বনে দেখা হাপরমালী

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাতে আহমদের আমন্ত্রণে হবিগঞ্জের সাতছড়ি অরণ্যে গিয়েছিলাম এই বসন্তে। বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীও ছিল। তাঁদের বনের জীববৈচিত্র্য বিষয়ে এবং প্রাকৃতিক বনের গুরুত্ব ও গাছপালা নিয়ে মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার জন্যই এ আয়োজন। বনের একটি ট্রেইল ধরে গভীরে এগোচ্ছি। বসন্তের বাতাস আর গাছের ছায়ায় বনের ভেতরে ঠান্ডা আমেজ। চারদিকে শুধু প্রজাপতির ওড়াওড়ি। মাঝে মাঝে পাখিদের ডাক শোনা যায়। বনতলে হাঁটার সময় সাদা রঙের এক ফুলের দেখা পেলাম। ঝরে পড়ে আছে বনতলে। হাতে নিয়ে বুঝেছি, এটি হাপরমালী। আমাদের দেশের এক বিরল ও সুগন্ধি বনফুল। হাপরমালী এর আগে কখনো বনে দেখেনি। কারণ বনবিন্যাসের ফলে এই চিরসবুজ উদ্ভিদটি কমে গেছে। এর আগে দেখেছি ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে। বনে হাপরমালী দেখে আমি আনন্দিত। তবে বনের গভীরে এই লতার ঝোপটির দেখা পাওয়া গেল না। ঘণ্টা দুয়েক হাঁটার পর বিকেলে সাতছড়ি বনের ওয়াচ টাওয়ারের কাছে অবশেষে দেখতে পেলাম অন্য একটি হাপরমালীর ঝোপ। চারদিকে তাকিয়ে দেখি একটি বুনো গাছ আকড়ে বেড়ে উঠেছে এই লতা। ফুলে ফুলে মৌমাছি, প্রজাপতি ও ভোমরার গুঞ্জন।
হাপরমালী বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের আদিবাসী। কাষ্ঠল বুনো লতা। কাণ্ড ধূসর, পাতা উজ্জ্বল ও আগা চোখা। কাণ্ডে সাদা রঙের কষ থাকে। পাতার বিন্যাস বিপরীত এবং প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা হয়। লতাশ্রয়ী গাছ বেয়ে অনেক ওপরে ওঠে। শাখা-প্রশাখা ঝোপ আকারে বেড়ে ওঠে। বসন্তে পাতার মধ্য দিয়ে তিন থেকে ছয়টি ফুলের ছোট থোকা বের হয়। ফুলের রং ক্রিম সাদা। ফুলে পাঁচটি গোল পাপড়ি থাকে। বৃতি পাঁচটি। বনে বীজের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে, তবে কলমে চারা হয়। ফুল তীব্র সুগন্ধি। হাপরমালী পশ্চিমবঙ্গে রামসর নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Vallaris solanacea। আগের বৈজ্ঞানিক নামের (Vallaris heynei) প্রজাতির নাম বদলে গেছে। জার্মান উদ্ভিদবিদ ফেডরিক এডলফ হেনিয়ির সম্মানে রাখা হয়েছিল সেই নামের প্রজাতি অংশ। শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে বেশ জনপ্রিয়। ঢাকার শিশু একাডেমির বাগান, নাটোরের উত্তরা গণভবনে এই লতা আছে বলে জানিয়েছেন নিসর্গী মোকারম হোসেন।

No comments

Powered by Blogger.