স্টিভেন সোডারবার্গের সেরা পাঁচ by ইভা খান

র মাত্র তিনটি ছবি_তার পরই অবসর। বহু ব্যবসাসফল ছবির চিত্রপরিচালক স্টিভেন সোডারবার্গের এই অনন্য রেজা করিম ঘোষণায় তাঁর ভক্তরা মর্মাহত_এমনটাই স্বাভাবিক। বলেছেন, নতুনদের সুযোগ করে দিয়ে তিনি এবার সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করতে চান চিত্রকলা চর্চায়। শিল্পের নানা অলিগলিতে বিচরণে যাঁর সুখ, চিত্রকলায় বুঁদ হয়ে থাকার নেশা তিনি ফেরাবেন কী করে। তাঁর যেমনটা মন চায়, সেটা তিনি করুন। তবে আমরা আশায় থাকি, আবারও তিনি ছবি বানাবেন। তাঁর ছবির প্রতিটি দৃশ্য হয়ে উঠবে একেকটি পেইন্টিং।

স্টিভেন সোডারবার্গ ছবিতে তাঁর চরিত্রগুলো নিয়ে খেলেন। চরিত্রের চেয়েও বড় করে তোলেন মানবিকতা আর মানবীয় অনুভূতিকে। সোডারবার্গের ছবির ধরন এমনই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে কমেডি, গাম্ভীর্যপূর্ণ কিংবা নিছক কল্পনানির্ভর_সব ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন সৃজনশীলতার স্বাক্ষর। অবশ্য বিনয়ের সঙ্গে এ কথা বলেন যে সব সময়ই তিনি চেষ্টা করেছেন এমন কিছু তৈরি করতে, যাতে দর্শক আনন্দ পান আর কিছুটা হলেও তাঁকে মূল্যায়ন করেন।

এক প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। যার সংক্রমণের পর মানুষ বেঁচে থাকে বড়জোর তিন দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে এর প্রতিকারের জন্য, তার চেয়েও বেশি চেষ্টা হু হু করে ছড়িয়ে পড়া মানুষের আতঙ্ক হ্রাসের। এমন এক গল্প নিয়ে এ মাসেই মুক্তি পেয়েছে সোডারবার্গের সর্বশেষ ছবি 'কনটেজন'। এবার দেখা যাক তাঁর সেরা পাঁচটি কাজ।

ট্রাফিক (২০০০) : আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসার ওপর নির্মিত এ ছবির জন্যই সেরা পরিচালকের অস্কার জেতেন স্টিভেন সোডারবার্গ। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র রূপায়ণসহ ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে নেয় ট্রাফিক। সেবার সোডারবার্গের দারুণ সময়। একই বছরে দু-দুটো ছবি মুক্তি আর দুটোই মনোনীত অস্কারের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। হেরে যায় এরিন ব্রোকোভিচ।
আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসা এবং এর সঙ্গে জড়িত এর সরবরাহকারী, ব্যবহারকারী, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ_এ রকম নানা দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মিত হয়েছে ছবিটি।

আউট অব সাইট (১৯৯৮) : এলমোর লিওনার্দোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। ব্যাংক-ডাকাত জর্জ ক্লুনি আর ফেডারেল মার্শাল জেনিফার লোপেজ। জে লো কি আসলেই ক্লুনিকে ভালোবাসে? নাকি ছলনার আশ্রয়ে অপরাধীকে আটক করার ষড়যন্ত্রজাল বোনে? ছবির রহস্যটা এখানেই_ডেট্রয়েটের হোটেলের কামরায় সেই প্রেমের দৃশ্যটি যাঁরা দেখেছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁরা জে লোকে নিষ্ঠুর রমণী ছাড়া আর কী বলবেন? তবে সোডারবার্গ কি এত নির্ঝঞ্ঝাট ছবির কাহিনী শেষ করবেন? প্রেম-রহস্য আর অ্যাকশন_এর মধ্যে কিশমিশ আর বাদামকুচির মতো পরিচালক ছড়িয়ে দিয়েছেন হাস্যরস। তাই এর স্বাদ নিতে ছবিটি দেখতে হয় বারবার।

দ্য লিমে (১৯৯৯) : জেলফেরত উইলসন লস অ্যাঞ্জেলেসে খুঁজে ফেরে তার বোন জেনির মৃত্যুরহস্য। জেনি গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে বলে প্রতিবেদন পেশ করা হয়। কিন্তু উইলসন এই মৃত্যুর পেছনে জেনির দুই বন্ধুর প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে বিশ্বাস করে। সন্দেহের তালিকায় তার মাদক ব্যবসায়ী ছেলে বন্ধুও বাদ যায় না। ষড়যন্ত্রের ধোঁয়াজাল আর একটু একটু করে গল্পের সুতা খোলা_এভাবেই ছবির কাহিনী এগোয়। কিন্তু মূল আকর্ষণ পরিচালকের উপস্থাপনের মুনশিয়ানায়। সংলাপ আর স্মৃতি রোমন্থনের ভেতর দিয়ে সোডারবার্গ দর্শকের মনে রহস্য আর অনুমান নিয়ে খেলতে থাকেন।

এরিন ব্রোকোভিচ (২০০০) : সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত আত্মজীবনীমূলক ছবি। নাম ভূমিকায় জুলিয়া রবার্টস। শিল্পবর্জ্যের কারণে শহরের পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে, আর এর প্রতিবাদে প্যাসিফিক গ্যাস ও ইলেকট্রিক কম্পানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এরিন। এ ছবির বদৌলতে জুলিয়া জিতে নেন অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও বাফটা পুরস্কার। সত্যিকার এরিনও এই ছবিতে একটি ছোট্ট চরিত্র ওয়েট্রেস জুলিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেন।

ওশান্স ইলেভেন (২০০১) : ষাটের দশকের বিখ্যাত এক ছবির রিমেক 'ওশান্স ইলেভেন'। এ পর্যন্ত এই ছবির মাধ্যমে সোডারবার্গ সর্বাধিক মুনাফা তুলে নেন। নিজ দেশে যার পরিমাণ ১৮৩ মিলিয়ন আর বাকি বিশ্বে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর হবে নাই বা কেন_হার্টথ্রব ব্র্যাডপিট, জুলিয়া রবার্টস, জর্জ ক্লুনি, ম্যাট ডেমন_এমনি খ্যাতিমানদের মেলবন্ধনে ছবিটি হয়ে উঠেছে অনন্য ও দুর্দমনীয়।
জেল থেকে বেরিয়েই পুরনো অপরাধী ড্যানি ওশান ১১ জনের একটি ছোট দল তৈরি করে, লাস ভেগাসের এক ক্যাসিনো থেকে ১৫ কোটি ডলার চুরি করার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.