বর্ণাঢ্য জীবনঃ তৃতীয় বিশ্বের কোনো উন্নয়নশীল দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন নিঃসন্দেহে দুরূহ কাজ।

তৃতীয় বিশ্বের কোনো উন্নয়নশীল দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন নিঃসন্দেহে দুরূহ কাজ। একদিকে সম্পদের সীমাবদ্ধতা, অন্যদিকে সীমাহীন চাহিদা। সরকারের অর্থমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সব সময়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকে-নানাভাবে তাকে সমালোচিত হতে হয়, প্রশংসা করে খুব কম লোক। ব্যতিক্রমী এম সাইফুর রহমান।

শান্ত, বিচক্ষণ, ধীশক্তিসম্পন্ন এম সাইফুর রহমানের প্রায় ৫০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা বিশেষত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান, রাসায়নিক, তেল-গ্যাস উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকায় তার জন্য অর্থমন্ত্রীর কঠিন দায়িত্ব পালন অনেকটাই সহজ হয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার দু'দফায় সরকারের ১২ বার রাষ্ট্রীয় বাজেট ঘোষণার বিরল গৌরবের অধিকারী সাইফুর রহমানের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সমাজের সর্বস্তরে বিস্তৃত। তদানীন্তন সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বাহারমর্দান গ্রামে এম সাইফুর রহমানের জন্ম হয় ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্ধের ৬ অক্টোবর। বাবার নাম মোহাম্মদ আবদুল বাছির, মায়ের নাম তালেবুন নেসা। সাইফুর রহমান ছিলেন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মাত্র ছ'বছর বয়সের সময় তার বাবা মারা যান। চাচা মোহাম্মদ সফি তার অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এম সাইফুর রহমানের বাল্যশিক্ষার সূচনা হয় গ্রামেরই বাহারমর্দান মক্তবে। পরবর্তী সময়ে এ মক্তব বাহারমর্দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। গ্রামের শান্ত পরিবেশে অন্যান্য সাধারণ শিশুর মতোই বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। এ স্কুলে দু'বছর পড়ার পর তিনি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি সিলেটে মুরারী চাঁদ কলেজে (এমসি কলেজ) আইকমে ভর্তি হন। এ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন এসএম হলের আবাসিক ছাত্র। সাতচল্লিশে দেশ বিভাগের পর এ অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছিল, বিশেষত মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিতজনের মাঝে। ক'বছর যেতে না যেতেই সপষ্ট হয়ে উঠতে থাকে পূর্ববাংলার উন্নয়নে পশ্চিমা নেতাদের বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই। সে সময় আরও সপষ্ট হয়ে উঠতে থাকে, বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রাখতে পশ্চিমা রাজনৈতিক শক্তি তৎপর। এ প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠতে থাকে, আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এ দাবি বাস্তবায়নের জন্য তদানীন্তন ছাত্রসমাজ বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। দলীয় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও সাইফুর রহমান বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার চলমান আন্দোলনের বিষয়ে সচেতন ছিলেন। ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রনেতারা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিলে সাইফুর রহমান তাতে অংশগ্রহণ করেন এবং পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন। তৎকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল-যারা মুচলেকা প্রদান করবে, তাদের মুক্তি দেয়া হবে। আত্মমর্যাদাবান সাইফুর রহমান বিশ্বাস করতেন ভাষা আন্দোলন বাঙালির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রাম এবং এখানে অংশ নিয়ে তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তিনি মুচলেকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি স্বাভাবিক নিয়মে জেল থেকে মুক্তি পান। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য তিনি ২০০৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এম সাইফুর রহমান ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। সেকালে মেধাবী ছাত্রদের ন্যায় তারও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অভিলাষ ছিল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি আমলাতন্ত্রে যোগ দেয়া। ভাষা আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি সিএসপি হওয়ার বাসনা ত্যাগ করেন। তিনি ব্যারিষ্টারি পড়ার জন্য লন্ডন চলে যান। কিন্তু লন্ডন পৌঁছে তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনষ্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। সাইফুর রহমান দেশে ফিরে এসে পাকিস্তান অক্সিজেন কোম্পানিতে যোগদান করেন। কিন্তু চাকরির প্রতি তার মোটেই মোহ ছিল না। প্রায় দু'বছর চাকরি করার পর তিনি এবং তার আরও দু'বন্ধু মিলে রহমান রহমান হক নামে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম গড়ে তোলেন। তিনি ওই ফার্মের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠান কালক্রমে কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিত্বকারী দেশের অন্যতম বৃহত্তম চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মে পরিণত হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার দক্ষ পেশাজীবীর সমন্বয়ে কেবিনেট গঠন করেন। তার অনুরোধে এম সাইফুর রহমান ১৯৭৬ সালে বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পারন করেন। তিনি ২৫ এপ্রিল ১৯৮০ থেকে ১১ জানুয়ারি ১৯৮২ পর্যন্ত তদানীন্তন সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত হিসেবে তিনি ১৯৭৯ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, সাইফুর রহমান এর আগে ১৯৬৯ এবং ১৯৭২ সালে জাতীয় বেতন কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় বেতন কমিশনের কর্তব্য পালনকালে তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিচিত হন এবং তার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে সম্যক ধারণা সৃষ্টি হয়। তিনি ১৯৭৪ সালে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ওয়েজ কমিশনেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হলে সাইফুর রহমান ২০ মার্চ ১৯৯১ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্বকালে সরকারের অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু, রাজস্ব ও মুদ্রানীতিসহ বাণিজ্য নীতিমালার সংস্কার, ব্যক্তি খাতের উন্নয়নসহ আর্থিক খাতগুলোর বহু আকাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এম সাইফুর রহমান ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন এবং ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ (সদর) সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুটি আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ের প্রেক্ষিতে সাইফুর রহমান ২০০১ সালে মৌলভীবাজার-৩ আসনটি ছেড়ে দেন এবং ওই আসনের উপনির্বাচনে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র নাসের রহমান জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব কমিটি, কার্যউপদেষ্টা কমিটি, অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ দু'প্রতিষ্ঠানের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত মাদ্রিদ সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। তিনি ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ সময়ে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচি অনুমোদনে নিয়োজিত সর্বোচ্চ সরকারি সংস্থা জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি, একনেকের বিকল্প চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অর্থনীতি ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটি, জাতীয় পরিসংখ্যান কাউন্সিল, বয়স্ক ভাতা, পেনশন সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটি, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটি, প্রশাসনিক সংস্কার ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮০-৮২, ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি আইডিবি এবং ইফাদের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ইইসি, এসকাপ, কমনওয়েলথ, ইফাদ, আঙ্কটার্ড, বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইতালি, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, কানাডা, বেলজিয়াম, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অষ্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সংলাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বসনিয়া বিষয়ক ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এবং একই বছরের অক্টোবরে কার্টাহেনা, কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এম সাইফুর রহমান কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে ১৯৯৮ সালের জুনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সংসদের বিরোধী দলের অধিকার ও দায়িত্ব বিষয়ক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। জার্মানির বার্লিনে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ১০২তম আইপিইউ সম্মেলনে সাইফুর রহমান যোগদান করেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার ওই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন, মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সম্মেলন এবং লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনসহ আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোয় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। সাইফুর রহমান ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বাংলাদেশে গরষষবহহরঁস উবাবষড়ঢ়সবহঃ-র বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের ওপর বক্তব্যে তুলে ধরেন যে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে রয়েছে। তিনি একই সময়ে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ২০০৬ সালের ৮ জুন মহান জাতীয় সংসদে তিনি তার দ্বাদশ বাজেট উপস্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মহান সংসদে জীবনের দ্বাদশ বাজেট উপস্থাপনকালীন তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান, 'আসুন, আমরা সবাই মিলে অমিত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাই এবং আমাদের এই প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠা করি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ। এই অভিযাত্রায় মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সহায় হোন।' এম সাইফুর রহমান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই। তার সত্রীর নাম বেগম দুররে সামাদ রহমান। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ২০০৩ সালে তার সত্রী ইন্তেকাল করেন। সাইফুর রহমানের হবি হলো অবসর সময়ে উদ্দীপনামূলক রবীন্দ্র ও নজরুল সঙ্গীত শোনা। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সৎ এবং কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী সাইফুর রহমান বাংলাদেশের একজন কৃতী সন্তান। বৃহত্তর সিলেট জেলার সর্বস্তরের মানুষের তিনি সুখ-দুঃখের সাথী। সিলেট জেলার মানুষই তাকে বার বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। সাইফুর রহমানের কথায় : 'আমার বাল্য ও কর্মজীবনের সাথে জড়িয়ে আছে বাহারমর্দান, মৌলভীবাজার, সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লন্ডন, করাচির মধুর স্মৃতি। ব্যক্তিগত ও সরকারি কাজে ছুটে বেড়িয়েছি বিরামহীনভাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। প্রায় সব আন্তর্জাতিক ফোরামে আমি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের অর্জিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছি। দেশের অভ্যন্তরে মানুষকে উজ্জীবিত করেছি কর্মযোগে। নৈতিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তিশীল একটা সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছি। জীবনের পরম লক্ষ্য হিসেবে নৈতিকতাকে গ্রহণ করেছি। দেশের ও মানুষের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে সচেষ্ট থেকেছি। এ কাজে আমি কখনও ক্লান্তিবোধ করিনি। অনেকে আমার কাজে খুশি হয়েছে, উৎসাহিত হয়েছে। আমি আনন্দিত হয়েছি। দুঃখবোধ আমাকে গ্রাস করতে পারেনি, করতে দেইনি।'

No comments

Powered by Blogger.