ফিচার- ডায়ানার আংটি by মাসুদ রহমান

৬ নভেম্বর কেট মিডলটনের অনামিকায় আংটি পরালেন ব্রিটিশ রাজপুত্তুর উইলিয়াম। রাজকীয় ব্যাপার বলে কথা, সারা বিশ্বের অগুনতি মানুষের তুমুল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল সেই আংটিবদল। উৎসুক দর্শকদের বিশাল এক চমকই দিয়েছেন উইলিয়াম। হবু বধূ মিডলটনকে তিনি পরিয়েছেন বিশেষ একটি আংটি। ১৮ ক্যারেটের সাদা সোনার ওপর বসানো একটি ডিম্বাকৃতির নীলমণি, সেটিকে ঘিরে রেখেছে ১৪টি হীরা। হীরায় খচিত সেই আংটিটিই সেই চমক। চমকের পেছনে বড় কারণটি হলো, এর আগে এই আংটিটি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল আরও একবার! উইলিয়ামের মা, স্বয়ং প্রিন্সেস ডায়ানা তাঁর এনগেজমেন্টে এই আংটিটিই পরেছিলেন ২৮ বছর আগে (১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি)। ডায়ানার বয়স ছিল তখন ১৯।
উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, ডায়ানার ঢাউস সেই আংটিটি ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ছিল না। এবং মজার ব্যাপার, প্রথম প্রথম সবাই আংটিটির মাঝের রত্নটিকে হীরা ভেবে ভুল করেছিল। আসলে তা ছিল একটি নীলমণি।
এখন ফের সেই আলোচিত আংটিটি সবার সামনে এসেছে। তাই অনিসন্ধিৎসু মনে উঁকি দিচ্ছে হাজারো প্রশ্ন।
আংটিটির নীলমণিটি আসলেই কত বড়?
প্রিন্স উইলিয়ামের আবাস ক্লেয়ারেন্স হাউস এ ব্যাপারে টুঁ-শব্দটি করতে নারাজ। তাই আন্দাজের ওপর ভর করে কেউ কেউ বলেন, নীলমণিটির ওজন ১২ ক্যারেট। টাইমস অব লন্ডন-এর মতে ১৮। তবে এই অঙ্কগুলো রেকর্ড ভাঙার মতো কিছু নয়। ‘লোগান সেফিয়ার’ এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নীলমণি। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনস জেম অ্যান্ড মিনারেল কালেকশনের হেফাজতে থাকা সেই নীলমণিটি ৪২২ দশমিক ৯ ক্যারেট ওজনের।
কে ছিল সেই আংটির কারিগর?
দুনিয়ার সবচেয়ে আদ্দিকালের অলংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম জ্যারার্ড। ১৭২২ সাল থেকে তাদের কারবার। ১৮৪৩ সাল থেকে টানা ছয় বছর (রানি ভিক্টোরিয়া থেকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ পর্যন্ত) ব্রিটিশ রাজপরিবারের অলংকার গড়ে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৭ সালে এসে রাজপরিবারের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে টান পড়ে জ্যারার্ডের। তবে আংটিটির ব্যাপারে এই প্রতিষ্ঠানটিও মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে এ পর্যন্ত! রাজপরিবারের সঙ্গে দেনদরবার থাকলে এমন আদবকেতা মেনে চলার নিয়ম বলেই হয়তো বা।
জ্যারার্ডের তৈরি সেই আংটিটি প্রথম দেখাতেই পছন্দ করেছিলেন ডায়ানা। অনেকের প্রশ্ন, তাতে করে কি সাবেকি হীরা-ঐতিহ্যের ব্যত্যয় হয়েছিল? মোটেও না; কারণ, ব্রিটিশ রাজপরিবারে অন্যান্য সব রত্ন-পাথরের ব্যবহার আগে থেকেই ছিল। পাশাপাশি ১৮০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি বড় খনি আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত হীরা ছিল দুষ্প্রাপ্য। ১৯৪৭ সালে এসে হীরা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সবার কাছে। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশের বেশি জুটির এনগেজমেন্টে হীরা না হলে চলে না!
হীরা ও নীলমণির তফাতটা কোথায়?
সবাই জানেন, স্ফটিকাকার কার্বন হীরা আসলে প্রাকৃতিক রত্ন-পাথর। নীলমণিও প্রাকৃতিক, স্ফটিকাকার অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এর মূল উপাদান। হীরার মতোই নীলমণিও আঁচড় প্রতিরোধক গুণসম্পন্ন। রাসায়নিকভাবে খাঁটি নীলমণির রং সাদা। অপদ্রব্যযোগে এর রঙের তারতম্য হয়ে থাকে। টাইটেনিয়াম ও লোহার সংমিশ্রণে রং হয় নীল। আবার শুধু লোহার মিশেলে হয় ফিকে হলুদ। এ ছাড়া আরও কিছু যৌগের মিশেলে নীলমণির রং কখনো সবুজ, বেগুনি, কমলা কিংবা লালচে বাদামিও হতে দেখা যায়। ক্রোমিয়ামের মিশ্রণে পাওয়া যায় লাল নীলমণি, যা কিনা রুবি হিসেবেই পরিচিত।
ডায়ানার আংটির নীলমণিটি কোত্থেকে এসেছিল?
সবচেয়ে ভালো আন্দাজ, শ্রীলঙ্কা। প্রায় দুই হাজার বছর আগে থেকে শ্রীলঙ্কায় নীলমণি পাওয়া যেত। এখন দুনিয়ার অধিকাংশ নীলমণির জোগান আসে এশিয়ার এই দেশটি থেকেই। আর সেখানকার কমলা-গোলাপি রঙের ‘পদ্মরাজ’ই এখন সবচেয়ে দুর্লভ নীলমণি।
এখন সেই আংটি কতটুকু প্রভাব রাখছে হবু বর-বধূ মহলে?
গণমাধ্যমে উইলিয়াম-মিডলটনের এনগেজমেন্টের ছবি ছাপা হতেই শুরু হয়েছে তুমুল হইচই! সাধারণ জনতা ছুটছে তেমনি আরেকটি আংটির পেছনে! এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সস্তা দরে নকল পাথরের তেমন একটা আংটি পেয়েই তারা আহ্লাদে আটখানাও হচ্ছে! তবে ঘুম হারাম হয়েছে ন্যাচারাল স্যাফাইয়ার কোম্পানিওয়ালাদের! উইলিয়াম-মিডলটনের এনগেজমেন্টের পর তাদের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরেছিল অসংখ্য মানুষ! ফলে তাদের ওয়েবসাইটটাই ক্র্যাশ করেছে শেষতক!
কত দামি সেই আংটিটি?
১৯৮১ সালের হিসাব মতে, সে সময় ডায়ানার আংটিটির দাম ছিল প্রায় ৬৫ হাজার ডলার। আর এখনকার বাজারে আংটির ওই নীলমণিটির দামই প্রায় ৩০ হাজার ডলার। হীরা ও সোনার দাম মিলিয়ে পুরো আংটির দাম উঠেছে অর্ধ মিলিয়নের মতো। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস এবং ডায়ানার নাম জড়িয়ে আছে বলেই এই আংটি এখন দুর্লভ বস্তুর তালিকায় পড়ে গেছে এরই মধ্যে। তাই অমূল্য এই আংটির সঠিক মূল্য নির্ধারণ অর্থহীন!
==========================
গল্প- 'অভিমান'  গল্প- 'মাটির ব্যাংক'  গল্পসল্প- 'সাগরকে যাঁরা পোষ মানালেন'  স্মরণ- 'আমাদের সেলিনা আপা'  আলোচনা- 'বেতন-ভাতা না নেওয়ার ‘নীতিগত’ সিদ্ধান্ত নয় কেন?  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরীক্ষা করছে নরওয়ে  খালেদার মালপত্র আজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে  আলোচনা- 'পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও অশান্তির মনস্তত্ত্ব'  সাক্ষাৎকার- পাহাড়ে পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করা হচ্ছে  আলোচনা- 'শান্তিচুক্তির ১৩ বছর'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'উন্মত্ত নৈরাজ্যের শক্তি বনাম সোনালি সম্ভাবনা'  আলোচনা- ''ট্রানজিট' না 'করিডোর' না 'কানেকটিভিটি'  আলোচনা- 'ওরাও মানুষ আছে ওদের অধিকার'  আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্রের পথ  শিল্প-অর্থনীতি 'আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্য এবং বাংলাদেশ  স্মরণ- 'সিদ্ধার্থকে মনে পড়ে' by খুশবন্ত সিং  আলোচনা- প্রসঙ্গ:বেসরকারী চ্যানেলে বিটিভি'র খবর  আলোচনা- 'আজও পাহাড় অশান্ত'  আন্তর্জাতিক- 'চীনের দৃষ্টিতে এক হবে দুই কোরিয়া ইরাকে গণতন্ত্র চাননি মুবারক'  আন্তর্জাতিক- 'তরুণদের ভবিষ্যৎ মানে দেশের ভবিষ্যৎ'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা'  বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য  শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর  অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার  খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!'


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ মাসুদ রহমান
ওয়েবসাইট অবলম্বনে


এই ফিচার'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.