সংবাদপত্র ছিনতাই-যত দোষ নন্দ ঘোষ

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদিও জোরের সঙ্গেই দাবি করে যে, জননিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, তারপরও ছিনতাই-রাহাজানির ঘটনা বিরল নয়। তবে প্রকাশ্যে বান্ডিল বান্ডিল সংবাদপত্র ছিনতাই অবশ্যই বিরল এবং অভিনবও বটে। রোববার মাদারীপুর ও বগুড়ায় এমন অনাসৃষ্টি কাণ্ড ঘটিয়েছে একদল পরিবহন শ্রমিক এবং বিভিন্ন

সংবাদপত্রের ভাষ্য অনুযায়ী তারা নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পরিচালিত সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য। এ ঘটনা দারুণ উদ্বেগের_ একদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ বিঘি্নত করা হচ্ছে, পাশাপাশি মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের নামকে তার অনুগতরা যেভাবে ব্যবহার করেছে তা সমাজে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অশুভ ইঙ্গিতবাহী। গত রোববার ঢাকার গাবতলীতে ড্রাইভারদের ভুয়া লাইসেন্স পরীক্ষা করতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও একদল পরিবহন শ্রমিকের ক্ষোভের মুখে পড়েন। অতিব্যস্ত সড়কপথটি কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করে হাজার হাজার মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল একদল শ্রমিক। এ ধরনের ঘটনা কঠোরভাবে নিন্দনীয় এবং তা একদিকে যেমন জনরোষের কারণ ঘটায়, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। পত্রিকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের নেতার নামে সংবাদপত্র ভুল ও বিকৃত তথ্য প্রকাশ করছে। এমনটি ঘটলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে_ সংক্ষুব্ধরা প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, আদালতেও যাওয়া সম্ভব। কিন্তু তার পরিবর্তে আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো? সংবাদপত্র কিংবা বেতার-টেলিভিশনকে খবর পরিবেশন করতে হয় বাস্তবতার নিরিখে। তাদের সত্য তুলে ধরতে হয়, অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের সম্পর্কে প্রশাসনকে সতর্ক করতে হয়। কে খুশি হলো, কে হলো না সেটা দেখার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, সরকারের ভেতরে, সমাজের প্রভাবশালী অংশে এবং এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলেও এমন কিছু লোক রয়েছেন যারা সামান্যতম সমালোচনা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকেন না। তারা নিজেদের সংশোধনে সচেষ্ট হন না, বরং সব রাগ গিয়ে পড়ে গণমাধ্যমের ওপর। এ ক্ষেত্রে উস্কানি থাকে এবং সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ না হলেও চলে। পরিবহন শ্রমিকদের সংবাদপত্র ছিনতাই এবং পুড়িয়ে ফেলা এরই পরিণতি বলে মনে হয়। এ ধরনের মনোভাব গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং তা দ্রুতই পরিত্যাজ্য হওয়া উচিত। কাউকে অযথা হেয় করা কিংবা অপরাধী হিসেবে তুলে ধরা সংবাদপত্রের কাজ নয়। এ পেশায় যুক্তদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়, কখনও কখনও সাহসের পরকাষ্ঠা দেখাতে হয়। সরকারের দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান এবং তাতে ব্যর্থতা ঘটলে সুশাসনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আশার কথা যে, বগুড়ায় পুলিশ দ্রুতই তৎপর হয়ে আট হাজারের বেশি ছিনতাই হওয়া সংবাদপত্র উদ্ধার করে হকারদের কাছে বিলির জন্য তুলে দিয়েছে। মাদারীপুরের ঘটনাতেও পত্রিকা ছিনতাই ও অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এর পেছনে কেউ ইন্ধন জুগিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই। সংশ্লিষ্টদের এটা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, নিজেদের ভুলের জন্য অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে রেহাই পাওয়া যাবে না। বরং সময়মতো নিজেদের সংশোধন করা না হলে তা আরও বড় ক্ষতির কারণ
হয়ে উঠতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.