তবু স্বপ্ন দেখছে মেয়েটি by রমেশ কুমার

তোমার জীবনের লক্ষ্য কী—তা জানিয়ে বান্ধবীর কাছে একটি পত্র লিখো। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের ওই নির্দেশের পর মেয়েটি তার খাতায় লিখেছিল, ‘...সবাই লেখাপড়া শিখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কত কিছু হতে চায়। আমি আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। ... ইতি তোমার বান্ধবী...। ... তারিখ: ১০-০৭-১১।’ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা সেই মেয়েটির (১২) বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। শ্রেণীকক্ষে নিজ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে লেখার তিন মাসের মাথায় মেয়েটির জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যায়।

পাশের গ্রামের রাজমিস্ত্রিকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তাকে অপহরণ করে ঢাকার সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কৌশল খাটিয়ে সেখান থেকে ১২ দিন পর বাড়ি ফেরে মেয়েটি। গত বৃহস্পতিবার মেয়েটির বাড়িতে গেলে তার বাবা অভিযোগ করেন, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁর মেয়েকে অপহরণ করে তালজাঙ্গা গ্রামের এরশাদ মিয়া (২৫)। এরশাদ পেশায় রাজমিস্ত্রি। থাকেন সাভারে। মেয়ের বাবা জানান, মেয়েকে আরও লেখাপড়া করাবেন বলে তিনি বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হননি। ৬ অক্টোবর সকাল নয়টায় তাঁর মেয়ে বিদ্যালয়ের পাশে এক শিক্ষকের কাছে পড়তে যায়। অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তখনো পড়ছে দেখে সে বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। এ সময় এরশাদের ভাগনি লিপা আক্তার সেখানে আসে। তাঁর মেয়েকে মিষ্টি দিয়ে বলে, ‘তোমার মা পাঠিয়েছে, খাও।’ সরল বিশ্বাসে তাঁর মেয়ে সেই মিষ্টি খায় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। লিপা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি অটোবাইকে উঠিয়ে নান্দাইল চৌরাস্তায় নিয়ে যায় তাঁর মেয়েকে। সেখানে থেকে ভৈরবগামী বাসে ওঠানো হয়।
মেয়েটি জানায়, অপহরণের তিন দিন পর ৯ অক্টোবর সে জ্ঞান ফিরে পায়। নিজেকে সে অজ্ঞাত স্থানে আবিষ্কার করে। সে দেখতে পায়, যার সঙ্গে তার বিয়ের কথা হয়েছিল সেই এরশাদ মিয়া তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে বুঝতে পারে অজ্ঞান অবস্থায় তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে সাভার থানার ২ নম্বর কলমা এলাকার একটি ভবনে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ১৮ অক্টোবর কৌশলে সে ওই ভবন থেকে পালায়। সাভার থেকে বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় বাড়ি ফেরে।
এদিকে শিক্ষকের কাছ থেকে মেয়ে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাতে তাঁরা অপহরণের খবরটি জানতে পারেন। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশায় নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও কাজ না হওয়ায় ১১ অক্টোবর মেয়ের বাবা নান্দাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বাড়ি ফিরে আসার পর মেয়ের কাছে সব শুনে ২০ অক্টোবর রাতে মেয়ের বাবা নান্দাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এরশাদ মিয়ার মুঠোফোনে গতকাল শুক্রবার একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তালজাঙ্গা গ্রামে এরশাদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা রহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তবে ওই মেয়েকে তাঁর ছেলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর ছেলে সাভারেই বসবাস করছেন।
মেয়েটি বলে, ‘আমি আবারও স্কুলে যেতে চাই।’ কিন্তু প্রভাবশালীরা ঘটনাটি মীমাংসা করতে চাইছে। এরশাদের বিচার না করে উল্টো তার সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে সে নিজের জীবন শেষ করে দেবে বলে হুমকি দেয়।

No comments

Powered by Blogger.