টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে

রই মধ্যে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কাজ শুরু করেছেন নতুন ছবি 'টেলিভিশন'-এর। এ ছবির প্রধান তিন চরিত্রাভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, তিশা ও মোশাররফ করিমকে নিয়ে এসছিলেন কালের কণ্ঠ অফিসে। কথা বলেছেন এম এস রানার সঙ্গে। 'টেলিভিশন' ছবির অভিনয়শিল্পীদের নাকি এখন নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠেছে। সকালে ঘুম ভাঙে শুটিংয়ের টেনশন নিয়ে। এরপর তৈরি হয়ে ছুটতে হয় ছবিয়াল অফিসে। কখনো ড্রেস রিহার্সেল, কখনো মেকআপ রিহার্সেল, কখনো বিভিন্ন লোকেশনে ডামি শুটিং আর প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় ছবিয়াল অফিসে মহরত। এরপর পরদিনের পরিকল্পনা শুনে বাড়ি ফেরা।

মোশাররফ করিম তো সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলেন, 'বাসায় তো ফিরি শুধু রাতে ঘুমানোর জন্য!' এমনই রাজ্যের ব্যস্ততার মধ্যেও পূর্বনির্ধারিত সময়ে কালের কণ্ঠ অফিসে হাজির হলেন এ ছবির তিন মুখ্য অভিনেতা_চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম ও তিশা। আর তাঁদের নেতৃত্ব দিলেন ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অফিসে ঢুকেই উত্তেজিত সরয়ার ফারুকী, 'বসুন্ধরায় কেমন কাশ ফুটেছে দেখছেন? চলেন ঘুরে আসি।' বলতে দেরি, বাকিদের উঠতে দেরি নেই। গাড়ি তৈরিই ছিল। শরতের এই সময়টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা কতটা নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে তা স্বচক্ষে দেখলেন সবাই। চঞ্চল বলেন, 'ঢাকায় এমন কাশবন চিন্তা করা যায়?' তিশা বলেন, 'এত সুন্দর! এটাকে কাশবন বলছেন কেন? কাশবাগান বলা উচিত?' তিশার উচ্ছ্বাস দেখে সবাই মজা পাচ্ছিলেন। এরই ফাঁকে চলল ফটোগ্রাফি। আর এটা-সেটা নানা কথা।
'টেলিভিশন' ছবির কাজ চলছে। অন্য দশটা ছবির সঙ্গে এ ছবির কার্যত কোনো পার্থক্য কী লক্ষ করছেন? চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'আমাদের দেশে সাধারণত শুটিংয়ের আগে রিহার্সেল হয় না বললেই চলে। এ ছবির আগে প্রচুর রিহার্সেল করতে হচ্ছে। কস্টিউম, মেকআপ, দৃশ্য, সংলাপ, ভাষা থেকে শুরু করে প্রতিটি ব্যাপারেই আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ফলে আমাদের বিশ্বাস, পরিকল্পনামাফিক একটি পরিপূর্ণ চলচ্চিত্র হবে এটি।'
এ ছবির ঘটনা বাংলাদেশের নোয়াখালী অঞ্চলের একটি গ্রামকে ঘিরে। ফলে সবাই প্রতিনিয়ত নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা প্র্যাকটিস করছেন। কেবল মহরতেই নয়, বাড়িঘরে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায়ও সবাই কথা বলছেন নোয়াখালীর ভাষায়। চঞ্চল বলেন, 'আগে কখনো নোয়াখালীর ভাষায় কাজ করিনি। ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে প্র্যাকটিস করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় অল্প দিনেই নোয়াখালীর ভাষাটা পুরোপুরি আয়ত্তে চলে আসবে।' তিশা বলেন, 'দিন-রাত তো নোয়াখালীর ভাষায়ই কথা বলতে হচ্ছে। এ ছবির পরিচালক আমার ঘরের লোক হওয়ায় আমি ঘরে বসেও রেহাই পাচ্ছি না।' মোশাররফ বলেন, 'সব সময় হয় কী, শুটিংয়ে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নাটকের সংলাপ বলি। আর এখন নাটকের কাজ করতে গিয়ে মাথা থেকে নোয়াখালীর ভাষাটা তড়ানোর চিন্তা করতে হচ্ছে।'
'ব্যাচেলর', 'মেইড ইন বাংলাদেশ' কিংবা 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার'_কোনো ছবিতেই ভাষা কিংবা আঞ্চলিক বিষয়টা এতটা গুরুত্ব পায়নি। এ ছবিতে নির্দিষ্ট অঞ্চলকে বেছে নেওয়ার কারণ কী? ফারুকী বলেন, 'এ ছবির গল্পের যে ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট_সেটা ওই অঞ্চলের সঙ্গেই বেশি মানানসই।' গল্পটা কী? হাসলেন ফারুকী, বলেন, 'এখনই পুরো গল্পটা বলতে চাইছি না। তবে একটু ইঙ্গিত দিতে চাই, গল্পটা একজন বাবার সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক আর আবেগের গল্প। একজন প্রেমিকার সঙ্গে প্রেমিকের সম্পর্ক_সর্বোপরি আমাদের দেশের মানুষের সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের নানা আবেগ আর টানাপড়েনের গল্প। এখানে টেলিভিশন হচ্ছে এসব সম্পর্কের অনুঘটক, একটি অনুষঙ্গ।'
নির্মাতা জানান, বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র 'টেলিভিশন'-এর প্রযোজকদের তালিকায় আছে বাংলাদেশের ছবিয়াল, স্টার সিনেপ্লেঙ্ ও জার্মানির মোগাদর ফিল্ম। ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক শুটিং শুরু হলেও এর মধ্যে চলবে ডামি শুটিং। ওই মাসেই প্রকাশ হবে ছবির গানের অডিও অ্যালবাম। এ ছবিতে গান গাইবেন হৃদয় খান ও অর্ণবসহ আরো বেশ কয়েকজন শিল্পী। ছবির অন্য একটি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শামীম শাহেদ। ছবির মিডিয়া পার্টনার বাংলাভিশন।
নিজেদের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'এ ছবিতে আমি একটি পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করছি। কখনো মনে হয় আমার মেরুদণ্ড আছে, আবার কখনো মনে হয় অতিশয় দুর্বলচিত্তের একজন মানুষ আমি। চরিত্রের নাম সোলায়মান। বাবার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে তাঁর মতবিরোধ।' মোশাররফ করিম বলেন, 'আমি এ ছবিতে একটি নারী চরিত্রে অভিনয় করছি!' কথা শুনে তো সবাই অবাক! মিটিমিটি হেসে মোশাররফ বলেন, 'বাঙালি নারীর চরিত্র হচ্ছে, তাঁর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। আমার অবস্থাও তাই। অনেক ঘটনা, অনেক কথা! বলতে চাই, কিন্তু সাহস পাই না।' এবার হাসতে হাসতে তিশা বলেন, 'আমার চরিত্রটা তো তাহলে নারীও না পুরুষও না।' হাসতে লাগলেন সবাই। তিশা বলেন, "একজন ছেলের চেয়ে সে বেশি কাজ করে। কখনো অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। আবার কখনো বেশ গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। কখনো বুক ফাটে না, মুখ ফোটে। আবার কখনো বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ছবিতে দর্শক যে ধরনের চরিত্রে আমাকে দেখেছেন, এ চরিত্রটি তার চেয়ে একেবারেই ভিন্ন।"

No comments

Powered by Blogger.