দার্শনিক চেতনায় জাতীয় বাজেট

জাতীয় বাজেটের প্রস্তুতি, প্রস্তাব ও বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে জাতীয় উন্নয়নভাবনা বা দর্শন (যেমন পরনির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংম্ভরতাসহ রফতানিমুখী হওয়া, স্থানীয় শিল্প উদ্যোগকে সুরক্ষা দিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা টেকসইকরণ, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান ইত্যাদি) পরিবর্তনের সূচনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে আমজনতার সচেতনতা বাড়ছে, এটি যেমন ইতিবাচক একটি দিক; তেমনি বাজেট প্রাক্কলন ও বাস্তবায়ন সিদ্ধান্ত প্রদানের নির্দেশনা অতিমাত্রায় ওপর থেকেই আসছে, এটি একটি নেতিবাচক প্রবণতা। বাজেটে চাহিদা ও সরবরাহের ভাবনা বা প্রস্তাব পরীক্ষা-পর্যালোচনার ভিত্তিতে নিচ থেকে ওঠা বা আসা উচিত। প্রথা তাই-ই আছে; কিন্তু ওপর থেকে এঁকে দেয়া নকশায় প্রাক্কলন করা হলে নিন্মপর্যায়ে তা বাস্তবায়নে জটিলতার উদ্ভব হয়, চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় এবং প্রাক্কলন ঘন ঘন পুনর্বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যা প্রকারান্তরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে ফেলে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। জাতীয় বাজেটের (যা মূলত ব্যয়ের) আকার আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি করে প্রস্তাব করা হয় এবং সে অনুযায়ী রাজস্ব আয় প্রাক্কলন তথা লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির প্রস্তাব কষা হয়। বাস্তবায়ন পরিস্থিতি যদি আমলে না নেয়া হয়, তাহলে বড় আকারের বাজেট দিয়ে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। যদি এসব প্রাক্কলন বাস্তবায়নযোগ্যের নিরিখে নিরূপণ করা না হয়, চাহিদা বা কঠিন বাস্তবতাকে সঠিকভাবে ঠাহর না করা হয়, সঠিক অনুমানের ভিত্তিতে রাজস্ব আদায় এবং সেই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা না হয়,
তাহলে বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট বা পুনর্বিবেচনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। একটি বাজেটকে তখনই ‘উচ্চাভিলাষী’ আখ্যা দেয়া চলে, যখন দেখা যায় বাজেটের বাস্তবায়ন গতি বা সক্ষমতা কম। সমালোচকরা যথার্থই বলে থাকেন, বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা ও স্বচ্ছতাসচেতন থাকা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি বড় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রাক্কলন করে বাস্তবায়নকালে তার একটি বড় মাত্রার কাটছাঁট হয়। এটি উভয় ক্ষেত্রে (রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়) হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে, কিংবা মাঝপথে প্রকল্প পরিত্যক্ত হলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিচ্যুতি ঘটতে পারে। সাহায্য সংস্থা বা এফডিআই থেকে বৈদেশিক সাহায্যের প্রাপ্তিতে বিলম্ব ঘটলে বা বিদেশি সহায়তা সময়মতো ব্যবহার করতে না পারলে এটা অনেক সময় বহুমুখী সমস্যা, অসম্মান ও ব্যর্থতার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য এহেন সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে মনোযোগ বাড়ানো, সাবধানতা অবলম্বন এবং বাস্তবায়নের জন্য দায়ীদের দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এটা পরিকাঠামো নির্মাণ বা রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনা যে কোনো ক্ষেত্রেই হতে পারে। অধিকতর উন্নয়ন বাজেট ব্যয়ের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে গুণগত মানসম্পন্ন সম্পদ ও সেবা উন্নয়ন ছাড়া টাকা ব্যয় করা হলে অর্থনীতিতে সংক্রামক ব্যাধির মতো বিশৃঙ্খলা বাড়তেই থাকবে, তৈরি হবে আস্থাহীনতা। অনেক উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো বাংলাদেশেও বাজেটের আকার ক্রমাগত বাড়ানো হয়। বাজেট বৃদ্ধির গতি জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং সিপিআই সংকলনের ওপর ভিত্তি করে অনুমিত হয়। যদি তা না হয়, বাজেটে প্রকৃত অর্থে কোনো বৃদ্ধি প্রতিফলিত হবে না। তখন মনে হতে পারে আমরা যেখানে ছিলাম এখনও সেখানেই আছি। তাছাড়া বাজেটের আকার যদি বাড়ে ভোক্তা সন্তুষ্টি এবং উন্নয়নের স্তর বোঝানোর জন্য, ভোটারদের আশ্বস্ত করার জন্য, তাহলে এটিকে একটি উদ্যমী প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। উন্নয়নকামী অর্থনীতিতে এটি প্রয়োজনও বটে। অবশ্য প্রকৃত অর্থে বৃদ্ধি তেমন না হলেও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি সাধারণ উদ্বেগ থাকবে, যদিও সেখানে পরিস্থিতি ও পদ্ধতিগত উন্নতি বা সংস্কার প্রয়োজন হবে। আরেকটি ফ্যাক্টরের বিবেচনা সেখানে থাকা উচিত, যেমন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় পৌঁছানোর উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে এগোতে হলে বাজেটের আকার বৃদ্ধি আবশ্যক হবে। সবাই যেমনটা দেখছে- অর্থনীতির আকার বাড়ছে এবং যুক্তি দেখানো হচ্ছে, এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় দিক থেকে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।
এ কথা ভাবনায় আনা হচ্ছে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য। আবদার চলছে মোটা দাগের উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধির। যদি তা না হয়, কাক্সিক্ষত ৭-৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নাকি অর্জিত হবে না। স্রেফ অর্থবিলের মাধ্যমে ঘটা করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় পদ্ধতিগত পরিবর্তন হঠাৎ ঘটানো উচিত নয়, এটা শুরু করা উচিত যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই সম্ভাব্য পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত পাওয়া যাবে। যখন স্টেকহোল্ডারের দ্বারা প্রাথমিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে একটি নতুন ট্যাক্স প্রবর্তিত বা আরোপিত হবে, তখন সেটি আহরণে বেগ পেতে হয় না। নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন প্রবর্তনের জন্য নেয়া উদ্যোগের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ক্ষোভ দেখে মনে হতে পারে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য সিদ্ধান্তগুলোয় ছিল, যা এখনও সমাধানের সুযোগ আছে। বাস্তবায়ন-ক্ষমতা বাড়ানো ব্যতিরেকে নতুন কোনো শুল্ক বা কর আইন প্রবর্তনের আগে চিন্তা করতে হবে। বাজেটের একটি খুব ছোট অংশ (শতকরা ১) পরিসংখ্যান, অটোমেশন, ডাটাবেজ, নির্মাণ বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করা যেতে পারে। সেখান থেকে পাওয়া প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া সঙ্গত হবে। বিভিন্ন শিল্প বণিক সমিতি, থিঙ্ক ট্যাংক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডাটাবেজ নির্মাণ করতে পারে। বিভিন্ন শরিকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট তথ্য পরিসংখ্যান থাকলে প্রায়ই সুনির্দিষ্ট ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়। আসন্ন অর্থবছরেও রাজস্ব আহরণসহ বড় দাগে ব্যয়ের ব্যাপারে সতর্কতা, ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা জারিসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবীক্ষণ তথা নজরদারি বাড়ানোর অবকাশ থেকে যাবে। আসন্ন বাজেট বাস্তবায়ন দুটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে বলে প্রতীয়মান হয়। এগুলো হল : ১. রাজস্ব ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসতে সচেষ্ট হওয়া, এবং ২. উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে থাকতে হলে আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি পরিস্থিতি-পরিবেশের উন্নতির দিকে নজর দেয়া।
অতএব, বাজেট বরাদ্দের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের এই সত্য মনে রাখতে হবে যে, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন ছাড়া স্বাধীনতা বিশুদ্ধ নয়। ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, জাতীয় স্বার্থচিন্তা আত্মস্বার্থচিন্তার ওপরে উঠতে না পারলে কোনো রাষ্ট্র বা জাতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হতে পারে না। উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এখনও অক্লান্ত চেষ্টা চলছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রায়নের একটি উপায় হিসেবে এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশের অধিকাংশ সময় ক্ষমতায় আসীন ছিল সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসকরা। ইউরোপ ও এশিয়ায় সমৃদ্ধি এবং জ্ঞান ও উপলব্ধির অবয়ব, একই সঙ্গে ইউরোপে শিল্পবিপ্লব তথা বিশ্বের নেতৃত্ব ইউরোপের হাতে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটও সাধারণ ছিল না। গত শতাব্দীতে ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের ঢেউ যখন আটলান্টিক উপকূলে আছড়ে পড়েছিল, তখন প্রযুক্তি প্রয়োগের দ্বারা অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গত চার দশক ধরে যে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাতে ইঙ্গিত আছে, একবিংশ শতাব্দীতে এশিয়া তার গরিমা ফিরে পেতে পারে। আর এসব দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের দ্বারাই আসবে অর্থনৈতিক সাফল্য, যা বৈশ্বিক রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করবে, নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং দক্ষিণ এশিয়ার একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের বাজেট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে সস্তা জনপ্রিয়তার বশবর্তী কিংবা আবেগতাড়িত না হয়ে সেখানে উদীয়মান অর্থনীতির অগ্রগতির উপায় ও উপলক্ষ বিবেচনায় নেয়া উচিত। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বাড়াতে দোষারোপের দ্বারা আকীর্ণ না হয়ে সমন্বয় ও সহাবস্থানের দৃষ্টিতে সুশাসন, সুনীতি এবং মান নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো কোনো দেশে পূর্ববর্তীদের অবদানকে অস্বীকার ও উপেক্ষা করে ব্যক্তি বা পরিবারের সাফল্য হিসেবে আত্মতুষ্টি ও স্তুতির প্রবণতা দেখা যায়, যা নেতিবাচক ধারণারই জন্ম দেয়। কেননা বিদ্যমান অগ্রগতি এমনি এমনি একদিনে গড়ে ওঠেনি। সবার অংশগ্রহণ ও ত্যাগ স্বীকারে অর্জিত উন্নতির সুফলের অংশীদার সবাই। তাই সবার জন্য সুযোগ নিশ্চিত করলেই তাকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সাফল্য হিসেবে দেখা হবে। দল বা ব্যক্তি হিসেবে তুষ্টি বা স্তুতির স্থলে সবার জন্য সব সুযোগ (খাদ্য নিরাপত্তা, গুণগত শিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ, উন্নত অবকাঠামো, মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান) নিশ্চিত করা হলে তা হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুসংহত ও টেকসইকরণের অন্যতম উপায়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অবগাহন এবং আরও উদারীকরণের পদক্ষেপের দ্বারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কর্মসূচিতে সাফল্যজনক সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে সংস্কারের পাশাপাশি বৈশ্বিক সম্পদ ও সুযোগ ব্যবহারে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে স্বচ্ছতা ও সুশাসনের একটি পরিমণ্ডল তৈরি হবে। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেশের সব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হলে জনগণের আর্থিক উন্নতি ও ক্ষমতায়নের সুষম সুযোগ সৃজিত হবে। বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কারের দ্বারা এবং আসন্ন পরিবর্তনগুলোর প্রেক্ষাপটে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির পথে সাফল্য ও বিপর্যয়ের কারণগুলো পরীক্ষা-পর্যালোচনা হলে আগাম সতর্কতা অবলম্বনের অবকাশ মিলবে। জাতীয় অর্থনীতিতে উৎপাদনে (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অবিসংবাদিত ভূমিকা রয়েছে।
প্রত্যাশিত সঞ্চয়ের এবং শিল্প উন্নয়নে বিনিয়োগের গুণগতমান বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কৃষি ও সামাজিক খাতে জনগণের মৌলিক অধিকার, চিন্তা ও পরিকল্পনা জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে সব উৎপাদনশীল খাতে দেশের সার্বিক সঞ্চয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য হ্রাস কৌশলপত্র প্রোগ্রাম বন্ধ তথা স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে সঞ্চয় অভ্যাসের বিকাশ ছাড়া সেখানে রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নে উপযুক্ত প্রণোদনা, প্রেরণা ও প্রকরণ চাই। পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ভর্তুকি ও অন্যান্য সুবিধা শিল্পোন্নয়ন উদ্যোগের একটি উপায় বলে বিবেচনা হতে পারে; কিন্তু উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সব সম্প্রদায়ের জন্য সুযোগ নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। শিক্ষা যেমন জাতির জন্য একটি প্রধান বিনিয়োগ। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড তবে শিক্ষা খাতে জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি বুমেরাং হতে পারে দেশ ও জাতির জন্য। সিংহভাগ বরাদ্দ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দেয়া হলেও উপযুক্ত দেখভালের অভাবে তা ব্যর্থ হতে পারে। ঔপনিবেশিক আমলে শিক্ষার জন্য অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ছিল, সেখানে ছিল বৈষম্যের অভিযোগ, কিন্তু কড়া নজরদারি ছিল। তখন ‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ’ ছিল ব্রত। এখন সরকারের ভর্তুকিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাও বাণিজ্যিক হয়ে পড়ায় গণশিক্ষা জনশিক্ষায় পরিণত হতে পারছে না। জবাবদিহিতার অভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সেবার আদর্শ এখন দুর্নীতিগ্রস্ত ও দায়-দায়িত্বহীন বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হচ্ছে। দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের যে কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বর্তমানের এই দুর্বল শিক্ষার দুষ্ট প্রবণতার বিরূপ প্রভাব যাতে বাধার কারণ না হতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

No comments

Powered by Blogger.