রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটঃ ইজারা হওয়া ১৩টিই পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা by সেলিম জাহিদ

রাজধানীতে এবার কোরবানির পশুর হাট বসবে ১৬টি। এর মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ১৩টির ইজারা সম্পন্ন করেছে। এর সবগুলোই পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তবে এর মধ্যে অন্তত চারটি হাটের ইজারা যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের দলীয় পরিচয় গৌণ। এই ক্ষেত্রে কিছুটা আনকোরা লোক তাঁরা। কৌশলগত কারণে তাঁদের সামনে রেখে দলীয় ব্যক্তিরাই এগুলোর ইজারা পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ১৬টির মধ্যে বাকি তিনটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাট বসে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা খেলার মাঠে। তিন কোটি ২৭ লাখ টাকায় ওই হাটের ইজারা পেয়েছেন ডিসিসির ৭১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ রিপন।
আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গায় যে হাটটি বসবে সেটির ইজারা পেয়েছেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ হাজি। তিনি ১৯ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ আছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, সাভারে নিজের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন তাঁকে অপহরণ করেছে।
গোলাপবাগ মাঠসংলগ্ন আদর্শ স্কুল মাঠের হাটটির ইজারা পেয়েছেন ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। তালতলা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশের মাঠের ইজারা পেয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সদস্য মো. সাবুল বাশার। তিনি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংসদ ইলিয়াছ মোল্লার মেয়ের ননদের জামাই।
মেরাদিয়া বাজারের হাটটির ইজারা পেয়েছেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেল। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের ইজারা পেয়েছেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মীর শহিদুল আলম। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা শফিক উদ্দিন। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল লতিফ। উত্তরার আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের ইজারা পান আওয়ামী লীগের নেতা মনোয়ার উল ইসলাম।
হাজারীবাগ মাঠের ইজারা পেয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবসংলগ্ন বালুর মাঠের ইজারা পেয়েছেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি শহিদউদ্দিন সেলিম। বনানী-কাকলী (রেলওয়েসংলগ্ন খালি জায়গা) মো. আক্তারুজ্জামান আক্তার। ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের (নতুন) ইজারা পেয়েছেন ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান দোলন।
সূত্রগুলো জানায়, স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করে তাঁরা দরপত্রে অংশ নেন এবং সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সাংসদদের ভূমিকা ছিল। এই সমঝোতার কারণেই ১৩টি হাটের ইজারার জন্য ৬৫৮টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৫২টি। বেশির ভাগ দরপত্র পাতানো এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. গোলাম রহমান মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাইরে কী হয়েছে আমরা জানি না। তবে ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করেছি আমরা।’
আরও যে তিনটি পশুর হাট ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে সেগুলো হচ্ছে: পুরান ঢাকায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানসংলগ্ন মাঠ ও খিলক্ষেত বনরূপা মাঠ। বনরূপা মাঠের দরপত্র ৩০ অক্টোবর নিষ্পত্তি করা হবে। এর সর্বোচ্চ ইজারা মূল্য উঠেছে ৩৮ লাখ টাকা।
রাজস্ব আয় বেড়েছে: গত বছর ডিসিসি ১২টি পশুর হাটের ইজারা থেকে চার কোটি ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা রাজস্ব আয় করে। এবার ওই ১২টি হাট থেকে পেয়েছে সাত কোটি ২৫ লাখ ছয় হাজার এক টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ। সব মিলিয়ে ১৩টি হাট থেকে এবার রাজস্ব আয় হয় সাত কোটি ৩২ লাখ ১৭ হাজার ৫০১ টাকা।
অবৈধ হাটের উপদ্রব: অবৈধ হাট নিয়ে অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিভিন্ন এলাকায় গোলযোগের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ইতিমধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও কলোনি বাজার, দক্ষিণখান ও বারিধারা জে ব্লকের নূরেরচালায় অবৈধ হাট বসার খবর পাওয়া গেছে।
ডিসিসি সূত্র জানায়, অনুমোদনহীন পশুর হাটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য ডিসিসির দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করা হয়েছে। ডিসিসির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকেও আলাদা ভিজিলেন্স টিম এ বিষয়ে নজরদারি করবে।
ডিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ পশুর হাটের খবর পাওয়ামাত্র তা উচ্ছেদ করা হবে। এর জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করা হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.