বাহিনী বৃহস্পতিবার দিন-রাতের খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল আরেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের।

শ্বাসরুদ্ধকর খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় একশ' ওভারের একেবারে শেষ বলে। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় মাত্র ২ রানে। স্বপ্নভঙ্গের করুণ সুর উৎসবের রঙ ম্লান করে দিল। যন্ত্রণায় দগ্ধ হলো কোটি কোটি নারী-পুরুষ-শিশু। সর্বত্রই বিষণ্নতার সুর। একটি মায়াবী রাত আমাদের হতে হতেও হলো না। এশিয়ার তিন ক্রিকেট পরাশক্তিকে একই আসরে পরাভূত করার অভাবনীয় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। এমন পরিস্থিতি হয়তো বারবার সৃষ্টি হবে না। দুঃখ-হতাশা আরও অনেক দিন ক্ষণে ক্ষণে হানা দেবে। এ জন্য এক বা একাধিক খেলায়াড়ের বিশেষ দায় রয়েছে কি-না, টিম ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি ছিল কি-না, তা নিয়ে ব্যবচ্ছেদ চলতে থাকবে। কোনো কিছুতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে তারুণ্যের স্ফুরণের বিষয়টি ম্লান হবে না। পরপর চারটি ম্যাচে আমাদের জাতীয় দল অনন্য নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে। স্বাক্ষর রেখেছে ধারাবাহিকতার। একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের স্বীকৃতি পাওয়া সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন। তামিম ইকবাল চার ম্যাচেই অর্ধশতের বেশি করে রান পেয়েছেন। বোলিং-ফিল্ডিং আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। ইয়াহু ক্রিকেট বৃহস্পতিবার রাতেই স্বপ্নের যে এশীয় একাদশ গঠন করেছে, তাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাঁচ ক্রিকেটার_ তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, আবদুর রাজ্জাক এবং মাশরাফি বিন মুর্তজাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন দল পাকিস্তানের রয়েছে তিনজন, শ্রীলংকার দু'জন এবং ভারতের মাত্র একজন। বলা যায়, আমাদের যা কিছু অর্জন তার পেছনে অবদান সম্মিলিত। আর স্বপ্নের দৌড়ে প্রায় টাচলাইন ছুঁতে ছুঁতেও একটুর জন্য যে ব্যর্থতা, তার দায়ও কমবেশি সবার।
আমাদের একাধিক খেলোয়াড় ব্যক্তিগত লক্ষ্য অর্জন করেছেন। দলও পেঁৗছে গিয়েছিল ইতিহাস সৃষ্টির একেবারে দোরগোড়ায়। আমাদের ক্রিকেটের আরও উন্নতির জন্য কী করণীয় সেটাও কিন্তু এ থেকেই স্পষ্ট হয়_ বড় ম্যাচ বা টুর্নামেন্টে বিজয়মালা ছিনিয়ে আনার জন্য শেষ পর্যন্ত হাল ধরে রাখতে হয় এক বা একাধিক ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারকে। তাদের কাঁধে বর্তায় বিশেষ দায়িত্ব। এ জন্য ক্রীড়ানৈপুণ্য বাড়িয়ে চলার পাশাপাশি চাই মানসিক প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার যা হতে হতেও হলো না, পরের কোনো বড় আসরে সেটা হতেই হবে। ওয়ানডের পাশাপাশি পাঁচদিনের টেস্ট এবং হাল আমলের বিনোদন ক্রিকেট টি-টুয়েন্টির প্রতিও চাই সমান মনোযোগ। খেলায়াড়রা তাদের সামর্থ্য দেখিয়েছেন। তারা আরও এগিয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষ দায় বর্তায় ক্রিকেট বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের। সবার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য চাই সম্মিলিত উদ্যোগ।
একই সঙ্গে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সার্বিকভাবে গোটা সরকারের প্রতি আবেদন, সব ধরনের খেলাধুলার প্রতিই মনোযোগী থাকুন। সুস্থ দেহ-মনে আমাদের শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীরা যাতে বেড়ে উঠতে পারে, তার জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। জাতীয় ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন।

No comments

Powered by Blogger.