সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে আলোচনায় উইকেট by তারেক মাহমুদ

ট্টগ্রামে ‘টক অব দ্য টেস্ট’ ছিল বৃষ্টি, ঢাকায় উইকেট। চট্টগ্রাম টেস্টের সময় প্রতিদিনের কৌতূহলের তালিকায় ‘আকাশ কেমন থাকবে’ প্রশ্নটা বড় করে ছিল। আজ শুরু ঢাকা টেস্টের আগে প্রশ্ন, ‘উইকেট কেমন হবে?’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল মাঠের অনেক দূর দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষটিও ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখার চেষ্টা করেছে উইকেটের চেহারা। অনুশীলনের সময় মাঠে এলে নির্বাচকেরা সাধারণত নেটের আশপাশেই বেশি সময় কাটান। কাল তাঁদের জটলা দেখা গেল মাঠের মাঝখানে। উইকেট দেখলেন। কিউরেটরের কাছ থেকে কী সব শুনলেনও।

নাকি শোনালেন, উইকেটের রেসিপি কেমন হওয়া উচিত? ওয়ানডের তুলনায় বাউন্স একটু কম থাকবে, তৃতীয় দিন থেকে বল ঘুরবে, রান করা কঠিন হবে না—রেসিপি অনুযায়ী দ্বিতীয় টেস্টের উইকেটের চরিত্র এমনই হওয়া উচিত। তবে হবে কি না, সে নিশ্চয়তা সম্ভবত কিউরেটরও দেবেন না। মিরপুরের উইকেট যে ক্রিকেটের চেয়েও অনিশ্চিত একটা ব্যাপার! ঢাকা টেস্টের জন্য প্রস্তুত তিন নম্বর উইকেটের কথাই ধরুন। বিশ্বকাপে এই উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। আবার এই উইকেটেই তারা এবার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
কাল দুই অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরেফিরে উইকেট-সংক্রান্ত আলোচনা। কেমন হবে উইকেট? এ রকম হলে কী হবে, ও রকম হলেই বা কী...? ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির ধারণা, দ্বিতীয় টেস্টে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ঘূর্ণি উইকেট। সেজন্য যথাযথ প্রস্তুতি সারা হয়েছে। কিন্তু মুশফিকুর রহিম আর তাঁর দল ঘর পোড়া গরু। তাঁরা জানেন, মিরপুরের উইকেটের আরেক নাম মরীচিকা—ধরা দেয় তো দেয় না! অতীতে এই উইকেটকে ভুল বোঝার ঘটনা কম ঘটেনি। কিংবা উইকেটই পাল্টে ফেলেছিল ভোল। মিরপুরের উইকেট নিয়ে এবার তাই অতিসাবধানী বাংলাদেশ অধিনায়ক। উইকেট যেমন ইচ্ছা তেমন হোক, মুশফিক চান সবাই যেন সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটায়। তাতে ‘বিদ্রোহী’ উইকেটেও আশাহত হওয়ার ভয় থাকবে না।
কাউকে যখন বিশ্বাসই করা হয় না, বিশ্বাস ভঙ্গের ভয়ও থাকে না। এদিক দিয়ে টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশই এগিয়ে। স্যামি উইকেটকে ‘টার্নিং’ ধরে বসে আছেন। শেষ পর্যন্ত যদি দেখেন উল্টো, হিসেবে বড় ওলটপালট ঘটে যেতে পারে। অন্যদিকে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে মুশফিক ও তাঁর দল সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত। খেলতে নামার আগেই উইকেট নিয়ে ভেবে মরছেন না। ‘যৎ কালে তৎ বিবেচনা’র নীতি তাঁকে সাবধানী রাখছে। তবে একটা বিষয়ে কালই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রাম টেস্টের দলটাই খেলছে ঢাকায়।
ভালো কথা, ‘উইকেট, উইকেট’ করে এই টেস্টের আসল পরিচয়টাই হারিয়ে যাচ্ছে! চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হওয়ায় ঢাকার শেষ টেস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিজ নির্ধারণী। এই টেস্ট যে জিতবে, সিরিজ তাদেরই। শক্তিতে এগিয়ে থাকার সুবাদে সিরিজ জয়ের দায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশি। মুশফিক সুযোগ পেয়ে একটা চাপ তুলে দিতে চাচ্ছেন ড্যারেন স্যামির কাঁধে। ম্যাচটা নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই! বাংলাদেশকে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ধরে স্যামি সেটা মানছেন না। তা ছাড়া তাঁর হাতে আছে টেস্ট জয়ের সহজ এক সমীকরণ—ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করতে হবে।
ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের মুখে এই কথাটাই বোধ হয় বেশি শোনা যায়—ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই ভালো খেলতে হবে। কিন্তু ভালোর শেষ কোথায়? আর নিজেরা ভালো খেললেই কি শুধু হবে? প্রতিপক্ষ যদি তার চেয়েও ভালো খেলে! বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামার আগে তো এই শঙ্কা অবশ্যই থাকা উচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বড় দলগুলোর মধ্যে তাদের বিপক্ষেই বাংলাদেশের টেস্ট-সাফল্য বেশি। ২০০৯-এর সিরিজের পর সাফল্যের হার প্রায় সমান সমান। দুই দলের সাত টেস্টের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ৩টি, বাংলাদেশ ২টি। ড্র হয়েছে বাকি দুই টেস্ট।
জয়-পরাজয়ের হিসাব এবার সমান হয়ে গেলে নিজেকে হতভাগা ভাবতে পারেন মাহমুদউল্লাহ। টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া প্রথম জয়ের বড় এক অংশীদার হয়েও ভাসতে পারবেন না আরেকটি সিরিজ জয়ের গৌরবে! ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টটা মাহমুদউল্লাহরও ছিল অভিষেক টেস্ট। ব্যাট হাতে করেছিলেন মাত্র ৯ ও ৮ রান। তবে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে টেস্টটাকে করে রেখেছিলেন স্মরণীয়।
ডেঙ্গু জ্বর থেকে ফিরে নেট প্র্যাকটিসে আঙুলে চোট। সহ-অধিনায়ক হওয়ার পর পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই তাই দর্শক মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে কাছের দর্শকই বোধহয়। তাঁর হাত ধরে না হোক, তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যও কি আসতে পারে না আরেকটি আনন্দের উপলক্ষ!

No comments

Powered by Blogger.