অবকাঠামোগত সুবিধাই একমাত্র ব্যাপার নয়-বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

শনিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে আইনমন্ত্রী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সত্ত্বেও ৬৪ জেলায় বিচারকদের কাজের তদারকি সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, জনগণের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য বিচার বিভাগ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই।

গুরুতর এই অভিযোগের উত্তরে প্রধান বিচারপতি ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর মতে, ‘বিচার বিভাগ হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটার মতো স্বাধীনতা পেয়েছে।’
বছরের পর বছর মামলার নিষ্পত্তি হয় না। তাতে বিচারপ্রত্যাশী মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। আইনমন্ত্রীর কথা হলো, বিচারকেরা সময়মতো কাজ করলে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হতো। কিন্তু জেলা আদালতের বিচারকেরা এ ব্যাপারে অনেক সময় উদাসীন থাকেন। এসব ক্ষেত্রে তাঁদের গাফিলতির কথা অস্বীকার না করেও প্রধান বিচারপতি তাঁদের সুষ্ঠুভাবে কাজ করার পথের অন্তরায়গুলো তুলে ধরেছেন। লোকবলের অভাব, প্রয়োজনীয় কক্ষ ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশের অভাব, যাতায়াতের সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তিনি উল্লেখ করেন। আইন মন্ত্রণালয় যদি এসব সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা না করে, তাহলে বিচার বিভাগের বিচারকেরা যথেষ্ট পরিশ্রম করেও প্রত্যাশিত ফল দিতে পারবেন না।
নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা এখন প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ লাভ করছেন। এই মেধাবী বিচারকদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করলে তাঁদের কাছ থেকে উন্নত মানের কাজ আশা করা যায় কি? সুতরাং প্রধান বিচারপতি যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার যৌক্তিক ভিত্তি আছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধাই একমাত্র ব্যাপার নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার আরেকটি মাত্রা রয়েছে। যখন রাজনৈতিক মামলার কথা বলে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা মামলা ঢালাওভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়, তখন জনমনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি কৌঁসুলির ভূমিকাও বড়। তাঁরা ঠিকমতো যুক্তিতর্ক ও তথ্য-উপাত্ত তুলে না ধরলে আদালতের কিছু করার থাকে না।
আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির বাক্যুদ্ধ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি আরও বেশি তাৎপর্য নিয়ে সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগ তথা আইন মন্ত্রণালয়ের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। দ্রুত বিচারের জন্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না, যা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। তাদের কর্তব্য হবে ফৌজদারি অপরাধের মামলাগুলো ঢালাওভাবে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে দেখিয়ে প্রত্যাহার না করা এবং সব মামলা আইনের নিজস্ব ধারায় চলতে দেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.