প্রাণভিক্ষা চাইবেন মুফতি হান্নানসহ দুজন

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলা ও তিনজন নিহত হওয়ার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিন জঙ্গিকে পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজের রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। মুফতি হান্নানসহ দুজন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কথা জানালেও দেলোয়ার জানিয়েছেন, পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন)। এদিকে ওই তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে দুপুর ১২টায় রায় পড়ে শোনানো হয়। গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, রিভিউ আবেদন খারিজের রায় শোনানো হলে মুফতি হান্নান ও শাহেদুল আলম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানান কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. মিজানুর রহমান। রায় কার্যকরের ব্যাপারে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই কেবল রায় কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান, দেলোয়ার হোসেন তাঁর আইনজীবী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া এ কথা জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরোনো কারাগারে সংবাদ সম্মেলনে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে কথা বলেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। কারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই। আমরা সব সময়ই প্রস্তুত। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমাদের কাছে নির্দেশনা এলে জেল কোড অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এইচআরডব্লিউর আহ্বান
মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, যেকোনো দেশে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে তারা। বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘অপরাধের বিচার হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছে। বরং বাংলাদেশের উচিত শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে মুলতবি করা। কেননা, এটা নির্মম এবং অপরিবর্তনযোগ্য।’ ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের ফটকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় পুলিশের দুজন কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭০ জন আহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ও দেলোয়ারকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন সিলেটের দ্রুত বিচার আদালত। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আসামিদের আপিল গত ৭ ডিসেম্বর খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এ বছরের ১৭ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। ১৯ মার্চ ওই আবেদন খারিজ হয়। গত মঙ্গলবার রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.