যোগীর রাজ্যে অশান্তি

বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ শুরু করে দিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রাজ্যে কসাইখানা বন্ধের হুকুম জারি করে গতকাল বুধবার তিনি বলেছেন, গরু পাচার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। এই ফরমান জারির ঠিক আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজ্যের হাথরস জেলায় তিনটি মাংসের দোকান দুষ্কৃতকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। কসাইখানা বন্ধ ও গরু পাচার রোধে নির্দেশ জারি ছাড়াও যোগী সরকার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উত্ত্যক্তকারী দমনে রাজ্য পুলিশে ‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’ গঠন করতে বলেছেন। পুলিশের এই বিশেষ দল স্কুল-কলেজসহ সর্বত্র যারা মেয়েদের বিরক্ত ও হেনস্তা করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে রাজধানী লক্ষ্ণৌয়ে তিন যুবককে পাকড়াও করেছে এই স্কোয়াড। অভিযোগ, তারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছিল। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ গতকাল এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো সরকারি কর্মী অফিসে পান ও পান-মসলাজাতীয় কিছু খেতে পারবেন না। সরকারি অফিসের দেয়ালে পানের পিক দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশ জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ সফল করতে সহায়ক হবে। এদিকে মাংসের দোকানে আগুন দেওয়া ও কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা রাজ্যে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করছে। বৈধ মাংস ব্যবসায়ীরা এই নির্দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা বলছেন, কসাইখানা বন্ধ করা হলে কর্মসংস্থানও কমে যাবে। কমবে রাজ্যের রাজস্ব আয়। সামাজিক অশান্তি দেখা দেবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধভাবে ও বিনা লাইসেন্সে যাঁরা ব্যবসা চালাচ্ছেন, কেবল তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশ এই দাবি করলেও বিরোধীরা মনে করছেন, স্বঘোষিত গোরক্ষকেরা অতি উৎসাহে সব মাংসের দোকান বন্ধে নেমে পড়েছেন।
এলাহাবাদে যে কয়টি কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বেআইনিভাবে চলছিল বলে পুলিশের দাবি। উত্তর প্রদেশে গরুর মাংস নিষিদ্ধ। বৈধভাবে জবাই হয় শুধু মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। রপ্তানির মাংসও মহিষের। কয়েক লাখ মানুষ এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত। নির্বাচনী প্রচারের সময় বিজেপির নেতারা নারী-নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। রাজ্য পুলিশে অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ সেই কারণেই। রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক জাভেদ আহমেদ গতকাল বলেছেন, নতুন এই স্কোয়াডের মূল লক্ষ্য নারীদের নিরাপত্তা বাড়ানো। তিনি বলেন, প্রতিটি থানায় এই স্কোয়াড গড়া হবে। ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজের কাছে এই স্কোয়াড টহল শুরু করেছে। তবে নতুন এই স্কোয়াড অন্য এক আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। আদিত্যনাথ ইসলামপন্থীদের যে কথিত ‘লাভ জেহাদের’ (মুসলিম ছেলেদের হিন্দু মেয়ে বিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই) কথা বলেছিলেন, এই স্কোয়াডের আওতায় তাকেও টেনে আনা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই আশঙ্কা সৃষ্টির কারণ বিজেপিই। দলের প্রথম সারির নেতা সুনীল ভারালা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে এই বাহিনী লাভ জেহাদ ঠেকাতেও কাজে নামবে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানোর কথা আদিত্যনাথ দায়িত্ব গ্রহণের পর একাধিকবার বলেছেন। সে জন্য পুলিশকে ঢেলে সাজানো হবে। বিভিন্ন সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার সদস্যদের দপ্তর বণ্টনের পর পুলিশ ও আমলা মহলে ব্যাপক রদবদল ঘটানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.