সংবাদ সম্মেলনে রজিত মিত্তারঃ ট্রানজিটে বেশি লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশই

ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রজিত মিত্তার বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে যাতে সব পক্ষ লাভবান হয়, সেই বিবেচনায় ট্রানজিটের মাশুল নির্ধারণ করতে হবে। স্বল্প মেয়াদে পরিবর্তন করা হলে মাশুলের হার বেশি—এই যুক্তি দিয়ে ব্যবসায়ীরা ট্রানজিট ব্যবহার করবেন না। ভারতের শীর্ষ এই কূটনীতিক ট্রানজিটের মাশুলকে এই সময়ের ‘আলোচিত বিষয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের যানবাহনের মাধ্যমে ভারতে পণ্য পরিবহন হচ্ছে।

আর জাহাজে যেসব পণ্য আসছে, তার ৯৫ শতাংশই হচ্ছে বাংলাদেশের। অথচ সবাই শুধু মাশুলের বিষয়টিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ভারতীয় হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রজিত মিত্তার এই মন্তব্য করেন। আগামী ১ নভেম্বর দায়িত্ব পালন শেষে তাঁর দিল্লি ফেরা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এক ঘণ্টার আলাপচারিতায় বাংলাদেশে তাঁর দুই বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ও দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে গুরুত্ব পেয়েছে ট্রানজিট আর তিস্তার পানিচুক্তি।
রজিত মিত্তার এ সময় বলেন, ‘আমরা সব সময় বলেছি, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী মাশুল দেব। ইতিমধ্যে নৌ প্রটোকলের আওতায় যেসব চার্জ দেওয়ার কথা, আমরা তা দিচ্ছি। তবে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে ট্রানজিট চালু হলে নতুন করে মাশুল নির্ধারণ করা হবে। তখন এ নিয়ে নিশ্চয় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা কিছু হার দাঁড়াবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি সই না হলেও বিষয়টিকে বড় করে দেখতে নারাজ বাঙালি কূটনীতিক রজিত মিত্তার। তিনি বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য হতাশার। তাই বলে একটি প্রসঙ্গ সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে, এমনটা সমীচীন নয়। আমি আশাবাদী, আমরা কিছুটা সময় নিয়ে এ বিষয়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।
চুক্তি সইয়ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির প্রকল্পগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘এতে যথেষ্ট দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে। এই অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট। এ পর্যন্ত আমরা ৭৫ কোটি ডলারের প্রকল্প চূড়ান্ত করেছি। দুই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর জন্য কার্যাদেশের চুক্তি সই হয়েছে।’
বাংলাদেশ ও ভারতে বিশেষ কোনো দল ক্ষমতায় এলে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে গুণগত পরিবর্তন ঘটে। আগামীতে সরকার পরিবর্তন হলে সম্পর্কের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে কি না—এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি রজিত মিত্তার। তবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্কের বিশেষ উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের এই মনোভাবের কারণে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়াটা আমাদের জন্য সহজ হয়েছে।’
আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অনুপ চেটিয়ার ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব ও ফিরিয়ে নিতে ভারতের আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে রজিত মিত্তার বলেন, ‘আমি নির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যক্তির কথা বলব না। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সহযোগিতা রয়েছে। আগামীতে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।’

No comments

Powered by Blogger.