পানির অভাবে মারা যাবে ৬০ কোটি শিশু

২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। ইউনিসেফ থেকে প্রকাশিত নতুন একটি রিপোর্টে এই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, সমৃদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরার ক্রমবর্ধমান অবস্থা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার তাতে পানির চাহিদা অনেক বাড়বে। প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি এবং পর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার অভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় পাঁচ বছরের কম ৮০০ শিশু। একই সমস্যায় পাঁচ বছরের কম ১৫ কোটি ৬০ লাখ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক অ্যান্থনি লেক ওই রিপোর্টে লিখেছেন, ‘পানি এমন একটি বস্তু, যা ছাড়া কোনো কিছুর বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
আর নিরাপদ পানি ছাড়া শিশুদের জীবন বাঁচানো অসম্ভব। তিনি আরো লিখেছেন, ‘নিরাপদ পানির অপর্যাপ্ততার কারণে শিশুর মৃত্যুর হার বাড়ছে, এবং শৈশবে তারা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, যা কচি শরীর সহ্য করতে না পেরে তারা মৃত্যুর শিকার হয়। রিপোর্টে বলা হয়, ‘রোগে ভুগে যদি কোনো শিশু বেঁচেও থাকে ভবিষ্যতে এটা তার ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং তার শরীর পুষ্টি গ্রহণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের কাছে পানি সরবরাহের পথ শুকিয়ে যায়, খরা, বন্যা এবং পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে, তখন আর নিরাপদ পানির কোনো উৎস থাকে না এবং এতে নানান রোগবালাইয়ের সৃষ্টি হয়।’ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ে খরার প্রকোপ খুব বেশি। অধ্যাপক লেক বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে পানির ভয়ানক ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে খরা কবলিত নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনজুড়ে।’ তিনি বলেন, ‘ওইসব অঞ্চলে জন্মের পর থেকে তীব্র অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে ১৪ লাখ শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।’ এককভাবে শুধু ইথিওপিয়াতেই ২০১৭ সালে ৯০ লাখ মানুষ সুপেয় পানির অভাবে অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে। রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়, ‘২০৫০ সাল নাগাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্রমবর্ধমান হার যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ৫০ শতাংশ মানুষ পানির অভাবে ভুগবে।’
ভারতের সাড়ে ৬ কোটি মানুষ
এ দিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছে ভারতের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ। গতকাল বুধবার বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে ওয়াটার এইডের এক নতুন রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভারতের গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা প্রায় ছয় কোটি ত্রিশ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে সরকারি পরিকল্পনার অভাব, প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাহিদা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিকাজে পানির ব্যবহারকে দায়ী করা হয়েছে। ভারতের গ্রামাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ। সেখানে কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো রোগ এবং পুষ্টির অভাব খুব সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিনির্ভর। খাবারের জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। গ্রীষ্মের দিনে প্রচণ্ড খরার মধ্যেও তারা মাঠে কাজ করেন। গ্রামগুলোয় পানি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকে বাড়ির মেয়েরা।
শুষ্ক মওসুমে দূর-দূরান্ত থেকে তাদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। এ বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে সতর্ক করা হয়েছে। ভারত বিশ্ব-অর্থনীতিতে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করাটা দেশটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতের গ্রাউন্ড ওয়াটার রিসোর্সেস অ্যাসেসমেন্টের তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ ভূগর্ভের পানির উৎস অতিরিক্ত ব্যবহার হয়েছে। ভারতের গ্রামাঞ্চলে ৬৭ শতাংশ নাগরিকের বসবাস। যার ৭ শতাংশই বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি দেশের মধ্যেও ভারতের অবস্থান ওপরের সারিতে। এবারের বিশ্ব পানি দিবসে সরকারের প্রতি ওয়াটার এইডের দাবি, টেকসই উন্নয়ন ও সর্বত্র বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট

No comments

Powered by Blogger.