সিরিয়া ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ

আরও সহিংসতার আশঙ্কায় সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ২০০ জন সিরীয় নাগরিক তুরস্কে পাড়ি জমিয়েছে।
এদিকে সিরিয়ায় সরকারবিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর জিসর আল শুগুরে গত সোমবার সরকারবিরোধীরা পুলিশের ১২০ জন সদস্যকে হত্যা করে। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে জিসর আল শুগুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে—এই খবরে আতঙ্কিত লোকজন শহর থেকে পালানো শুরু করে। এই শহর থেকেই বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
জিসর আল শুগুর ছেড়ে পালিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী যুবক মোহাম্মদ। তিনি জানান, একটি ট্রাকে করে অনেক লোকের সঙ্গে তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেন এই পৃথিবীর বাইরের মানুষ। তারা মানুষকে হত্যা করছে। আমাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে তারা।’ তুরস্ক সীমান্তে আসা আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘যখন আমি জিসর আল শুগুর শহর থেকে পালাই, তখন পর্যন্ত সরকারি বাহিনী সেখানে পৌঁছায়নি। সেখানে কী ঘটবে জানি না।’
তুরস্ক বলেছে, সিরিয়া থেকে শত শত মানুষ এলেও তারা সীমান্ত বন্ধ করবে না। রাজধানী আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান বলেন, তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ছেড়ে গেছেন এমন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সরকারবিরোধীদের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতায় হতাহতের মোট সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এই প্রথমবারের মতো স্বীকার করা হয়েছে, বাশার সরকার দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সরকারপন্থী একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ আর সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেই।
জানা যায়, সিরিয়া সেনাবাহিনীর কুখ্যাত ফোর্থ ডিভিশনের নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্ট বাশারের ছোট ভাই মাহার। এই বাহিনী জিসর আল শুগুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দারায় এই বাহিনীই রক্তাক্ত অভিযান চালায়।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে গত বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নিন্দা প্রস্তাবকে দেশটিতে সামরিক অভিযান চালানোর প্রথম ধাপ বলে আশঙ্কা করছে কোনো কোনো দেশ। তবে জার্মানি ও পর্তুগাল ওই নিন্দা প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে ওই নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে নয় সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা প্রস্তাবের বিরোধিতা করলে তা পাস করা সম্ভব হবে না।

No comments

Powered by Blogger.