শিল্প-অর্থনীতি 'আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্য এবং বাংলাদেশ' by গাউসুর রহমান

ক্ষিণ এশিয়ার মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে যে, আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা আমাদের অর্থনীতির জন্যে অশনি সংকেত। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, রফতানি করে তার চেয়ে অনেক কম। আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রে এই যে ভারসাম্যহীনতা তা আমাদের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আশংকার কথা হচ্ছে এই যে, আমদানির তুলনায় রফতানি একেবারেই কম।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের অদক্ষতা, পরিকল্পনাহীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার অভাব ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যে আমাদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে।
আমরা জানি যে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্যে বিশ্বের অনেক দেশ রফতানি বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ে। তাছাড়া বাজার তৈরির কৌশলের অভাবেও রফতানি বাণিজ্যে বিশ্বের অনেক দেশ পিছিয়ে পড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমরা আমাদের বাজার তৈরিতে ও পণ্যের চাহিদা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছি। এ ক্ষেত্রে চোরাচালান ও আমাদের রফতানি বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অন্যদিকে সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল সবচেয়ে এগিয়েআছে। এদিকে আগামী ২০১৬ সালের আগে সাফটা পুরোপুরি বাস্তবায়নেরও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমাদের অর্থনীতির জন্যে এ চিত্র বিরূপ ফলাফল বয়ে আনবে। রফতানি বাণিজ্যকে জোরদার করতে না পারলে দিনে দিনে আমাদের অর্থনীতি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার বাজার অনেকটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতির অভাব অনেকটাই দায়ি। দক্ষিণ এশিয়ার মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ রফতানি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে রফতানী করেছে ৯৬.৯ শতাংশ। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের এ চিত্র আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে। কেন এমনটি হলো? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের কি সদ্ভাবের অভাব? নাকি পণ্যের শুল্ক নির্ধারণের কারসাজি? আমাদের পণ্যের গুণগত মান কি প্রশ্নের মুখোমুখি? আবার এমনও তো হতে পারে আমাদের দূরদৃষ্টির অভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমদানী-রফতানী ভারসাম্য সৃষ্টিতে আমরা ভয়াবহ রকম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর আমরা যে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি তা বলাই বাহুল্য। এ নির্ভরশীলতাও এক ধরনের অর্থনৈতিক পরাধীনতা। আমাদেরকে এ পরাধীনতার দুষ্টচক্র থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থনীতিকে আমাদানীনির্ভর নয়, রফতানী নির্ভর করতে হবে। রফতানীক্ষেত্রে আমাদেরকে সম্ভাব্যতা যাচাই করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে আমাদের পণ্য আমাদানিতে আকৃষ্ট করতে হবে। এসব দেশের সঙ্গে আমদানী-রফতানীর শর্ত যাতে আমাাদের বিপক্ষে না যায়, সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কঠোর শর্তে আমরা যাতে পণ্য আমাদানী না করি এবং শিথিল শর্তে যাতে আমরা পণ্য রফতানী না করি-এ বিষয়টিও বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে।
আমাদের দেশের যে অর্থনৈতিক বাস্তবতা সে বাস্তবতার নিরিখেই বলা যায় যে, আমাদের দেশে যে পণ্য উৎপন্ন হয়; তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক পণ্য দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানী করা সম্ভব। অথচ আমরা এসব দেশে রফতানী বাণিজ্য ত্বরান্বিত করতে পারছি না। পরিকল্পনাহীনতাও এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ি। আশঙ্কার কথা হচ্ছে এই যে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমাদের রফতানী বাণিজ্যের ধারা দিনে দিনে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। অথচ আমরা এসব দেশ থেকে ২০০৯ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানী করেছি। এই যে অতিরিক্ত আমদানীনির্ভরতা, এর জন্যে কি আমাদের পণ্য উৎপাদনহীনতা দায়ী? নাকি এসব দেশের পণ্যের প্রতি আমাদের অতিরিক্ত আকর্ষণ? আমাদের এসব পণ্যের উপর এতোটাই আকর্ষণ ছিলো যে, পণ্যের গুণগত মান যাচাই না করেই আমরা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে বলতে গেলে নির্বিচারে আমদানি করেছি। অতিরিক্ত শুল্ক দিয়ে এমন সব পণ্য আমরা আমদানি করেছি, যা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার এসব দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করেছে নামমাত্র শুল্ক দিয়ে। আমাদের পণ্যের গুণগত মান অনুযায়ী আমরা মূল্যও পাইনি। অপরদিকে গুণগত মান সন্তোষজনক না হওয়া সত্ত্বেও বেশি দামে. বেশি শুল্ক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করেছি। সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গ কী এর দায় এড়াতে পারবেন? নূ্যনতম দেশপ্রেম থাকলে আমাদের পক্ষে এসব ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াই স্বাভাবিক ছিলো।
এখানে উলেস্নক করা যেতে পারে যে, ২০০৪ সালে সাফটা চুক্তি হলেও এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু আগামী ২০১৬ সালের আগে সাফটা চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। সাফটা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশের চামড়া শিল্প, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক লাভবান হবে। বিপরীতে ইলেকট্রনিক, মেশিনারিজ, পরিবহন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এসব মাথায় রেখেই দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের আমাদানী-রফতানী বাণিজ্য পরিচালনা করা উচিত।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের আমদানী-রফতানী বাণিজ্য যাতে শুভঙ্করের ফাঁকি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে দূরত্ব, সময়, ব্যয়, শুল্ক, পণ্যমূল্য, পণ্যের গুণগত মান সর্বোপরি বাণিজ্য শর্তের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বাণিজ্য উদারীকরণ যাতে আমাদের অনুকূলে থাকেন সেদিকেও নজর দেয়া জরুরি। আঞ্চলিক রফতানী বাণিজ্যে কোনোভাবেই আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না; সবচেয়ে পিছিয়ে তো নয়ই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই, সবচেয়ে এগিয়ে। নেপাল পারলে আমরা পারবো না কেন?
============================
স্মরণ- 'সিদ্ধার্থকে মনে পড়ে' by খুশবন্ত সিং  আলোচনা- প্রসঙ্গ:বেসরকারী চ্যানেলে বিটিভি'র খবর  আলোচনা- 'আজও পাহাড় অশান্ত'  আন্তর্জাতিক- 'চীনের দৃষ্টিতে এক হবে দুই কোরিয়া ইরাকে গণতন্ত্র চাননি মুবারক'  আন্তর্জাতিক- 'তরুণদের ভবিষ্যৎ মানে দেশের ভবিষ্যৎ'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা'  বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য  শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর  অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার  খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!'  আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!'  খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে'  'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে'  স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটকখবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রত্যাশা আলোচনা- 'পায়ে পড়ি বাঘ মামা, বেঁচে থাকো'  আন্তর্জাতিক- 'পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত চীন  আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে  খবর- পুলিশি হরতাল  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত'  গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত'


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ  গাউসুর রহমান
কবি, প্রাবন্ধিক-গবেষক


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.