মিরপুর ও পুরান ঢাকায় পানিতে দুর্গন্ধ

রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বর সেকশন, কমলাপুর ও পুরান ঢাকায় ওয়াসার লাইনে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসছে। ওয়াসার পানি আর পয়োনালার সংযোগ একত্র হয়ে যাওয়ায় বাসাবাড়ির পানিতে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি আসছে। পুরান ঢাকার হাটখোলায়ও কিছু বাড়িতে পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুরে দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসছে ২ নম্বর সেকশনের কয়েকটি ব্লকে ঢাকা ওয়াসার সংযোগ দিয়ে। এই সেকশনের এ, বি, সি, ডি এবং চ ব্লকে সড়ক সংস্কার করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডি ব্লকের অ্যাভিনিউ-১-এর প্রবেশমুখে বিশাল গর্ত খোঁড়া। তাতে পানি নিষ্কাশনের একটি পাইপ নামানো হয়েছে। তাতে পাশে থাকা ওয়াসার পাইপ ফেটে যাওয়ায় ময়লা পানির সঙ্গে ওয়াসার পানি মিলেমিশে একাকার। ডি ব্লকের বাসিন্দা সারওয়ার হোসেন বলেন, সড়ক খোঁড়ার কয়েক দিন পরে পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধ আসতে শুরু করে। তবে সিটি করপোরেশনের লোকজন বলেছেন যে লাইন ঠিক হয়ে গেছে, আর দুর্গন্ধ আসবে না।
পুরান ঢাকার হাটখোলায় ৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, দিন পনেরো আগে এলাকায় ড্রেনেজ লাইন করার সময় পাইপ ফুটো হয়ে যায়। তারপর থেকে পানিতে গন্ধ আরও বেড়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন রোড, গোপীবাগ, পেয়াদাপাড়া এলাকায়ও একই অবস্থা। বালুর মাঠে ‘গোপীবাগ পানির পাম্প’ এলাকায় গেলে বাসাবাড়িতে অপরিষ্কার পানি আসার বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। সেখানে পানি নিতে আসা মানুষের মুখে শুধু পানির কষ্টের কথা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহে প্রচুর মানুষের ভিড়। সংগ্রহকারীদের মধ্যে ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষও ছিল। উপস্থিত অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, এই পাম্পে এখন বেশি ভিড় হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পানি সংগ্রহ আপাতত বন্ধ থাকা। সেখানে অনুষ্ঠান চলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাসাবাড়ির পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই চারদিকের অনেক বাসিন্দাই মিশনের কল থেকে দুবেলা পানি সংগ্রহ করেন। হাটখোলার পেয়াদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার বলেন, সকাল-বিকেল পানি সংগ্রহ করতে হয় তাঁর মতো এলাকার অনেক বাসিন্দাকে। সকালে হাঁটতে বের হওয়ার সময়ও হাতে খালি জার নিয়ে বের হন অনেকে। বাসায় কলে ময়লা আর ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত পানি আসে। মুখ ধুলে চোখ জ্বালা করে। অভয় দাস লেনের কলেজ ভিউ টাওয়ার থেকে পানি সংগ্রহে এসেছেন প্রহরী আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, প্রায় সারা বছরই ওয়াসার পানিতে গন্ধ।
ভবনের সব পরিবারের পানির সরবরাহ তিনি করেন। এতে অবশ্য তাঁর কিছু আয় হয়। তবে ঘাড়ে করে ২০ লিটারের জার নিয়ে যেতে কষ্ট হয় অনেক। দক্ষিণ কমলাপুর বাজারের কাছে বস্তির কয়েকজন বাসিন্দাও পানি সংগ্রহ করেন বালুর মাঠ থেকে। তবে নিজেদের জন্য যত না, তার চেয়ে বেশি হোটেল বা বিভিন্ন ভবনে সরবরাহ করতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপরীত দিকে ওয়াসার রাজস্ব কার্যালয়ের ভেতরের পাম্প থেকেও তাঁরা পানি নেন। তবে কার্যদিবসে দিনের বেলায় তা সম্ভব হয় না। বালুর মাঠে পানি নিতে এসেছেন মধ্যবয়সী একজন মহিলা। নাম জানতে চাইলে বললেন, আশরাফুলের মা। তিনি বলেন, এলাকায় পানি ভালো না। কমলাপুরে দুটি হোটেলে পানি দিয়ে আসেন। প্রতি জারে তাঁর থাকে ১০ টাকা। বাজারের কাছে একটি মেছে থাকেন কয়েকজন ছাত্র। তাঁরাও এখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন বলে জানান। ঢাকা ওয়াসার সদ্য বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী বর্তমানে পরামর্শক এ কে এম শহীদউদ্দিন বলেন, মিরপুরে তাঁর তত্ত্বাবধানেই নতুন পাইপলাইন হয়েছে। সেগুলো পুরোপুরি চালু হলে গন্ধের সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, পুরান ঢাকায়ও পুরোনো পাইপ অল্পতে ভেঙে যায়। ওয়াসার আঞ্চলিক প্রকৌশলীদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সেগুলোও বদলানোর জন্য শিগগির দরপত্র আহ্বান করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.