বঙ্গোপসাগরে ৩৭০০ কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল by শিমুল নজরুল

প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। আর কাতার থেকে আমদানি হবে এ গ্যাস। এলএনজি আমদানির পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করেছে পেট্রোবাংলা। এই প্রকল্পে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সরকার। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পোটেন অ্যান্ড পার্টনার নামের একটি অস্ট্রেলিয়ান কম্পানিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের সাথে পেট্রোবাংলার একটি চুক্তি হয়েছে। তারা গত সোমবার থেকে তার কাজ শুরু করেছে।' নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চললে আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পেট্রোবাংলা গত বছরের নভেম্বরে বিওটির (বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার) ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রে অংশ নিয়েছে। বর্তমানে দরপত্র বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি শেষের দিকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী দ্বীপ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার সাগরের ভেতরে এই টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। টার্মিনালের ধারণক্ষমতা হবে এক লাখ ৩৮ হাজার থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার ঘনমিটার। এ ছাড়া টার্মিনালে এলএনজি পরিবহনে নিয়োজিত জাহাজ নোঙর করার সব সুবিধা থাকবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি এলএনজি ট্রান্সমিশন এবং বিপণনে সহায়তা করবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার একাধিক কর্মকর্তা প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে সরকার এলএনজি আমদানি করতে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন। কর্মকর্তারা জানান, বিদেশ থেকে মাদার ভ্যাসেলে (বড় জাহাজ) করে আমদানি করা হবে এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাস। জাহাজ থেকে টার্মিনালে খালাস করা হবে এলএনজি। তার পর সেখান থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে সাঙ্গু গ্যাসফিল্ডের সীতাকুণ্ড ঘাটে আনা হবে। কারণ সাঙ্গু ঘাটে ছয় মিটার গভীরতার (ড্রাফ্ট) বেশি বড় জাহাজ নোঙর করতে পারে না। সেখান থেকে পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন কম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)-এর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হবে। কর্মকর্তারা আরো জানান, এখন দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসই জ্বালানির প্রধান উৎস। দেশের ৮০ শতাংশ শিল্প-কারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জ্বালানির জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, নতুন গ্যাস ক্ষেত্র উৎপাদনে না এলে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, কাতার পেট্রোলিয়াম থেকে আমদানি করা হবে এলএনজি। এ ব্যাপারে গত বছর কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। প্রতিবছর কাতার থেকে ৪০ লাখ টন এলএনজি আমদানি করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.