খবর, প্রথম আলোর-  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরীক্ষা করছে নরওয়ে

গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তহবিল সরানোর অভিযোগ পরীক্ষা করে দেখছে নরওয়ে সরকার। নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়কমন্ত্রী এরিক সোলহেইম গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসিকে এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, নরওয়ে উন্নয়ন-সহযোগিতা সংস্থাকে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিবিসিকে নরওয়ের এই মন্ত্রী আরও বলেন, নরওয়ে সন্দেহ করে না যে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে কর জালিয়াতি বা দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। তবে যত প্রশংসনীয় কারণেই হোক না কেন, এক তহবিলের অর্থ অন্য তহবিলে সরানোকে নরওয়ে সরকার সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র-অর্থায়ন একটি হাতিয়ার।’
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দারিদ্র্য দূর করতে দাতাদের দেওয়া গ্রামীণ ব্যাংকের ১০ কোটি ডলার (বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অন্য প্রতিষ্ঠানে সরানোর অভিযোগ উঠেছে। নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে এই অভিযোগ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে দারিদ্র্য বিমোচনের তহবিল ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তবে মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল ঢাকায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, গ্রামীণের লক্ষ্য অনুযায়ী সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণ। রিভলভিং (ঘূর্ণমান) তহবিলের ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করাও গ্রামীণ তহবিল গঠনের অন্যতম লক্ষ্য। গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণ কল্যাণের নতুন এই সমঝোতার ফলে নরওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে না। বরং এটি দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক কর্মকাণ্ড আরও পেশাগতভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করবে।
মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রদূতকে আরও বলেন, ‘দাতাদের সঙ্গে যে চুক্তি রয়েছে, তা অনুসরণ করেই গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি যেহেতু অনুদানের টাকা সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করবে না, তাই আমরা বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনি।’
‘ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে’ (কট ইন মাইক্রো ডেট) শিরোনামের এই প্রামাণ্যচিত্রটি গত ৩০ নভেম্বর সরকারি মালিকানাধীন নরওয়ে সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের (এনআরকে) টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। ডেনমার্কের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক টম হাইনম্যান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের প্রতিপাদ্য ছিল, ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে আটকে আছে গরিব মানুষের জীবন। টম ওই প্রামাণ্যচিত্রে প্রায় দেড় দশক আগের একটি ঘটনার ওপর আলো ফেলেছেন। তিনি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন, নরওয়েসহ বিভিন্ন দাতার দেওয়া কোটি কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণে। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।
জানতে চাইলে টম হাইনম্যান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের জালে দরিদ্র মানুষের আটকে থাকা, তহবিল হস্তান্তর—এসব বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। টানা ছয় মাস ধরে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁর দিক থেকে কোনো সাড়া পাইনি।’
তবে গতকাল টম হাইনম্যান বিবিসিকে বলেন, তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অর্থ অপব্যবহার অথবা তহবিল সরিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার ব্যাপারে অভিযুক্ত করেননি।
যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এম শাহজাহান এক ই-মেইলে বলেন, প্রামাণ্যচিত্রে তহবিল সরানোর যে অভিযোগটি এসেছে, সেটি পুরোপুরি মিথ্যা। ওই অভিযোগের ব্যাপারে অবস্থান ঠিক করতে কাজ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত খুব শিগগির গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল হস্তান্তরের যে অভিযোগটি উঠেছে, বেশ কয়েক বছর আগেই তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এনআরকের ওয়েবসাইটে প্রামাণ্যচিত্রে লিখিত ভাষ্যে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জন্য নরওয়ের উন্নয়ন-সহায়তা সংস্থা (নোরাড), সুইডেনসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের থেকে পাওয়া ১০ কোটি ডলার অনুদানের অর্থ ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে নিজের প্রতিষ্ঠিত ও মালিকানাধীন আরেকটি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন মুহাম্মদ ইউনূস। এক বছর পর বিষয়টি জানতে পারে নোরাড এবং উন্নয়ন-সহযোগীদের পক্ষ থেকে দুই বছর পর তহবিল হস্তান্তরের বিষয়টির ব্যাখ্যা চায়। এ ব্যাপারে তিনি ব্যাখ্যা দেন, ব্যাংকের রিভলভিং (ঘূর্ণমান) তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নোরাডের প্রশ্নের জবাবে ১৯৯৮ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকায় নরওয়ের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হ্যান্স ফ্রেডারিক লেনেকে তিনি একটি চিঠি পাঠান। রাষ্ট্রদূতকে লেখা চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস লেখেন, (গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণ কল্যাণের) চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামীণের আর্থিক সম্পদ দক্ষতা ও পেশাদারির মাধ্যমে পরিচালনা করা, যার ফলে গ্রামীণের গ্রাহকের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে করের পরিমাণ কমানো এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হবে। এ অর্থ ঘূর্ণমান তহবিলের হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় থেকে গেলে ক্রমেই বাড়তে থাকা কর হারের কারণে ভবিষ্যতে আমাদের বিপুল পরিমাণ কর পরিশোধ করতে হবে। ঘূর্ণমান তহবিল থেকে কোনো অর্থ ব্যয়ের পর এর বিনিময়ে পাওয়া অর্থ আবার একই কাজে ব্যবহার করা যায়। এই তহবিলের ক্ষেত্রে অর্থবছর বিবেচ্য হয় না।
টম হাইনম্যানের দাবি, বিষয়টি নিয়ে ওই সময় গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে নরওয়ের সম্পর্ক চরম তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছায়। ডেনিশ সাংবাদিক বলেছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর ছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে তিনি চিঠি লেখেন নোরাডের তৎকালীন মহাপরিচালক টোভ স্ট্রান্ড গেরহার্ডসনকে। মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে লিখেছেন, ‘নোরাডের ঢাকা কার্যালয় ও আমাদের (গ্রামীণ ব্যাংক) মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আমরা এটি মেটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এতে খুব একটা অগ্রগতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।’ এ সমস্যার বাইরে ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাস এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে নোরাডসহ দাতাদের দেওয়া টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের বাইরে অন্যান্য উদ্যোগে খাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে আরও লেখেন, ‘এই অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের ভেতরে ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করবে। সরকারের ভেতরে বা বাইরে, যারা গ্রামীণকে সমর্থন করে না, তারা যদি এ চিঠিটি হাতে পায়, তবে বাংলাদেশে আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হবে। দুই পক্ষের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের এ সমস্যার সমাধানে পৌঁছাতে হবে।’
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিঠিতে আরও লেখেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে যেসব চিঠি ও কাগজপত্রের আদান-প্রদান হয়েছে, তা সংযুক্ত করলাম। আজ রাষ্ট্রদূত হ্যান্স ফ্রেডারিক লেনে এবং এমার ল্যান্ডমার্কের সঙ্গে বৈঠকে আমি এ বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। কিন্তু আমার মনে হয় না, এদিক থেকে (নরওয়ে দূতাবাস, ঢাকা) খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’
চিঠিতে মুহাম্মদ ইউনূস ২৯ ও ৩০ এপ্রিল অসলো সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই সময় বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান তিনি ব্যাখ্যা করবেন।
=========================
খালেদার মালপত্র আজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে  আলোচনা- 'পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও অশান্তির মনস্তত্ত্ব'  সাক্ষাৎকার- পাহাড়ে পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করা হচ্ছে  আলোচনা- 'শান্তিচুক্তির ১৩ বছর'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'উন্মত্ত নৈরাজ্যের শক্তি বনাম সোনালি সম্ভাবনা'  আলোচনা- ''ট্রানজিট' না 'করিডোর' না 'কানেকটিভিটি'  আলোচনা- 'ওরাও মানুষ আছে ওদের অধিকার'  আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্রের পথ  শিল্প-অর্থনীতি 'আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্য এবং বাংলাদেশ  স্মরণ- 'সিদ্ধার্থকে মনে পড়ে' by খুশবন্ত সিং  আলোচনা- প্রসঙ্গ:বেসরকারী চ্যানেলে বিটিভি'র খবর  আলোচনা- 'আজও পাহাড় অশান্ত'  আন্তর্জাতিক- 'চীনের দৃষ্টিতে এক হবে দুই কোরিয়া ইরাকে গণতন্ত্র চাননি মুবারক'  আন্তর্জাতিক- 'তরুণদের ভবিষ্যৎ মানে দেশের ভবিষ্যৎ'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা'  বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য  শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর  অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার  খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!'  আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!'  খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে'  'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে'  স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটকখবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.