নেই অবসর by কামরুজ্জামান

কালে বান্দরবান থেকে ফিরেছেন। দুপুর থেকে কাজ শুরু করেছেন। কাজ আর কাজ। সজলের কাছে জানতে চাইলাম, বছরের কত দিন কাজ করেন?
‘মনে তো হয় দুই ঈদের তিন দিন তিন দিন মোট ছয় দিন বাদে, জ্বরটর না হলে বছরের বাকি দিনগুলো টানা কাজ করি।’ সজলের সরল স্বীকারোক্তি। ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, এত এত কাজ যে করি, তা থেকে কী পাচ্ছি?’
নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিলেন। ‘বিজয় সরণির সিগন্যালে দাঁড়ালে কতগুলো পিচ্চি আমাকে দেখে চকলেট আর ফুল দিল। ওরা কেউ পয়সা নিল না। বলল, “ভাইয়া, আপনার নাটক দেখছি। খুব ভালা লাগে।” ওদের কথা শুনে চোখের পানি আটকে রাখতেও কষ্ট হয়। এত এত কাজ করার পরও ক্লান্তি আসে না ওদের কথা মনে হলে।’ বলছিলেন সজল।

গেল ঈদে টিভি চ্যানেলগুলো সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করেছে। এ সময় দেখা গেছে, সব কটি টিভি চ্যানেলে প্রতিদিনই সজলের কোনো না কোনো নাটক প্রচারিত হচ্ছে। এত কাজ সজল কীভাবে করেন?
প্রশ্ন শুনে সজল হাসেন। ‘আমি সারা বছর খণ্ড নাটকগুলোতেই কাজ করি। ধারাবাহিক নাটকে কাজ করি না। এই নাটকগুলো ঈদের সময় বা অন্যান্য বিশেষ দিনে প্রচারিত হয়। এ ছাড়া এক ঘণ্টার নাটক তো সারা বছর প্রচারিত হচ্ছেই। আসলে, তিন দিন লাগে একটি এক ঘণ্টার নাটকে কাজ করতে। এই নাটকগুলো করতে পারি একটি কারণে, কাজ করার আগে আমি নাটকের গল্পটা জেনে নিতে পারি।তাই অনেক বেশি মনোযোগী হতে পারছি, যেটা ধারাবাহিকে সম্ভব হয় না।’
আসছে ঈদেও কী অনেক অনেক নাটকে দেখা যাবে সজলকে?
অট্টহাসি সজলের কণ্ঠে। ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি, এবার ঈদে যেন বেশি কাজ দেখা না যায়। কিন্তু হিসাব করে দেখলাম, এবারও অসংখ্য নাটকে কাজ করা হয়ে গেছে। ’
কাজ যত বেশি হবে, নাটকের মান তত কমবে। বিষয়টি মেনে নিলেন সজল। ‘চেষ্টা করি মানটা ভালো রাখার; তার পরও হয়তো কয়েকটি নাটকের কাজ ভালো হয় না। তখন খুবই কষ্ট পাই।’ বললেন তিনি।
বিনোদন-ভুবনে সজল প্রায় ১০ ধরে কাজ করছেন। বর্তমানে বলা হয়, টেলিভিশনে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। নতুন কেউ আসছেনও না। এর ফলে বিষয়টি একচেটিয়া হয়ে যাচ্ছে কি না?
সজল বললেন, ‘আসলে, এখানে আধিপত্যের কিছুই নেই। আমি প্রেমের নাটকে কাজ করছি। অনেক দিন থেকেই কাজটা করছি। এর ফলে আবার অনেক সময় কিন্তু সব নাটকে একই রকম কাজ হয়ে যাচ্ছে। এটা একটা নেতিবাচক দিক। আবার যদি কাজটা না করি, তখন নির্মাতারা বলবেন, সজল বিপদে ফেলে দিচ্ছে। উভয়সংকটে পড়ে যেতে হচ্ছে।’
তাঁর আজকের এই সাফল্যের পেছনে পরিবারই অনেকটা কৃতিত্বের দাবিদার—এ কথা জোরেশোরেই বলেন সজল। ‘রাত তিনটা-চারটার সময় বাসায় ফেরার পরও মা বা বোন যে জেগে থাকে এবং তারা আমাকে খাইয়ে-দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, এই যে সহযোগিতা—এটা কিন্তু অনেক বড় একটা ব্যাপার। এটুকু সমর্থন না থাকলে আমি হয়তো এতটা ব্যস্ত থাকতে পারতাম না।’
বাড়ির লোক মেনে নিচ্ছে, কিন্তু বাইরের মানুষটি যখন বাড়িতে ঢুকবেন, তিনি কি মানবেন?
সজল কিছু একটা চিন্তা করেন। বললেন, ‘যখন আসবে, তখন আমি হয়তো এত বেশি কাজ করতেও পারব না। তা ছাড়া যত দিন না আসে, তত দিন তো কাজটা করে যেতে কোনো পিছুটান নেই। হা...হা... হা...।’
১০ বছর ধরে সজল কাজ করছেন, কিন্তু কাউকে জড়িয়ে প্রেম-বিরহের কথা শোনা যায়নি। রহস্য কী?
বাবার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে সজলের বন্ধুত্ব হয়েছে। আস্তে আস্তে ভালো লাগা এবং ভালোবাসা। মেয়ে বর্তমানে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন। পারিবারিকভাবেই সব এগোচ্ছে।সজল জানালেন, ২০১৩ সালে বিয়ে করার চিন্তাভাবনা আছে।
জানতে চাইলাম, তিনি কি আপনার অভিনয় দেখেন?
‘দেখে। তবে খুব বেশি দেখে না।’
সমালোচনা করেন?
‘কখনো কখনো। যেটা বলে, সেটা মন থেকেই বলে।’
বেশি বেশি কাজ করেন, এটা কীভাবে দেখেন?
ভালোভাবে দেখার কারণ নেই। তবে মানিয়ে নিতে হয় আর কি?’
কে কাকে বেশি নিয়ন্ত্রণ করেন?
এবার সজল যেন একটু ভাবনায় প্রড়ন। কিছুটা সময় ভেবে নিয়ে বললেন, এর মধ্যেই ঝগড়া হয়েছে। ‘আসলে, সময় সময় ও আমাকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে, আবার আমি হয়তো ওর ওপর কখনো বেশি অধিকার দেখাতে যাই।’
সজল তাঁর মনের মানুষ নিয়ে বেশি কিছু বলবেন না বলবেন না করে দু-চারটি কথা বললেও নাম বলতে নারাজ। কারণ, হবু স্ত্রী এখনই গণমাধ্যমের কাছে সংবাদ হয়ে আসতে চান না।
আবার ফিরে আসি সজলের কাজের প্রসঙ্গে।
বর্তমানে সজল ব্যস্ত আবুল হায়াতের ঈদের নাটকের কাজ নিয়ে।
সামনে তিনি ঈদের দুটি বিশেষ ধারাবাহিক নাটকে কাজ করবেন। এ জন্য নিজের গেটআপ-মেকআপে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন।
তিনি বললেন, ‘একেক দিন কাজ করি আর ভাবি, কবে ঈদ আসবে আর ঈদের তিন দিন টানা ঘুমাব।’
ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে কী যে সুখ, তা শুধু সজলই ভালো বলতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.