২৫০০ টাকা কমে সোনার ভরি এখন ৫৭ হাজার ৩৮৭ টাকা by রাজীব আহমেদ

বশেষে ঊর্ধ্বমুখী ধারা থেকে কিছুটা নেমেছে সোনার দাম। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম আড়াই হাজার টাকা কমিয়ে নতুন দাম ভরিপ্রতি ৫৭ হাজার ৩৮৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ৯ মাসে ১৬ দফা বাড়ার পর সোনার দাম এক দফা কমল। সোনার পাশাপাশি রুপার দামও ভরিপ্রতি ১১৭ টাকা কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমেছে বলেই বাংলাদেশেও দাম কমেছে। গত এক মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি প্রায় ২৪০ ডলার কমেছে। চলতি বছর যে সোনার দাম আউন্সপ্রতি প্রায় এক হাজার ৯০০ ডলার হয়েছিল এখন তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৬৫০ ডলারের মধ্যে।
গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড এক হাজার ৫০০ ডলার অতিক্রম করে। এরপর প্রায় প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ২০০৮ সালেও যার দাম ২৫ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে এসে তা দাঁড়ায় ৬০ হাজার টাকার কাছাকাছি।
সোনার দামে ঊর্ধ্বগতির পেছনে যুক্তরাষ্টের ঋণমানের অবনতির আশঙ্কা, ডলারের দাম পড়ে যাওয়া, রিজার্ভ হিসেবে শক্তিশালী বিকল্প মুদ্রা না থাকা, জ্বালানি তেলের দামের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ইউরোপিয়ান বন্ডের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকে বিভিন্ন সময় দায়ী করেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু গত কয়েক মাস ব্যাপক ওঠানামার পর অনেকে বলছেন, সোনার বাজার ফটকা কারবারীদের দখলে। আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বিশ্বে এখন আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কারণে এখন স্বর্ণের দাম পড়ে যেতে শুরু করেছে।
মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের দাম ওঠানামার সঙ্গে দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সদস্যরা সাধারণ সভা করে নতুন দাম নির্ধারণ করেন। সারা দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ওই দামে স্বর্ণ বিক্রি করেন।
সর্বশেষ দাম নির্ধারণ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। ওইদিন ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনার দাম পাঁচ হাজার ১৩৫ টাকা থেকে কমিয়ে চার হাজার ৯২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি) দাম পড়ে ৫৭ হাজার ৩৮৭ টাকা। আগের দাম ছিল প্রতি ভরি ৫৯ হাজার ৪৯৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম গ্রামপ্রতি ২০৫ টাকা কমিয়ে নতুন দাম চার হাজার ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে প্রতি ভরিতে দুই হাজার ৩৯১ টাকা কমে নতুন দাম দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৮২০ টাকা। ১৮ ক্যারেটের সোনার দাম গ্রামপ্রতি ২১০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৬০ টাকা দরে। এতে ভরিপ্রতি দাম দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। আর সনাতনী পদ্ধতির সোনার দাম প্রতি ভরিতে এক হাজার ৪০০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৬ হাজার ১৫৮ টাকা দরে। রুপার দাম ভরিতে ১১৭ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৬৫ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে ঋণপত্র খুলে কোনো সোনা আমদানি হয় না। এ দেশের ব্যবসায়ীদের সোনার প্রধান উৎস বিদেশ-ফেরত ব্যক্তিরা। আইন অনুযায়ী একজন বিদেশ-ফেরত ব্যক্তি প্রতি গ্রামে ১২৫ টাকা শুল্ক দিয়ে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত খাঁটি সোনা নিয়ে আসতে পারেন। বিকল্প হিসেবে কোনো শুল্ক ছাড়াই ২০০ গ্রাম স্বর্ণের অলংকার নিয়ে আসতে পারা যায়। এঁরা যে সোনা নিয়ে আসেন, তা অনেক সময় জুয়েলারির দোকানে বিক্রি করেন। আবার অনেক পরিবার তাদের পুরনো সোনা জুয়েলারির দোকানে বিক্রি করে। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা মূলত লন্ডনের সোনার দামের ওপর ভিত্তি করে দেশেও সোনার দাম নির্ধারণ করেন। পাশের দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সোনার দামের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

No comments

Powered by Blogger.