বালিকাবধূদের অজানা পৃথিবী

পুতুল খেলায় মেতে ওঠা হয় না ওদের। হয় না আপন কারও সঙ্গে খুনসুটি বা মমতার মিঠে স্বাদ নেওয়া। অঙিনায় ইচ্ছামতো ছোটাছুটি বা দাপাদাপির স্বাধীনতাও হারিয়ে গেছে। বিয়ে নামের যে বাঁধন অচিন এক ঘরে জনমের মতো শক্ত করে বেঁধে রেখেছে, এর যাতনা নিয়ে দিন কাটছে ওদের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক থেকে সোয়া কোটি হবে এই বালিকাবধূদের সংখ্যা। অনেকেই জানে না তাদের কথা।
ভারত, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ইথিওপিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে চলছে এই বাল্যবিবাহ। এই শিশুদের অনেকের গোপন পৃথিবী থাকে যন্ত্রণা আর দীর্ঘশ্বাসে ভরা; কাটায় এক দুর্বিষহ জীবন।
দেখা যায়, পাঁচ-ছয় বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলো কোনো যুবকের সঙ্গে। কখনো বা কোনো মাঝবয়সী বিপত্নীক এসে বিয়ে করল চার বছরের কোনো শিশুকে। কখনো আবার মেয়েশিশুদের অপহরণ করা হয়। আটকে রেখে দিনের পর দিন তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। পরে একপর্যায়ে ওই নির্যাতকই ওই শিশুকে নিজের স্ত্রী বলে ঘোষণা দেয়।
ইয়েমেনের হাজ্জা এলাকার তাহানি নামের এক শিশুর বয়স ছয় বছর। ২৫ বছরের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাহানি বলে, ‘তাঁকে দেখলেই আমি পালিয়ে যাই। কারণ, লোকটাকে আমি ঘৃণা করি।’
পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিরসনে কখনো এ ধরনের বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। কখনো বা ঋণগ্রস্ত বাবা দায়ে পড়ে তাঁর ছোট্ট শিশুটিকে তুলে দেন ৫০ বছর বয়সী কোনো ব্যক্তির হাতে।
বাল্যবিবাহের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশের আইনকে তোয়াক্কা করা হয় না। ভারতে ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইনবিরোধী। কিন্তু রাজস্থানসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোপনে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক বিয়ে টেকে না। সুযোগ পেলে পালিয়ে যায় বালিকাবধূ।
বছর তিনেক আগে ইয়েমেনে ১০ বছরের এক মেয়ে স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। পরে আদালতে গিয়ে স্বামীকে তালাক দেয় সে। আবার ভর্তি হয় স্কুলে। এ ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। সম্প্রতি এ ঘটনাকে উপজীব্য করে লেখা আই অ্যাম নাজুদ, এজ টেন অ্যান্ড ডিভোর্সড নামের একটি বই অন্তত ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়।
ইয়েমেনের আয়েশা (১০) নামের আরেকটি মেয়ের বিয়ে হয় ৫০ বছরের এক ব্যক্তির সঙ্গে, পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু বাল্যবিবাহের শিকার বেশির ভাগ মেয়েই পালাতে বা বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে না। তাদের নীরবে সয়ে যেতে হয় নানা নিপীড়ন। অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ করতে হয়। পরিণামে কখনো বা বরণ করতে হয় মৃত্যু।

No comments

Powered by Blogger.