গোলযোগ হলে দায় নেবে না ইসিঃ সিইসি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো ধরনের গোলযোগ হলে দায় নেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকার সেনা মোতায়েন না করায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা। এর আগে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে তাঁরা নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত ১০০ র‌্যাব-সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন।

সিইসি শামসুল হুদা তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে গোলযোগ হলে কমিশন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে নির্বাচন স্থগিত করা হবে। তবে এর দায় ইসি নেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা সময়মতো সেনা মোতায়েনের জন্য সরকারকে চিঠি দিয়েছি। অথচ এ বিষয়ে সরকার কমিশনকে লিখিত বা মৌখিকভাবে কিছুই জানায়নি। এটা সরকারের অমনোযোগিতা কি না জানি না। সেনা মোতায়েন না হওয়ার বিষয়টি সময়মতো আমাদের জানানো উচিত ছিল। এতে আমরাও সময়মতো র‌্যাব মোতায়েন করতে পারতাম।’
এতে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সরকার আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। তাই সেনা মোতায়েন না করার বিষয়টি আমাদের জানানো উচিত ছিল। তবুও সরকার কেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারল না, কার গাফিলতি ছিল, সেটা আমাদের জানতে হবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাইব। কারণ সাংবিধানিকভাবে সরকার সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আসলে যার যা দায়িত্ব, তা যদি সে সঠিকভাবে পালন না করে, তাতে ইসির কী করার আছে? ইসিকে একটি নির্বাচনের জন্য অনেকের ওপর নির্ভর করতে হয়।’
শামসুল হুদা বলেন, ‘সরকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় কিছু জটিল ও সংবেদনশীল ঘটনার উদ্ভব হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য আমাদের কিছু প্ল্যান ছিল। আজ (শুক্রবার) সকালে নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনীর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী যায়নি। এ জন্য আমরা তাদের লিখিত চিঠি দিয়েছিলাম। এখন আমরা ধরে নিচ্ছি, সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না। কারণ, সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো নির্দেশ দেয়নি।’
সিইসি বলেন, ‘এর বিকল্প হিসেবে আমাদের কাছে দুটি পন্থা আছে। এক, নির্বাচন স্থগিত করা। দুই, নির্বাচনে অতিরিক্ত র‌্যাব মোতায়েন করা। কিন্তু নির্বাচন স্থগিত করতে গেলে কিছু সমস্যা আছে। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ২ নভেম্বর ১৮০ দিন শেষ হচ্ছে। সুতরাং এখন নির্বাচন স্থগিত করলে আইনি জটিলতা দেখা দেবে। তা ছাড়া ভোটার এবং প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে। এর ফল ভালো না-ও হতে পারে।’
তবে সেনা মোতায়েন ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন সিইসি। বলেন, ‘সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত শুরুতে আমাদের ছিল না। পরে প্রার্থী এবং ভোটারদের দাবি এবং জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিই। তবে এখনো আমরা মনে করি, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ র‌্যাব মোতায়েন করা হবে। এর বেশিও মোতায়েন হতে পারে। এতে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে। এ বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রসঙ্গ: নির্বাচনে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে মেয়র পদপ্রার্থী শামীম ওসমান যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সে সম্পর্কে সিইসি শামসুল হুদা বলেন, একজন প্রার্থী প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, জঙ্গি হামলা হতে পারে। তাঁর এই প্রচারণা ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এতে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। প্রার্থী তাঁর অভিযোগ প্রমাণ না করতে পারলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী তাঁর প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।
একজন প্রার্থী সেনা মোতায়েন না হলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। এমন হলে কমিশন কী করবে, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অবশ্যই বিষয়টি আমলে নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.