আমের মঞ্জরি-নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ফল চাই

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতার অন্ধ বধূর প্রখর অনুভূতি চেতনার কথা বাংলা ভাষাভাষী বহু পাঠকের মনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। পায়ের তলায় বকুল ফুলের স্পর্শ পেয়ে অন্ধ বধূ তার ননদকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জ্যৈষ্ঠ আসতে ক'দিন দেরি, আমের গায়ে রঙ লেগেছে কি-না। সামান্য একটি ফুলের অস্তিত্ব একদা অন্ধকেও প্রকৃতির অপরূপ বিভা দেখাতে পারত।

অথচ বৃক্ষবঞ্চিত শহরে চক্ষুষ্মানের পক্ষেও কোনো ফুল বা ফলের মৌসুম আঁচ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মুকুল এখন ফলের দিকে যাত্রা করেছে। দিনাজপুরে লিচু ক্রমশ পুরুষ্টু হয়ে উঠছে। কিন্তু ফলদ বৃক্ষবঞ্চিত শহরে আমের মুকুল বা মঞ্জরির সুঘ্রাণ ততটা পেঁৗছাতে পারেনি। প্রকৃতির কাছ থেকে বহু দূরে থেকে তাই শহরের কবির পক্ষে 'মঞ্জরি ও মঞ্জরি, আমের মঞ্জরি' গেয়ে ওঠা কঠিন। অবশ্য ঘ্রাণবঞ্চিত শহরবাসীকে বাগানের খবর এনে দিয়েছে সমকাল। প্রত্যন্ত আম বাগানগুলোতে আমের কী অবস্থা তা বেশ জানা গেল এ আয়োজন থেকে। মৌসুমের শুরুতে অল্প বৃষ্টি আম ও লিচু উভয়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সময় হঠাৎ ঝড়ের ভয় থাকে। বিশেষত মুকুল অবস্থায় আমের বাগান ঝড়ের শিকার হলে ফলনে প্রভাব পড়ে। মুকুল ঝরে গিয়ে উৎপাদন কমে যায়। এবার ঝড় হয়নি, ততটা খরাও হয়নি। ফলে মুকুল এখন নিরাপদে পূর্ণ আমের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। আম ও লিচুচাষিরা গাছের যত্ন করছেন, ভালো ফল তুলবার আশা করছেন। আমাদের সংস্কৃতিতে আমকে বরাবরই আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হয়। খনা বহু শতাব্দী আগে বলেছিলেন, আমে ধান, তেঁতুলে বান। অর্থাৎ আম ভালো হলে ধানের সম্ভাবনা আর তেঁতুল ভালো হলে বন্যার আশঙ্কা। গৃহস্থের ক্ষেত্রে আম ও ধান উভয় ফসলের অধিক ফলন হোক_ সে প্রত্যাশা নিশ্চয় থাকবে। আমের মৌসুম এলে নতুন এক উদ্বেগও কিন্তু ক্রেতাদের ঘিরে ধরবে। তা হলো, আমটি কি নিরাপদ? চাষিরা কষ্ট করে উৎপাদন করেন আর ক্রেতারাও টাকা দিয়ে তা কেনেন। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা এ আমে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক মিশিয়ে শুধু যে খাবার অনুপযুক্ত করে তোলেন তা নয়, রীতিমতো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এ ফল। ফল বাজারে আসার আগেই তাই সতর্কতা দরকার। অন্তত দেশীয় ফলগুলোর নিরাপদ আস্বাদ থেকে ক্রেতারা যাতে বঞ্চিত না হন, সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.