ফিচার- তাঁহাদের দান by মাহফুজ রহমান

ভায়োলেট লার্জের বয়স ৭৮ চলছে। ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি। চলছে চিকিৎসা, নিতে হচ্ছে কেমোথেরাপি। স্বামী অ্যালেনের তাই কষ্টের শেষ নেই। ৩৫ বছরের দীর্ঘ বিবাহিত জীবন তাঁদের। ১৯৮৩ সালে ঢালাইকার পেশা থেকে অবসর নিয়ে অ্যালেন থিতু হয়েছিলেন কানাডার লোয়ার ট্রুরোতে। আশপাশের দশজনের চোখে ভায়োলেট-অ্যালেন পড়শি হিসেবে চমৎকার, আর জুটি হিসেবে অসাধারণ। অসাধারণ এই দম্পতির দুই মেয়ে।
সন্তানদের নিয়ে তাঁরা থাকেন ওনটারিওতে। কাছের মানুষ বলতে আর আছে ভায়োলেটের দুই ভাই ও এক বোন। অ্যালেনের তিন ভাই। তাঁদের দুজন থাকেন ট্রুরোতে, আরেকজন সেই অটোয়ায়। মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট একটা জীবনই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু ওই এক মরণব্যাধি ক্যানসারের কারণেই জীবনের পড়ন্ত বেলার দিনগুলো কেমন বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল ভায়োলেট-অ্যালেনের।
তবে সেই বিবর্ণ দিনগুলোতে রং লাগে একদিন। দিনটি ছিল এ বছরের জুলাইয়ের। বছর কুড়ি আগে লটারিতে এক হাজার ডলার জিতেছিলেন ভায়োলেট ও অ্যালেন। তার পর থেকে সপ্তাহে অন্তত দুটি লটারির টিকিট কেনা নিয়মে পরিণত হয়েছিল। অভ্যাসবশত গত জুলাইয়ে ট্রুরো মলের লোটোল্যান্ড নামের এক প্রতিষ্ঠান থেকে একটি লটারির টিকিট কিনেছিলেন তাঁরা। আর সেই টিকিটই তাঁদের নিষ্প্রভ জীবনে এনে দেয় আলোর ঝলকানি! এক নয়, দুই নয়; ভায়োলেট-অ্যালেন সেই লটারিতে জিতে নেন পাক্কা ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার! বাংলাদেশি টাকার হিসাবে অঙ্কটা ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা প্রায়!
‘“হায় খোদা!” আমার প্রথম উচ্চারণ ছিল এই দুটি শব্দই।’ লটারি জেতার পর নিজের অনুভূতি কেমন ছিল, তা বলছিলেন ভায়োলেট, ‘জুলাইয়ের সেই মঙ্গলবারের সকালবেলা ট্রুরো মলের লোটোল্যান্ড থেকে ফোন এল। জানাল, ‘তোমরা লটারি জিতেছ।’ ঘড়িতে তখন ১০টা। টিকিটের নম্বরটি মিলিয়ে দেখতে শুরু করলাম। প্রথম তিনটি অঙ্ক মিলে যেতেই অ্যালেনকে চিৎকার করে বললাম, ‘ওগো, আমরা তো ১০ বাক জিতে গেছি!’ আর পুরো অঙ্কটা মিলে যেতেই ভায়োলেটের উত্তেজনা তুঙ্গে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না তাঁর। অ্যালেনকে বলেন, ‘ফের মিলিয়ে দেখো।’ তার পরও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ডেকে আনেন ভাই এলসন পেরিকে। বলে দেন, লটারি বিজয়ী নম্বরটির প্রিন্ট নিয়ে আসতে। তথাস্তু। এর মধ্যে আরেক ভাই, উইলিসকেও ডেকে আনেন পত্রিকায় প্রকাশিত নম্বরের সঙ্গে তাঁদের টিকিট নম্বরটি মিলিয়ে দেখতে! মোট কথা তুলকালাম কাণ্ড!
সবার মিলিয়ে দেখা শেষ হলে, স্বস্তির শ্বাস নেন ভায়োলেট। বললেন, ‘ওই নম্বরটি আমরা ৫০ হাজার বার মিলিয়ে দেখেছি! তবে নিশ্চিত হওয়ার পরই মুখে তালা মেরে রাখি। ভয় হচ্ছিল, পাছে কেউ জেনে ফেলে।’ অ্যালেনও স্ত্রীর পথ ধরলেন। একেবারে স্পিকটি নট! ‘শুধু ভায়োলেটের দুই ভাই বাদে, তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে ব্যাপারটি জানাইনি আমরা।’ কেন কিছুই না? কান্নাভেজা চোখে তাকালেন প্রিয় ভায়োলেটের দিকে, ‘আমরা একে অপরের। এই টাকা আসলে আমাদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভয় ছিল, দুষ্টু লোকদের কোপানলে না পড়ে যাই।’ আর তাই ভায়োলেট-অ্যালেন সিদ্ধান্ত নেন, লটারিতে জেতা সব টাকা তাঁরা দান করে দেবেন! কোথায় কোথায় দান করা যায়, সেটির একটি তালিকাও তৈরি করে ফেললেন দ্রুত। তালিকায় থাকল স্থানীয় দমকল বিভাগ, গির্জা, সমাধিক্ষেত্র, রেডক্রস, ক্ষতিগ্রস্ত সেনাবাহিনীর সদস্য, ট্রুরো ও হ্যালিফ্যাক্সের হাসপাতাল। আর থাকল একটি সংস্থার নাম। যেখানে ক্যানসার, আলঝেইমারস ও ডায়াবেটিসের মতো ব্যাধির চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে সেই তালিকা এখনো শেষ করতে পারেননি ভায়োলেট ও অ্যালেন।
‘ব্যাপারটি আমাদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। এই টাকাগুলো দিয়ে অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব।
===========================
ফিচার- ডায়ানার আংটি  গল্প- 'অভিমান'  গল্প- 'মাটির ব্যাংক'  গল্পসল্প- 'সাগরকে যাঁরা পোষ মানালেন'  স্মরণ- 'আমাদের সেলিনা আপা'  আলোচনা- 'বেতন-ভাতা না নেওয়ার ‘নীতিগত’ সিদ্ধান্ত নয় কেন?  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরীক্ষা করছে নরওয়ে  খালেদার মালপত্র আজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে  আলোচনা- 'পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও অশান্তির মনস্তত্ত্ব'  সাক্ষাৎকার- পাহাড়ে পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করা হচ্ছে  আলোচনা- 'শান্তিচুক্তির ১৩ বছর'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'উন্মত্ত নৈরাজ্যের শক্তি বনাম সোনালি সম্ভাবনা'  আলোচনা- ''ট্রানজিট' না 'করিডোর' না 'কানেকটিভিটি'  আলোচনা- 'ওরাও মানুষ আছে ওদের অধিকার'  আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্রের পথ  শিল্প-অর্থনীতি 'আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্য এবং বাংলাদেশ  স্মরণ- 'সিদ্ধার্থকে মনে পড়ে' by খুশবন্ত সিং  আলোচনা- প্রসঙ্গ:বেসরকারী চ্যানেলে বিটিভি'র খবর  আলোচনা- 'আজও পাহাড় অশান্ত'  আন্তর্জাতিক- 'চীনের দৃষ্টিতে এক হবে দুই কোরিয়া ইরাকে গণতন্ত্র চাননি মুবারক'  আন্তর্জাতিক- 'তরুণদের ভবিষ্যৎ মানে দেশের ভবিষ্যৎ'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা'  বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য  শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর  অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ মাহফুজ রহমান
ওয়েবসাইট অবলম্বনে


এই ফিচার'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.