শেয়ারবাজারে বাড়তি কিছু নেই

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মুনাফাকে আগামী বাজেটেও করমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাবধারীদের জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকে করের আওতায় আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তব্যে এসব ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সরাসরি কালো টাকা বিনিয়োগের কোনো সুযোগ রাখা না হলেও তালিকাভুক্ত সরকারি ট্রেজারি বন্ড এবং বাংলাদেশ অবকাঠামো অর্থায়ন তহবিল লিমিটেডে (বিআইএফএফএল) এই সুযোগ রাখা হয়েছে।
১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরাই কালো টাকা সাদা করার বিশেষ এই সুবিধা নিতে পারবেন।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২১২টি সরকারি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব বন্ডের কোনো লেনদেন হয় না।
পাশাপাশি আগামী অর্থবছর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেন থেকে পাওয়া কমিশনের ওপর ধার্য করা উৎসে আয়করের হার শূন্য দশমিক শূন্য ৫ (০.০৫%) শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ (০.১০%) করা হয়েছে।
এ ছাড়া পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রমেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সভাপতি শাকিল রিজভী তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মুনাফাকে করমুক্ত রাখা এবং বিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক না করার ঘোষণা উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের উৎসে আয়করের হার বাড়ানোর ফলে তা প্রতিদিনের লেনদেনে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, এই করের বোঝা বিনিয়োগকারীদের ওপরই বর্তাবে।’
সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘উৎসে আয়করের হার বাড়ানোর ফলে যেসব বিনিয়োগকারী প্রতিদিন শেয়ার কেনাবেচা করেন, তাঁরা কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবেন। কারণ, তাঁদের লেনদেনের কমিশন বা খরচ বেড়ে যাবে। এমনকি প্রতিদিনের লেনদেনে কোনো বিনিয়োগকারী লোকসান করলেও তাঁকে বাড়তি এই খরচ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ট্রেজারি বন্ডে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা টাকার একটি অংশ ওই খাতে চলে যেতে পারে।’
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, স্বল্প সময়ের লেনদেনকে কিছুটা নিরুৎসাহিত করতে সরকার এমন প্রস্তাব করেছে। সরকারের এই প্রস্তাবনার ফলে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
আগামী অর্থবছরে পুুঁজিবাজারের জন্য যেসব সংস্কার-প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে: দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন), বাজারের অনিয়ম রোধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার স্থাপন, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন প্রণয়ন ও ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল গঠন, স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য আলাদা কোম্পানি করা, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান সংশোধন।

No comments

Powered by Blogger.