একজন বারিছন বেগম by মনিরুল ইসলাম

‘ঘরের চালে টিন থাকত না। বর্ষার পানি ঠেকাতে পচন ধরা কুটোর ওপরে দিতে হতো পলিথিন। দুই বেলা দুই মুঠো ভাত জুটাতেই তখন নিরন্তর চেষ্টা করতে হতো। এখন দিন বদলেছে। পাকা বাড়ি হয়েছে। ছয় বিঘা জমিতে ফুল ও দুই বিঘা জমিতে ধানের চাষ। চাষ দেওয়ার জন্য একটি ট্রাক্টর—সবই হয়েছে।’ গল্পের মতো এই কথাগুলো যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পটুয়াপাড়ার বারিছন বেগমের। ফুল চাষই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে পেয়েছেন সিটিব্যাংক সেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার।

সম্প্রতি বারিছন বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে গোলাপ। কয়েকজন নারী বসে গোলাপফুল বাছাই করছেন। নিজের এই অবস্থায় আসার কাহিনি বলতে শুরু করেন এভাবে: ‘বছর কুড়ি আগের কথা। স্বামী (লোকমান হোসেন) ভ্যান চালাতেন। ঝুপড়ি একখান ঘরে তিন মাইয়ে, দুই ছাবাল নিয়ে কষ্টে-তিষ্টে থাকতি হইত। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ঘরের চালে কুটো দেওয়ার টাকা থ্যাকত না। পলিথিন দিয়ে বর্ষার পানি ঠেকাতে হতো।’
ফুল চাষের অন্যতম প্রবর্তক শের আলীর কাছ থেকে রজনীগন্ধার (ভুট্টা) বীজ এনে ১০ কাঠা জমি ইজারা নিয়ে চাষ শুরু করেন বারিছন। পরের বছর লাভের টাকা দিয়ে এক বিঘা জমি হয়। তার পরের বছর তিন বিঘা। তাঁর ভাষায়: ‘সেই থেকে লাইন পাইয়ে গেলাম। আর অভাব থাকল না।’
বারিছন বেগম জানান, পুরস্কারের তিন লাখ টাকা ও ফুল চাষের লাভের টাকা দিয়ে পাকা বাড়ি করেছেন। চার বিঘা জমি ও ট্রাক্টর কিনেছেন। এখন ছয় বিঘা জমিতে ফুল ও দুই বিঘাতে ধানের চাষ করছেন।

No comments

Powered by Blogger.